ইস্তফা দিচ্ছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি যোগ দিচ্ছেন রাজনীতিতে। কোন দলে যোগ দিচ্ছেন তা জানাননি।
বিজ্ঞাপন
হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্ভবত সোমবারই শেষ দিন। মঙ্গলবার তিনি বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। বিচারপতি হিসাবে আরো পাঁচ মাস কাজ করতে পারতেন তিনি। তার আগেই তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবিপি আনন্দে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ''রাজনীতিতে না গেলে প্রচুর সাধারণ মানুষ আছেন যাদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।''
বিচারপতি গঙ্গেোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ''ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, আসুন লড়াই করুন। শাসক দলকে ধন্যবাদ জানাব, আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার জন্য। আমি আসছি।''
তার বক্তব্য, ''ইতিহাসে মৌর্য সাম্রাজ্যের কথা পড়েছি। এখন চোখের সামনে চৌর্য সাম্রাজ্য দেখছি।''
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ''আমি খুব তাড়াতাড়ি বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছি। মঙ্গলবার ইস্তফা দেব। মঙ্গলবার দেড়টায় আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব।''
কী বললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
তিনি জানিয়েছেন, ''আদালতে যে সময়টা কাজ করি, তা এখন শেষ হয়েছে বলে অন্তরাত্মা বলছে। আদালতের বাইরে প্রচুর সাধারণ মানুষ আছেন। তাদের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। ছয় বছর ধরে বিচারপতি হিসাবে কাজ করলাম। সেখানে নতুন করে কিছু করার নেই। বাকি সময়টা আমি অন্য কাজে কাটাব।''
বিক্ষোভের এক হাজার দিনে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ চাকরিপ্রার্থীদের
তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। চাকরি পাননি। এক হাজার দিন ধরে তারা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ
তার নাম রাসমণি। নবম থেকে দ্বাদশ স্রেণির শিক্ষক হওয়ার জন্য মেধাতালিকায় তার নাম আছে। কিন্তু চাকরি পাননি। গত এক হাজার দিন ধরে তার দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাভ হয়নি। অঢেল প্রতিস্রুতি পেয়েছেন, চাকরি নয়। তাই শনিবার কলকাতায় প্রতিবাদমঞ্চে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন রাসমণি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জামা খুলে প্রতিবাদ
রামমণি মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন। আর পুরুষ চাকরিপ্রার্থীরা জামা খুলে খালি গায়ে প্রতিবাদ জানান। যদি তাদের এই প্রতিবাদ সরকার ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যদি তারা তাদের ন্যায্য চাকরি পান, সেজন্য এইভাবে প্রতিবাদ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী বলছেন রাসমণি?
রাসমণির আবেদন, ‘‘রাজনীতির ঊর্পরে উঠে আপনারা সবাই আমাদের সমস্যার সমাধান করুন...। কেউ শুনতে পাচ্ছেন? আমাদের চাকরি দিন।’’ রাসমণি বলেচেন, ''আমরা চাকরির পরীক্ষায় পাস করেছি। কিন্তু তারপরেও রাস্তায় বসে আছি। আমাদের কী দোষ? আমরা কেন ন্য়য্য চাকরি পাব না?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
'মুখ্যমন্ত্রী পারেন জট কাটাতে''
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ''যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অযোগ্যরা চাকরি করছেন। এই জট কাটানোর ক্ষমতা কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রয়েছে।'' মুখ্যমন্ত্রী আগে এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও কিছু হয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বঞ্চনার অভিযোগ
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ''২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে।'' তারা বলছেন, অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি করছেন, আর তারা এক হাজার দিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের কথা কেউ শুনছেন না। এটা কী ধরনের বিচার?
