ইস্তানবুলের রাইনা নাইট ক্লাবে হামলা চালিয়েছে তাদের এক ‘সৈনিক'- টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছে তথাকথিক জঙ্গি সংগঠন আইএস ৷ আক্রমণকারী এখনও পলাতক৷
বিজ্ঞাপন
আইএস অতীতেও এই পন্থায় বিভিন্ন হামলার দায়িত্ব নিয়েছে৷
বিবৃতিতে তথাকথিত মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠীটি লিখেছে, ‘‘ইসলামিক স্টেট ক্রুশের রক্ষাকারী তুরস্কের বিরুদ্ধে যেসব পবিত্র অভিযান চালাচ্ছে, তার অনুবর্তন হিসেবে খেলাফতের এক বীর সৈনিক প্রখ্যাততম একটি নাইট ক্লাবে আঘাত হেনেছে৷''
নিউ ইয়ার্স ডে পালনের জন্য ইস্তানবুলের জনপ্রিয় নাইট ক্লাবটিতে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় ৭০০ অতিথি৷ মধ্যরাতের এক ঘণ্টার মধ্যেই এক বন্দুকধারী প্রহরারত এক পুলিশ ও নাইটক্লাবের রক্ষীকে গুলি করে ভিতরে ঢোকে ও এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যা করে৷ আহত হন প্রায় ৭০ জন৷
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
6 ছবি1 | 6
আততায়ী একজন ছিল বলেই কর্তৃপক্ষের ধারণা, যদিও সে একাধিকবার পোশাক বদল করে থাকতে পারে - অন্তত সে যে পোশাকে নাইট ক্লাবে ঢুকেছিল, সেই পোশাকে সে সেখান থেকে বের হয়নি৷ পুলিশ সিকিউরিটি ফুটেজ থেকে আততায়ীর একটি অস্পষ্ট সাদা-কালো ছবি প্রকাশ করেছে৷ তুরস্কের সংবাদপত্র ‘হুরিয়েৎ' ও ‘কারার' সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সূত্রে খবর দিয়েছে যে, আততায়ী উজবেকিস্তান বা কিরগিজস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার কোনো দেশ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ দৃশ্যত বিদেশি, তাদের মধ্যে অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত৷ সৌদি আরব, মরক্কো, লেবানন, লিবিয়া, ইসরায়েল ও ভারতের নাগরিক ছাড়া তুরস্ক ও বেলজিয়ামের এক যৌথ নাগরিক ও এক ফরাসি-টিউনিশীয় মহিলাও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন৷ সৌদি আরবের আল-রিয়াদ পত্রিকা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সৌদি আরব থেকে এসেছিলেন৷
ভারতীয় মিডিয়া জানাচ্ছে, ভারতের যে দু'জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন রাজ্যসভার এক সাবেক সদস্যের পুত্র আবিস রিজভি ও গুজরাত থেকে আগত খুশি শাহ৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিহতদের পরিবারের ভিসার ব্যবস্থা করার খবর দিয়েছেন ও তুরস্কে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ইস্তানবুল যাবার নির্দেশ দিয়েছেন৷
ওসি/এসিবি (রয়টার্স, এপি, ডিপিএ)
২০১৬ সালে পর্যটনের ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ দেশ
ব্রাসেলস, প্যারিস, ইস্তানবুল এবং সর্বশেষ বার্লিনে হামলার প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে৷ অনেক পর্যটক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের গন্তব্য পরিবর্তন করেছেন৷ যে কারণে কিছু দেশে পর্যটক নাটকীয়ভাবে বেড়েছে৷
ছবি: DW/D. Dimitrakopoulos
আইসল্যান্ড – বছরের রাইজিং স্টার
পর্যটন খাতে গতবছর আইসল্যান্ডের বৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশ৷ এর আগে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে পর্যটকের সংখ্যা এত দ্রুতগতিতে বাড়েনি৷ ইউরোপের ট্রাভেল কমিশন জানিয়েছে, ১৭ লাখের মতো পর্যটক গিয়েছেন আইসল্যান্ডে, যাঁদের মধ্যে মার্কিন এবং এশীয় পর্যটকও ছিল৷
ছবি: cc-by-sa//ToNG!?
