জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বড়দিন নিয়ে কোনো আলোচনা না করতে শিক্ষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ জার্মানি এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ইস্তান্বুল লিজেজি স্কুল কর্তৃপক্ষের অবাক করা এই সিদ্ধান্ত আমাদের বোধগম্য নয়৷ বড়দিনের আগের দিনগুলোতে পাঠদান ও আলোচনার মাধ্যমে যে আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময় হতো সেটি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক৷''
জার্মান নাগরিকদের করের অর্থে পরিচালিত স্কুলটির বয়স ১০০ বছরেরও বেশি৷ প্রায় ৩৫ জন জার্মান শিক্ষক কাজ করেন সেখানে৷ প্রত্যেক ডিসেম্বরে সেখানে ছোট্ট করে বড়দিন পালন করা হত আর শিক্ষার্থীদের ক্রিসমাসের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানানো হতো৷
স্কুলের জার্মান বিভাগের প্রধান সব শিক্ষককে ইমেলের মাধ্যমে বড়দিন নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তে কথা জানান৷ ই-মেলে বলা হয়েছে, ‘‘স্কুলের তুর্কি ব্যবস্থাপনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্রিসমাসের ঐতিহ্য ও উদযাপন নিয়ে আলোচনা করা যাবে না৷ বড়দিনের গানও গাওয়া যাবে না৷ এখন থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে৷''
বার্তা সংস্থা ডিপিএ এই ই-মেল দেখেছে বলে জানিয়েছে৷
অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বড়দিনের উৎসব বাতিল করেনি৷ তবে জার্মান শিক্ষকরা ইদানীং ‘‘যেভাবে বড়দিন ও খ্রিষ্ট ধর্ম নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করত'' সেটি পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়, বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷
এদিকে, স্কুলের কয়েকজন জার্মান শিক্ষক জার্মানির ম্যাগাজিন ‘স্পিগেল'-কে জানিয়েছেন, তাঁদেরকে বড়দিনের গান না গাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ এমনকি স্কুল থেকে অ্যাডভেন্ট ক্যালেন্ডারও সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা স্পিগেলকে এ সব কথা বলেন৷
‘গ্রহণযোগ্য নয়'
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউর ধর্ম বিষয়ক বিষয়াদির দায়িত্বে নিযুক্ত সাংসদ ইওসেফ ইয়ুং স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানি যদি শিক্ষকদের অর্থায়ন করে থাকে তাহলে তাঁরা কী পড়াবেন সেটা বলারও অধিকার জার্মানির আছে৷''
এদিকে বামদলের সাংসদ জেফিম ডাগডেলেন স্কুলের এই সিদ্ধান্ত তুরস্কে ‘ইসলামি স্বৈরতন্ত্র'-এর প্রতীক বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি বড়দিনের মেলা
শীত ঠিকমতো পড়েনি, কিন্তু ইউরোপের অনেক শহরে বড়দিনের মেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে৷ বড়দিন যত কাছে আসবে, ভিড় ততই বাড়বে৷ কাজেই হেঁটে হেঁটে, ধীরেসুস্থে মেলা দেখার সময় এইটাই৷
ছবি: Stadt Nürnberg/B. Fuder
কোলন, জার্মানি
কোলন ক্যাথিড্রালের পাশে কোলনের বড়দিনের মেলা দেখতে আসেন প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ৷ মেলায় দোকানপাট ছাড়াও থাকে গানবাজনা আর মনোরঞ্জন৷
ছবি: imago
ক্রাকাও, পোল্যান্ড
অনেকের মতে, ক্রাকাও হলো পোল্যান্ড বা ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলির মধ্যে একটি - বিশেষ করে ক্রাকাও-এর প্রাচীন অংশটি৷ পুতুল দিয়ে সাজিয়ে বাইবেলে বর্ণিত খ্রিষ্টজন্মের যে মডেল তৈরি করা, সে ধরনের সেরা মডেল বাছার জন্য বড়দিনের সময় ক্রাকাওয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, ১৯৩৭ সাল থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Dabrowski