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিশ্রুতি ও অনশন চলছে
এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন করেছিলেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তাঁরা চাকরি পাননি— এই অভিযোগে আবার অনশনে বসেন কয়েকশো যুবক-যুবতী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আশায় বাঁচা
২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না দেন। তার পর গত ১০০০ দিবারাত্রি কেটেছে রাস্তায়। কিন্তু চাকরি হয়নি। চাকরি তাদের কাছে এখন মায়ার মতো। তবু আশায় বুক বেঁধে তারা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কান্নায় ভেঙে পড়ে
কান্নায় ভেঙে পড়া অবস্থায় অনেক চাকরিপ্রার্থীরই আবেদন ছিল, অবিলম্বে তাদের নিয়োগ করা হোক। তাদের কথা শুনুক রাজ্য সরকার। দিনের পর দিন এভাবে প্রতিবাদ জানানোর একটা ভয়ংকর চাপও আছে। তা সত্ত্বেও তারা প্রতিবাদ চালিয়ে গেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সমর্থন বামেদের
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ এক হাজার দিনে পড়ায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন বামেরা। বিমান বসু-সহ বাম নেতারা মিছিল করে এসে এই আন্দোলনকে আবার সমর্থন জানান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিবাদমঞ্চে তৃণমূল নেতা
বিকেলে ওই মঞ্চে উপস্থিত হন কুণাল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হুলস্থুল পরিস্থিতি। চাকরিপ্রার্থী, বিরোধী নেতৃত্ব এবং পুলিশের ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে যান তৃণমূল নেতা কুণাল। বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। তারদিকে একপাটি চটিও উড়ে আসে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
স্লোগানের মধ্যে
ধর্ণামঞ্চে মাথা মুড়োনোর খবর পেয়ে ওই নারীকে দেখতে শাসকদলের তরফে কুণাল ঘোষ ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হতেই উঠল ‘চোর-চোর’ স্লোগান। কুণাল তারই মাঝে রাসমণিকে বুকে টেনে নেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আলোচনার প্রস্তাব
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্রের দিকে এক পাটি জুতোও উড়ে এল। যদিও তার পরেও কুণাল দেখা করলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা থেকেই সমাধানের পথ আসে। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে।’’
ছবি: Subrata Goswami/DW
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়েছে, এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তাঁর দফতরের আধিকারিকেরা। সেই বৈঠকে কুণালও থাকবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিতর্ক চলছে
শাসকদলের তরফে কুণালের উপস্থিতি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর খুশি চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। অন্য দিকে, কুণালের উপস্থিতি প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবি কৌস্তুভ বাগচী কটাক্ষ করেন, “চাকর বাকর নয়, চাকরিপ্রার্থীরা মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চায়”। কয়েকমাস আগে কৌস্তুভ নিজের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মাথা মুড়িয়েছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
'আর প্রতিশ্রুতি নয়'
কিন্তু সেই বৈঠকের আগে শনিবার বাড়ি ফেরার সময়ে মাথার চুল কামিয়ে ফেলা চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্র বললেন, ‘‘সোমবার আমরা কোনও প্রতিশ্রুতি শুনে ফিরতে চাই না। ওই দিনই আমাদের নিয়োগ দিতে হবে।’’ ওপরের ছবিটি রাসমণির মাথা মুড়ানোর আগের ছবি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
15 ছবি1 | 15
তিনি বলেছেন, ''বৃহত্তর ক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে. আমি তার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে অভিনন্দন জানাব। যখনই আমি ন্যায়বিচার করতে গেছি, তাদের বিভিন্ন মুখপাত্র আদালত ও বিচারপতিকে নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করেছেন, রঙ্গব্যঙ্গ করেছেন, বলা হয়েছে, মাঠে আসুন, এসে লড়াই করুন। ভেবে দেখলাম, তারা যখন এত করে ডেকেছেন, এত অপমানজনক কথা বলেছেন, তখন তাদের ইচ্ছে পূর্ণ হওয়া দরকার।''
তিনি জানিয়েছেন, ''রাজনৈতিক দলে না গেলে আদালতের ক্ষেত্রের বাইরের মানুষদের কাছে পৌছানো যাচ্ছে না। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারি। টিকিট দেয়া না দেয়া সেই রাজনৈতিক দলের ব্যাপার। অনেক রাজনৈতিক দল আছে। বাম, কংগ্রেস, বিজেপি, ছোট দল, তারা যদি মনে করে টিকিট দেবেন, তখন ভেবে দেখব প্রার্থিপদ নেব কিনা। এখনো বহু দপ্তরে দুর্নীতি উদ্ঘাটন হয়নি। সেই দুর্নীতি সামনে এলে বোঝা যাবে, কোন রাজ্যে বাস করছি।''
তিনি জানিয়েছেন, ''আমি তৃণমূলে য়োগ দিচ্ছি না। তার মতে, পশ্চিমবঙ্গে অন্ধকার নেমে আসছে। সব ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ নিচে চলে যাচ্ছে। তা বাঙালি হিসাবে, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়।''
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি বিজেপি-তে?