স্লোভাকিয়া – এক নতুন গন্তব্য
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ সেদেশে পর্যটকদের হার আগের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে৷ স্লোভাকিয়ার বালুময় সমুদ্রতট বা ভূমধ্যসাগরীয় ক্লাইমেট নেই৷ তবে সেদেশের ভ্রমণ বেশ সস্তা আর সেখানকার কার্পেথিয়ান পর্বতমালা এবং রাজধানী ব্রাতিস্লাভার পুরনো শহর পর্যটকদের বেশ টানে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Thomas
সাইপ্রাস – রুশদের প্রিয় দেশ
ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সাইপ্রাসে পর্যটকের হার একলাফে বেড়েছে ১৯ শতাংশ৷ ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে স্লোভাকিয়ার পাশেই রয়েছে দেশটি৷ গত গ্রীষ্মে অনেক রুশ পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেছে৷ তুরস্কে জঙ্গি হামলা এবং আঙ্কারার সঙ্গে মস্কোর সাময়িক বিবাদের কারণে সেদেশ বেছে নেয় রাশিয়ার পর্যটকরা৷
ছবি: picture alliance/Stuart Black/Robert Harding
বুলগেরিয়া – বলকান সি’র এক জনপ্রিয় গন্তব্য
জার্মান এবং রাশিয়ার পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা বুলগেরিয়ার কৃষ্ণ সাগর উপকূলে ছুটি কাটাতে গেছেন, তাঁদের মতামত হচ্ছে এটা ইবিজার চেয়ে সস্তা এবং তুরস্কের চেয়ে নিরাপদ৷ পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে পর্যটন বৃদ্ধির হার ১৩ শতাংশ৷ তালিকার তৃতীয় অবস্থান নেয়ার জন্য এটা যথেষ্ট৷
ছবি: cc by vacacionesbulgaria.com- sa 3.0
স্পেন – এ বছরের বিজয়ী
গতবছর স্পেনের পর্যটন খাতের বৃদ্ধির হার ছিল দশ শতাংশ৷ আইসল্যান্ড এবং সাইপ্রাসের তুলনায় এই হার কম হলেও সংখ্যার বিবেচনায় অনেক৷ গতবছর ৭৪ মিলিয়ন পর্যটক গেছেন সেদেশে যা এক নতুন রেকর্ড৷ স্পেনের সূর্য, সমুদ্র, বালু সবই আছে, তবে এই বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ নিরাপত্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
ব্রিটেন – আগের চেয়ে সস্তা
ব্রেক্সিট ভোটের পর পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ব্রিটেনে, কেননা পাউন্ডের দাম আগের চেয়ে কমে গেছে৷ গত ছয়মাসে সেদেশের পর্যটন খাত বেড়েছে আট শতাংশ৷
ছবি: picture alliance / D. Kalker
গ্রিস – মিশ্র বার্তা
ভূমধ্যসাগরীয় দেশটির জন্য বছরটা কঠিন ছিল৷ পর্যটন খাতের বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশ৷ দেশটির কিছু দ্বীপ জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারলেও লেসবসে পর্যটক কমেছে ৬৩ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
তুরস্ক – সবচেয়ে হারিয়েছে যে দেশ
সন্ত্রাসী হামলা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গতবছর তুরস্কে বিদেশি পর্যটক কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ৷ শুধুমাত্র আগস্টে আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ কম রুশ এবং ৩৪ শতাংশ কম জার্মান সেদেশে গেছেন৷ তবে সৌদি আরব থেকে পর্যটক আগমনের হার বেড়েছে সেদেশে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
বেলজিয়াম – নেতিবাচক ভারসাম্য
ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর পর্যটকের হার ১৩ শতাংশ কমেছে সেদেশে৷ পর্যটকদের কাছে সেদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শহর ব্রুজেও পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে৷ তবে একটি সুসংবাদ হচ্ছে, বেলজিয়ামের বিয়ার ইউনেস্কোর ইন্টেনজিবল কালাচারাল লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে৷