ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড বাজারের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী৷ প্রতিদিন প্রায় চার লাখ মানুষ ঐ বাজারে যান৷ বিশ্বের অন্যতম পুরনো এই বাজার ইউরোপের সবচেয়ে বড়৷
বিজ্ঞাপন
তুর্কি ভাষায় ‘কাপালা চার্শা’ নামে পরিচিত গ্র্যান্ড বাজার যেন শহরের মধ্যে আরেকটি শহর৷ ৬০টির বেশি লেন থাকা এই বাজারে প্রায় ৩,৬০০ দোকান আছে৷ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এসব দোকান চালান৷
বাজারে ঢোকার জন্য আছে ২১টি প্রবেশপথ৷
একজন ক্রেতা বললেন, ‘‘মাঝেমধ্যে একটু সমস্যার মনে হয়, কারণ, অনেক মানুষ আর শব্দ৷ তবে এক জায়গায় অনেক কিছু পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি দারুণ৷''
আরেকজনের বক্তব্য, ‘‘এখানে যারা কাজ করেন, তারা খুব ভালো আর ফ্রেন্ডলি৷’’
পর্যটকদের আকর্ষণ করে এমন প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়৷ কার্পেট থেকে শুরু করে ডিজাইনার ব্র্যান্ড, আসল কিংবা নকল, মশলা ও স্যুভেনির, যা আপনি এই বাজারে যাওয়ার আগে কেনার কথা কখনও ভাবেননি৷
যে বাজারে ঢোকার ২১ প্রবেশপথ
04:03
গ্র্যান্ড বাজারের প্রতিটি দোকানের একটা গল্প আছে৷ হাশিম গ্যুরেলি পাঁচ দশক ধরে দোকান চালাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়স যখন তিন তখন থেকেই আমার বাবা আমাকে এই দোকানে নিয়ে আসা শুরু করেছিলেন৷ এখন আমার বয়স ৫৫৷ আমি কার্পেটের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি৷ আমরা বলি, কার্পেটের ধুলার সঙ্গে বেড়ে ওঠা৷ এই বাজারের মানে আমার কাছে কী? আমার পৃথিবী৷’’
১৫ শতক থেকে এই বাজার চালু আছে৷ সেই সময় দ্বিতীয় সুলতান মেহমেত কনস্টানটিনোপোল জয় করার পর এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ শুরুতে কাপড় ও অলংকার ব্যবসার জন্য এটি চালু করা হয়েছিল৷ পরের কয়েক শতকে এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক হাবে পরিণত হয়েছে, যেটি এখন ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত৷
গ্র্যান্ড বাজারে কত মানুষ যায় তার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব নেই৷ তবে ধারণা করা হয় প্রতিদিন প্রায় চার লাখ মানুষ গ্র্যান্ড বাজারে যান৷ সেই হিসেবে এটি ইস্তাম্বুলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য৷
গ্র্যান্ড বাজারে দরাদরি কর পণ্য কিনতে হয়৷ সেখানকার এক দোকানি ইয়াসিন জানান, ‘‘বেশিরভাগ দোকানি জানেন আপনারা পর্যটক৷ আপনি দাম জিজ্ঞেস করলে তারা ৫০ বা ১০০ টাকা বেশি বলবে, কারণ, তারা জানেন, আপনারা দরাদরি করবেন, কারণ, এটা তুরস্কের ঐতিহ্য৷’’
গ্যোনা কেটেল্স/জেডএইচ
ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজারের জন্য নতুন সাজ
জেমস বন্ডের ছবি ‘স্কাইফল’-এর গোড়ায় সেই মোটরসাইকেলে চড়ে ধাওয়া করার দৃশ্য মনে আছে? দৃশ্যটির শুটিং হয়েছিল ইস্তানবুলের বিখ্যাত গ্র্যান্ড বাজারের ছাদে৷ সেই ছাদের অবশ্য এখন খারাপ অবস্থা৷ তাই শুরু হয়ে গেছে মেরামতির কাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
পর্যটকদের চোখে বিশ্বের সেরা গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি
গ্র্যান্ড বাজার মানে বড়বাজার, তুর্কি ভাষায় বলে ‘কাপালিচার্সি’৷ ২০১৪ সালেও এই বাজার পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় একটি গন্তব্যস্থান ছিল৷ বাজারের খোলার ছাদগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৪ই জুলাই৷ এর ঠিক পরদিনই একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু তাতে গ্র্যান্ড বাজার মেরামতির কাজ থামেনি৷ ছবিতে কর্মীরা বেড়ালের মতো ছাদের ওপর দিয়ে হুইলব্যারো ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
‘স্কাইফল’-এর ধাক্কা শুধু নয়...
জিরো-জিরো-সেভেনের মোটরসাইকেলে চড়ে ধাওয়া করার দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে গ্র্যান্ড বাজারের কিছু কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ তবে ‘হলিউড থেকে আসা বন্ধুরা’ যে ক্ষতি করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে কালের যাত্রায় – বলেছেন ওকান এর্হান ওফ্লাজ, যিনি ফতিহ এলাকার ডেপুটি মেয়র৷ গ্র্যান্ড বাজার ঐ এলাকাতেই অবস্থিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
গ্র্যান্ড বাজার সন্ত্রাসী আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে
ছবিতে তুর্কি পুলিশ বাজারের চারপাশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে৷ সম্প্রতি ইস্তানবুলে একাধিক সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে, যার জন্য কুর্দ জঙ্গি ও জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কাজেই বাজারের দোকানিদের চিন্তা আপাতত মেরামতির কাজ কেমন চলেছে, তা নিয়ে নয়, বরং টুরিস্টদের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Toprak
ঐতিহাসিক
গ্র্যান্ড বাজারের প্রায় তিন হাজার দোকানে কাজ করেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ অটোমান সাম্রাজ্যের সময় গ্র্যান্ড বাজার ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র৷ ছয় শতাব্দী ধরে অটোমান সাম্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় রাজত্ব করে – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে তার অন্ত ঘটা অবধি৷
ছবি: Julian Finney/Getty Images
‘ঢাকা বাজার’
তুর্কি ভাষায় গ্র্যান্ড বাজারের নাম হলো ‘কাপালিচার্সি’, যার অর্থ ‘ঢাকা বাজার’, অর্থাৎ খোলা আকাশের নীচে নয়, বরং ছাদ দেওয়া বাজার৷ বাজারটি ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক উপদ্বীপে অবস্থিত৷ সুলতান আহমেদের মসজিদ ও প্রখ্যাত হাজিয়া সোফিয়ার অবস্থানও ঠিক সেখানেই৷
ছবি: picture-alliance/AA/I. Terli
স্থানীয় লোকেরাও আসেন
গ্র্যান্ড বাজারে আবারো আগের মতো টুরিস্টরা গম গম করবে, সেই দিনের আশায় আছেন দোকানিরা৷ ওফ্লাজ স্বীকার করেন যে, পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে৷ তবে তাঁর দাবি, বাজারের ৩০ হাজার দোকানি ও কর্মীরা ‘নিজেরাই একটা বাহিনী’৷ এছাড়া শুধু টুরিস্টরা তো নয়, ইস্তানবুলের বাসিন্দারাও গ্র্যান্ড বাজারে আসতে ভালোবাসেন৷