বিচারপতির পদ ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও , রাজনীতির আঙিনায় আসার কথা বললেও, কোন দলে যোগ দেবেন তা জানাননি।
তবে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ''সৎ মানুষদের এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে চান, তাদের বিজেপি-তে যোগ দেয়াই স্বাভাবিক।''
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই বলে রেখেছিলেন, ৭ মার্চ বড় ঘটনা ঘটবে। তিনি জানিয়েছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দেয়ার পরই তিনি প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
৮০০ দিন ধরে রাস্তায় আন্দোলনকারীরা
কলকাতার রাস্তায় চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন এসএলএসটি পরীক্ষার্থীরা। ৮০০ দিন পার করল তাদের আন্দোলন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থী
আন্দোলনকারীরা ২০১৬ সালের চাকরি প্রার্থী। এই প্যানেলেই নাম ছিল মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। নিয়োগ দুর্নীতির কারণে বহু চাকরিপ্রার্থী ‘যোগ্য’ হয়েও চাকরি পাননি। বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে দাবি তুলে কলকাতার রাজপথে নেমেছেন নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৮০০ দিনের লড়াই
এই ৮০০ দিন নিজেদের দাবির সমর্থনে নানাভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কখনও প্রেস ক্লাব, কখনও বা গান্ধী মূর্তি পাদদেশে আন্দোলকারীর অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন। মাঝে তারা বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সঙ্গে শিশুসন্তান
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ নিজেদের শিশুসন্তানকে নিয়েও এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
লড়াই চলছে, চলবে
মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। তার পর তারা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ফের অবস্থান বিক্ষোভে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাতের ব্যানারে রুটি
হাতে ধরা ব্যানারে আটকানো ছিল রুটি। তাই দিয়ে লেখা আন্দোলনের ৮০০ দিন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অন্য চাই, চাকরি চাই
থালায় লেখা অন্ন চাই, চাকরি চাই। ছেলেরা পরেছিলেন স্যান্ডো গেঞ্জি ও মেয়েরা কালো সালোয়ার বা শাড়ি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মুখে কালি
এদিনের আন্দোলনের অভিনবত্ব ছিল, প্রত্যেকে মুখে কালি মেখে বসেছিলেন। তাদের বক্তব্য, গোটা পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এমনই কালিমালিপ্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রক্তের বিনিময়ে
এক আন্দোলনকারী শহিদুল্লা বললেন, গায়ের রক্ত দিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আমাদের চাকরির প্রয়োজনটা অনুভব করানোর চেষ্টা করছি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সমস্যার সূত্র
এসএলএসটি-তে চাকরির জন্য ২০১৬ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে যে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টে মামলা
মামলা হয় হাইকোর্টে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয় রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার। সেই চাকরি পান ববিতা সরকার। পরে ববিতার চাকরিও বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
তবে বিজেপি সূত্র বলছে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তমলুক থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হতে পারেন। এই কেন্দ্র থেকে গতবার নির্বাচিত হয়েছেন শুভেন্দুর ভাই দিব্য়েন্দু। তমলুককে অধিকারী পরিবারের খাস কেন্দ্র বলে অভিহিত করা হয়। ফলে তমলুকে দাঁড়ালে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে জেতানোর দায়িত্ব শুভেন্দুই নেবেন।
তাছাড়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে একের পর এক আলোড়ন ফেলে দেয়া রায় দিয়েছিলেন, তাদের একটা পড় অংশই পূর্ব মেদিনীপুরের। ফলে এখানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের একটা প্রভাব থাকবে। বিজেপি-তে যোগ দিলে তারা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে একটা নিরাপদ আসন থেকে জিতিয়ে আনতে চাইবেন।
তবে তিনি এই লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াবেন, কোনো দলের হয়ে দাঁড়াবেন, নাকি নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়াবেন, তা তিনি মঙ্গলবার বা তারপর স্পষ্ট করবেন।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই অন্য বিচারপতিদের কাছ থেকে সাহায্য পাবেন।
সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের অশোক গঙ্গোপাধ্য়ায় এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দিতে পারেন। উনি সংবিধান অনুযায়ী ইস্তফা দিচ্ছেন। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।''
তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তিনি যে একটি রাজনৈতিক বোড়ে এটা বহুদিন আগে বলেছি। এখন তার যাবতীয় পর্যবেক্ষণ ভোঁতা হয়ে গেল।''
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লড়াই অনেককে খুশি করেছিল।''
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী দাবি করেছেন, ''উনি ব্যতিক্রমী চরিত্র। কিছুদিন ধরে বাংলার মানুষের আলোচনায় ছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যোদ্ধা। তিনি কংগ্রেসে এলে তাকে স্বাগত জানাব। অভিজিৎ গঙ্গেোপাধ্যায় লড়াকু, প্রতিবাদী চরিত্র। তিনি বিজেপি-তে গেলে তাকে সমর্থন করতে পারব না।''
অধীর বলেছেন,, ''কংগ্রেসে এলে তাকে যথাযথ সম্মান দেব।''
তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী
সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মধ্যে পড়বে?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''অকাল অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এখন তিনি সাম্প্রতিককালে যে সব রায় দিয়েছেন, যে সব পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা প্রশ্নের মুখে পড়তেই পারে।''
শুভাশিস বলেছেন, ''বিচারপতি হিসাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। কথাগুলো অনেক সময় অ্যাক্টিভিস্টের মতো লেগেছে।''
বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''ভারতে ১৯৬৭ সালে সুব্বা রাও বিচারপতির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নেমেছিলেন। কৃষ্ণ আইয়ার রাজনীতি থেকে বিচারপতি হয়েছিলেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা বিরলতম ঘটনা।''
বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, ''বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছেন, তা ডিভিশন বেঞ্চে এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে গেছে। তারপর তা রূপায়িত হয়েছে। তার অধিকাংশ রায় সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয়েছে। এখন মানুষ শুধুমাত্র বিচারপতি বিচারের চেয়ারে দেখতে চান, তারা আহত হবেন। যারা তাকে সংস্কারের অঙ্গ হিসাবে দেখতে চান, তারা খুশি হবেন।''