বহুসংস্কৃতির মিশেলে তৈরি ইস্তাম্বুল পর্যটকদের ভীষণ প্রিয়৷ এই শহরের একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা শত বছর পুরোনো ট্রাম টি-টুতে চড়া৷ এতে চড়ে আপনি চলে যেতে পারেন সুদূর অতীতে৷ স্বাদ নিতে পারেন ইস্তাম্বুলের ঐতিহ্য ও আধুনিক ইতিহাসের৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
ঐতিহাসিক ট্রাম টি-টু ইস্তাম্বুলের একটি বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক৷ এতে চড়ে ইস্তিকলাল জাদ্দেস্সি বা স্বাধীনতা সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে অনেক কিছু দেখতে পাওয়া যায়৷
নস্টালজিক ট্রামের এই রুট মাত্র ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ৷ তাকসিম স্কয়ার থেকে টানেল স্টেশন পর্যন্ত এই পথে পাশাপাশি বড়জোর দু'টি গাড়ি চলতে পারে৷ এটা একটা শপিং স্ট্রিট ও নৈশ প্রমোদের জায়গা৷ শুধু পর্যটক নয়, অনেকের জন্যই একশ’ বছর পুরোনো এই রেলগাড়িতে চড়া একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা৷
১৮৭১ সালে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় প্রথম ট্রাম চলতে শুরু করে৷ পরে বছরে প্রায় ১০ কোটি যাত্রী এই ট্রাম ব্যবহার করতেন৷ তবে ষাটের দশকে শহরটি ট্রামের চেয়ে গাড়ির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷
১৯৯০ সালে T2 ট্রামের প্রথম রুটটি আবার চালু করা হয়৷ এখন পাঁচটি ট্রাম লাইন চালু আছে৷
ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ট্রাম টি-টু
04:09
This browser does not support the video element.
পর্যটক ইয়াসিন ডুসুনচেলির ভাষায়, ‘‘মানুষ এই ট্রাম পছন্দ করেন কারণ এটা পুরোনো এবং কালের সাক্ষী৷ অতীতকে জীবন্ত করে তোলে এই ট্রাম৷ তাই এতে মানুষের অনেক আগ্রহ৷ তুরস্ক ও অন্য অনেক দেশের লোকেরা এখানে ছবি তোলেন৷ এই ট্রাম কারো চোখ এড়ায় না৷ তাই এটি ইস্তাম্বুলের একটি বিশেষ প্রতীক৷’’
প্রতিটি স্টপেই কিছু না কিছু আছে৷ যেমন হোটেল পেরা প্যালেসে পাঁচ মিনিটেই ঘোরা যায়৷ অরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে ১৮৯৫ সালে এই বিলাসবহুল থাকার জায়গাটি তৈরি করা হয়৷
সারাবিশ্বের বিখ্যাত লোকেরা এখানে থেকেছেন৷
অতিথিরা ঐতিহাসিক এই আবহ উপভোগ করেন৷
ট্যুরিস্ট গাইড আরজু তোরমান বলেন, ‘‘আপনি এখানে অনেকাংশে ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশ এবং কিছুটা মুরিশ ও প্রাচ্যের ছোঁয়া পাবেন৷ তাই এটা যেন সবকিছুর মিশেলে তৈরি৷ এটা আমাদের সে সময়ের জীবনবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেয়৷ একটা বহুসংস্কৃতির পরিবেশ৷’’
এরপর এগিয়ে গেলে লে গ্যালাটাসারায় স্টেশন৷ এখানে ১৮৭৬ সালে তৈরি ফ্লাওয়ার প্যাসেজ৷ এখানে ধ্রুপদি টার্কিশ খাবারের সন্ধান মিলবে৷ যেমন, সেভিচ রেস্টুরেন্ট৷ এখানকার মেন্যুতে ২৫ পদের টার্কিশ ক্ষুধাবর্ধক বা অ্যাপিটাইজারের নাম আছে৷
পাঁচটি স্টপ প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার যাত্রীকে ঘুরিয়ে দেখায় এই ট্রামটি৷
দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্ব চলার পর নস্টালজিয়া ট্রাম পৌঁছায় তাকসিম স্কয়ারে৷ ইস্তাম্বুলের আধুনিক অথচ ঐতিহ্যময় অতীত ইতিহাস ঘুরে আসার পালা আপাতত এখানে শেষ৷
ইয়েন্স ফন লারচার/জেডএ
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের একটি অংশ পড়েছে ইউরোপে, বাকিটা এশিয়ায়৷ কিন্তু আসলে ঠিক কতটা ইউরোপীয় এই শহর?