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার কেন্দ্রে আছে ‘স্কটিশ চার্চ’, তার সামনে বসে বড়দিনের মেলা৷ এই মেলার মূল আকর্ষণ হলো একটি ১৫১ ফুট লম্বা ‘নেটিভিটি’ বা খ্রিষ্টজন্মের দৃশ্য৷ নয়তো ভিয়েনার বড়দিনের মেলায় ঐতিহ্যের ওপরেই জোর দেওয়া হয়৷ নানা ধরনের হাতের কাজ, ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর কাচের জিনিস আর চীনেমাটির বাসনকোসন থাকে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাসেল, সুইজারল্যান্ড
বাসেলের বড়দিনের মেলা বসে বারফ্যুসারপ্লাৎস রাস্তা বরাবর৷ এটিকে ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা বড়দিনের বাজার বলে মনে করা হয়৷ আলো দিয়ে সাজানো এত বড় রাস্তাও ইউরোপে আর কোথাও নেই৷ মেলার প্রায় ১৮০টি স্টলে কাঠের খেলনা থেকে নিরামিষ খাবারদাবার বা ভারতীয় হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস, সব কিছুই পাওয়া যায়৷
ছবি: Basel Tourismus
স্ট্রাসবুর্গ, ফ্রান্স
স্ট্রাসবুর্গের বড়দিনের মেলা এই নিয়ে ৪৪৭তম বার বসছে৷ এটি ফ্রান্সের সবচেয়ে পুরনো বড়দিনের মেলা৷ শুধু স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রালের চারপাশেই নয়, শহরের প্রাচীন অংশ জুড়ে বসে কাঠের তৈরি ছোট ছোট স্টল, সেখানএ পাওয়া যায় রকমারি জিনিস আর খাবারদাবার৷
ছবি: Sebastan Hengy
ব্রুগেস, বেলজিয়াম
ব্রুগেসের বড়দিনের মেলা বসে ‘গ্রোটে মার্ক্ট’ বা বড়বাজারে৷ মধ্যযুগীয় শহরটাকে বড়দিন উপলক্ষ্যে আলো দিয়ে সাজানো হয়৷ বাজারের কাছে কোচোয়ানরা তাদের ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে যাত্রী পাবার আশায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.P.Tschauner
মাদ্রিদ, স্পেন
মাদ্রিদের বড়দিনের মেলা বসে মুখ্য চত্বরটিতে৷ স্পেনে বড়দিনের মরশুমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হলো ৬ই জানুয়ারি, যেদিন ‘রাজকীয় কুচকাওয়াজ’ অনুষ্ঠিত হয়৷ ‘রাজকীয়’ বলতে বাইবেলের সেই তিন রাজা, যারা নবজাত যিশুখ্রিষ্টকে স্বাগত জানানোর জন্য পুবদেশ থেকে এসেছিলেন৷ বহু টুরিস্টরা আসেন সেই কুচকাওয়াজ দেখতে ও আমোদ-আহ্লাদে যোগ দিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H.C. Hidalgo
লন্ডন, গ্রেট ব্রিটেন
জার্মান বড়দিন যে ইংলিশ চ্যানেলের ওপারেও রপ্তানি করা হয়ে গেছে, তার সেরা প্রমাণ হলো লন্ডনের হাইড পার্কে আয়োজিত ‘উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড’৷ এখানে ‘বায়ার্ন রুটশি’ বা বায়ার্ন স্লাইড বলে একটি ফেয়ারগ্রাউন্ড রাইড আছে৷ আর পাওয়া যায় জার্মান সসেজ৷ নয়তো ফেরিস হুইল, রোলারকোস্টার বা আইস স্কেটিংয়ের জন্য আইস রিঙ্ক, কোনো কিছুরই অভাব নেই৷ ‘ম্যাজিক্যাল আইস কিংডম’ নামের বরফের ভাষ্কর্যগুলোও বহু মানুষকে টানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kerimokten
গোটেনবুর্গ, সুইডেন
এটি হলো সুইডেনের বৃহত্তম বড়দিনের মেলা৷ পঞ্চাশ লাখ আলো দিয়ে সাজানো হয় এই মেলা৷ যেহেতু স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মেলা, গ্রীষ্মকালে আবার এই বড়দিনের মেলাই হয়ে ওঠে একটা থিম পার্ক৷
ছবি: Gören Assner
নুরেমবার্গ, জার্মানি
এই হলো নুরেমবার্গের সেই ‘ক্রিস্টকিন্ডলেমার্ক্ট’, বিশ্বের প্রাচীনতম বড়দিনের মেলাগুলির অন্যতম এই ‘শিশু যিশুখ্রিষ্টের মেলা’৷ সরকারি নথিপত্রে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৬২৮ সালে৷ মেলার সবচেয়ে নামকরা খাবারটি হলো ‘ন্যুর্নব্যার্গার লেবকুখেন’, যা কিনা এক ধরনের জিঞ্জার ব্রেড৷