ইস্তানবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী আক্রমণে আহত আরো এক মহিলা প্রাণ হারিয়েছেন, বলে তুরস্কের সরকারি আনোদোলু সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ৷ সন্ত্রাসের পিছনে আগের মতোই তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান ইস্তানবুল সন্ত্রাসকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ‘টার্নিং পয়েন্ট' বলে অভিহিত করেছেন৷ একটি জনপ্রিয় জার্মান দৈনিক সংহতি প্রকাশের জন্য আবার তুর্কি ভাষার সহায়তা নিয়েছে৷
মঙ্গলবার রাত্রে তিনজন আত্মঘাতী বোমারু ট্যাক্সিতে চড়ে আতাতুর্ক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক অংশের বাইরে পৌঁছায়৷ তাদের মধ্যে দু'জন বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে সুইসাইড বেল্ট ফাটায়৷ এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে আক্রমণকারীরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বেড়া পার হতে সমর্থ হয়৷ একজন তার বোমাটি ফাটায় ডিপার্চার হলে, দ্বিতীয়জন অ্যারাইভালে, তৃতীয়জন নিজেকে টার্মিনালের বাইরে উড়িয়ে দেয়৷ হতাহতের সংখ্যা আপাতত- নিহত ৪২, আহত ২৩৯৷
নিহতদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশি আছেন বলে প্রকাশ৷ এর মধ্যে পাঁচজন সৌদি, দু'জন ইরাকি, এছাড়া চীন, জর্ডান, তিউনিশিয়া, উজবেকিস্তান, ইরান ও ইউক্রেনের নাগরিক৷
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, টার্মিনালের ভিতরে একজন আততায়ী কিভাবে এক পুলিশ অফিসারের গুলিতে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও তার বোমাটি ফাটাচ্ছে – গুলি লাগার প্রায় ২০ সেকেন্ড পর৷ তুর্কি দোগান সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, তিনজন নিহত আততায়ীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশের ময়ানতদন্ত শেষ হয়েছে এবং তারা সম্ভবত বিদেশি নাগরিক৷ তবে সংবাদ সংস্থাটি এই খবরের কোনো সূত্র জানায়নি৷ আক্রমণের পর দু'দিন কেটে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো দল বা গোষ্ঠী এই আক্রমণের দায়িত্ব স্বীকার করেনি৷
বিশ্বের সংহতির কোনো অভাব নেই
প্যারিস, ব্রাসেলসের সঙ্গে ইস্তানবুলের সন্ত্রাসকেও একই পর্যায়ে ফেলা ও দেখা হচ্ছে৷ তবে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে তুরস্কের রাজনীতি যে তুরস্ককে বিশেষ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এমনকি মার্কিন সরকার নাকি সামরিক ও বেসামরিক সদস্যদের পরিবার তুরস্কে নিয়ে যাওয়া স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে চলেছে৷
ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে, আহতদের আর্তনাদ শুনে সেদিন অসহায় বোধ করেছেন অনেকে৷ মৃতদেহ ডিঙ্গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কেউ কেউ৷ পুলিশ তখনো এগিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মানুষদের তখন পুলিশের প্রতি হামলার শিকারদের সহায়তার এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/T. Berkin
শান্তির বাণীতে ঢাকা মৃতদেহ
শান্তি সমাবেশে এসে মৃত্যু বরণ করা মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহগুলো ঢাকার মতো কাফনের কাপড় তখন ছিল না৷ তাই ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েই ঢেকে দেয়া হয় তাঁদের দেহ৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
স্বজন এবং সমমনাদের কান্না
বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে শত শত মানুষ৷ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে চিরবিদায় নেয়া স্বজন এবং সমমনাদের জন্য তখন অবশ্য কেঁদে ভাসানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA
তদন্তের তৎপরতা
একটু দেরিতে হলেও শনিবারই ঘটনার তদন্তে সক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে৷ ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা সেদিনই ঘটনাস্থলে ব্যস্ত সময় কাটান৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ৷ বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশের এই গাড়িটিও জনবিক্ষোভের শিকার৷
ছবি: picture-alliance/AA
বিক্ষোভ চলছে
আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ হামলার জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী করেছে তুরস্কের সরকার৷ তবে হামলার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ আংকারা এবং ইস্তানবুলসহ কিছু শহরে বোমা হামলার বিক্ষোভ জানানোর সময় এর্দোয়ান-বিরোধী স্লোগানেও ফেটে পড়েছেন বিক্ষু্ব্ধরা৷
শনিবারের হামলাটি হয়েছে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে৷ নিহত এবং আহতরা মূলত কুর্দি এবং বামপন্থি দলের নেতা-কর্মী৷ তাই সারা বিশ্বের সব কুর্দির মাঝেই দানা বেঁধেছে ক্ষোভ৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুর্দি ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল৷