তুর্কি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য আততায়ীর নতুন ও আরো স্পষ্ট কিছু ছবি প্রকাশ করেছে৷ তুর্কি টেলিভিশনে সম্ভাব্য হত্যাকারীর এক ‘সেল্ফি ভিডিও' দেখানো হচ্ছে৷ কিন্তু আততায়ী এখনও অজ্ঞাত ও মুক্ত৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের পুলিশ সোমবার রাত্রে ইস্তানবুলে একটি অভিযান চালায়৷ অভিযানে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয় ও অভিযান চলাকালীন আশপাশের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ কিন্তু কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি৷
হাবের তুর্ক দৈনিক জানিয়েছে যে, আততায়ী চীনের উইঘুর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে৷ সে নাকি কিছুদিন আগে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তুরস্কের কোনিয়া শহরে পৌঁছায়৷ পরিবারের সদস্যদের আটক করা হয়েছে৷
তুরস্ক আইএস-এর বিরুদ্ধে আগের মতোই সক্রিয়
তুরস্কের সামরিক বাহিনী উত্তর সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে৷ মঙ্গলবার তুর্কি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সোমবার বিভিন্ন সংঘর্ষে ও কামানের গোলাবর্ষণে ১৮ জন আইএস যোদ্ধা নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছে৷
গত ২৪ ঘণ্টার কার্যকলাপের বিবরণ দিতে গিয়ে সামরিক বাহিনী জানায়, তুর্কি জঙ্গিজেটের আক্রমণে আইএস-এর চারটি ‘টার্গেট' ধ্বংস হয়েছে৷ এছাড়া রুশ জঙ্গিজেট ডাইর কাক-এ আইএস যোদ্ধাদের উপর বোমা ফেলেছে - স্থানটি আইএস-নিয়ন্ত্রিত আল-বাব শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে৷
আইএস-এর নীতি পরিবর্তন?
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
6 ছবি1 | 6
বিশ্লেষকরা ইস্তানবুলের নাইট ক্লাবে আক্রমণ ও আইএস-এর দাবির মধ্যে আইএস-এর নীতি ও অবস্থানের একটা পরিবর্তন দেখছেন৷ ডিসেম্বরের ২২ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রোপাগান্ডা ভিডিওতে তুরস্কের উপর আক্রমণের আহ্বান জানায় আইএস৷ এমনকি সেই ভিডিওতে তুর্কি সৈন্যদের জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার ফুটেজও ছিল৷ তুর্কি কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ভিডিওটির প্রচার রোখার চেষ্টা করলেও, ভিডিওটির প্রামাণ্যতা কোনোকালেই স্বীকার করেনি৷
তাদের তুরস্কে বিভিন্ন ‘সেল' আছে বলে আইএস দাবি করে থাকে; আইএস নিয়মিত তুর্কি ভাষায় প্রচারণা চালায়; এছাড়া আইএস-এর শত শত তুর্কি সদস্য আছে, বলে মনে করা হয়ে থাকে৷ কিন্তু ২০১৬ সালের মার্চে এক সিরীয় সাংবাদিক হত্যা ও দিয়ারবাকির প্রদেশে রায়ট পুলিশের উপর আক্রমণ ছাড়া আইএস তুরস্কে বিশেষ কোনো আগ্রাসন বা আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি৷
কাজেই রাইনা নাইট ক্লাবে হামলার দায় স্বীকার করাটা আইএস-এর পক্ষে নীতি পরিবর্তনের সামিল৷ আইএস যে এখন আল-বাব, রাকা, মোসুল, সর্বত্র কোণঠাসা, এটা তারই প্রমাণ, বলছেন বিশ্লেষকরা৷ অন্যত্র আঘাত হেনে বা আঘাত হানার দাবি করে নিজেকে পুনরায় জাহির করার চেষ্টা করছে ইসলামিক স্টেট৷