ছবি: Rena Effendi
সবচেয়ে বিখ্যাত
দুটি মহাদেশের ছোঁয়া পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর তুরস্কের ইস্তাম্বুল৷ সেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা আর ধর্মনিরপেক্ষ লাইফস্টাইলের সঙ্গে ধর্মের যে সংঘাত সেটি বোধ হয় আর অন্য কোনো শহরে পাওয়া যাবে না৷ অনেকে মনে করেন, ঠিক এ কারণেই ইস্তাম্বুল এত আকর্ষণীয়৷
ছবি: Rena Effendi
ইতিহাস
ইস্তাম্বুলের ইতিহাস ২,৬০০ বছরের পুরনো৷ পার্সিয়ান, গ্রিক, রোমান, অটোমান– সবাই বিভিন্ন সময়ে এই শহর নিয়ন্ত্রণ করেছে৷ ফলে তার নামও একেক সময় একেকরকম ছিল৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নাম বোধহয় কনসট্যান্টিনোপল৷ ১৯৩০ সালে শহরটির নাম হয় ইস্তাম্বুল৷
ছবি: Rena Effendi
বসফরাস পাড়ি
ইস্তাম্বুলের ইউরোপ অংশের কারাকয় আর এশিয়ার কাদিকয়ের মধ্যে আছে বসফরাস প্রণালী৷ প্রতিদিন ফেরিতে করে হাজার হাজার মানুষ এক পার থেকে আরেক পারে যায়৷ সময় লাগে ২০ মিনিট৷
ছবি: Rena Effendi
গালাতা সেতু
ইস্তাম্বুলের একটি বিখ্যাত সেতু৷ সেখানে দাঁড়িয়ে নৌকা চলাচল দেখা যায়৷ শহরের অনেকে সেখানে যান মাছ ধরতে৷ আর আছেন খুচরা বিক্রেতারা৷
ছবি: Rena Effendi
নতুন মসজিদ
২০১৯ সালে শহরের বিখ্যাত তাকসিম চত্বরের কাছে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়৷ সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান চত্বরটিকে একটি নতুন পরিচয় দিতে চাইছেন৷ সেটি হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইউরোপীয় পরিচয়ের পরিবর্তে রক্ষণশীল ও নিউ-অটোমান পরিচয়৷
ছবি: Rena Effendi
ধর্মপ্রাণদের এলাকা
ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকাটি ইউরোপীয় অংশ পড়েছে৷ তুলনামূলকভাবে যাঁরা বেশি রক্ষণশীল, তাঁরা সেখানে বাস করেন৷ অনেকে ফাতিহকে ‘ধর্মপ্রাণদের শহর’ বলে ডাকেন৷ তুর্কি প্রেসিডেন্টের একেপি দলের অনেক সমর্থক আছেন সেখানে৷
ছবি: Rena Effendi
ছোট্ট সিরিয়া
সাম্প্রতিক সময় ফাতিহতে অনেক সিরীয় বসবাস শুরু হয়েছে৷ যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ থেকে পালিয়ে অনেক সিরীয় নাগরিক ফাতিহতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তুরস্কের সরকার এই সিরীয়দের নাগরিকত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে৷ সমালোচকরা বলছেন, এটি ভোটার বাড়ানোর একটি উদ্যোগ মাত্র৷
ছবি: Rena Effendi
নাইটলাইফ
রাতের বেলায় পার্টি কিংবা কিছু পানীয় পান করতে চাইলে যেতে হবে ইস্তাম্বুলের কাদিকয় এলাকায়৷ সেটি পড়েছে শহরের এশীয় অংশে৷
ছবি: Rena Effendi
পরিবর্তন
শহরের গালাতা এলাকার একটি ডিজাইনার স্টোরে কাজ করেন আয়সেগুল সারাকোগলু৷ এলাকাটি পর্যটকদের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ তবে ইদানীং ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে বলে জানান তিনি৷ এখন শুধু আরব পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছেন৷ তাঁর আশা, শিগগিরই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে৷