ইস্রায়েলের হামলায় হামাস-এর নেতা নিহত
২৩ মার্চ ২০০৪�ায়ই হত্যা করা হয়৷ পর পর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷ এই হামলায় কমপক্ষে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ও ১৫ জন আহত হয়েছে৷
এই ঘটনার পর ইস্রায়েল অধিকৃত গাজ়া ও জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে প্রবল প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে৷ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসের আরাফাত ৩ দিনের সরকারী শোকের ঘোষনা করেছেন৷ ফিলিস্তিনি প্রধাণমন্ত্রী আহমেদ কুরেই বলেছেন, এই ঘটনার ফলে বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে ইস্রায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করতে আগ্রহি নয়৷ প্রায় ২ লক্ষ মানুষ ইয়াসিনের শবযাত্রায় অংশ নিয়েছে এবং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ডাক দিয়েছে৷ হামাস আন্দোলনের নেতা আবদেল আজ়িজ় আল রানতিসি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে খোলাখুলি এক হুমকিতে বলেছেন, এখন আমরা খুনি ও সন্ত্রাশীদের উদ্দেশ্যে বলছি, যুদ্ধ এবার শুরু হলো৷
ইস্রায়েল অবশ্য জানিয়েছে, যে এই হত্যার মাধ্যমে সেদেশ বাকি উগ্রবাদী সংগঠনগুলিকে আরও সতর্ক করে দিতে চেয়েছে - যাতে তারা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে হামলার পথ ত্যাগ করে৷ ইয়াসিনকে ইস্রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাউল মোফাস ফিলিস্তিনি ওসামা বিন লাদেন হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ ইস্রায়েলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আশঙ্কা করছেন যে এই হামলার প্রতিশোধের ফলে অসংখ্য ইস্রায়েলীর প্রাণহানী ঘটবে৷
ব্রাসেলস-এ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে জোটের বর্তমান ও ভবিষ্যত ২৫টি সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে কড়া ভাষায় ইস্রায়েলের সমালোচনা করেছেন৷ তাঁদের মতে, ইস্রায়েল শেখ আহমেদ ইয়াসিনের পরিকল্পিত হত্যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে৷ ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র বলেন,আমরা সবাই বুঝতে পারি যে সন্ত্রাশবাদীদের মোকাবিলা করতে ইস্রায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে - তবে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে৷ তা বলে এই ধরণের বে-আইনী হত্যা চালিয়ে যাবার অধিকার ইস্রায়েলের নেই৷ আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি৷ এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না, এর পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না এবং এর ফলে কিছুই হাসিল করা যাবে না৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়শকা ফিশার বলেন, এই ঘটনা তাঁকে গভীর দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে৷ তবে তাঁর মতে, কোনো এক পক্ষের উপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না৷ আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রায়া বা ROAD MAP-এর মাধ্যমে ইস্রায়েল ও এক স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই হবে এই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান৷ ফিশার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক্ষেত্রে নানাভাবে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে৷ ROAD MAP ব্যর্থ হয়েছে বলে যে ধারনা চালু হয়েছে, আমি তা একেবারেই মনে করি না৷ কারণ দিনের শেষে আবার সেই আলোচনার পথে ফিরতেই হবে৷ আর কোন বিষয়ে তখন কথা হবে? শান্তি ছাড়া আর কী বিষয়ে কথা হতে পারে?
জাতিসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নানও শেখ ইয়াসিনের হত্যার নিন্দা করেন৷ তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ইস্রায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পথে এই পদক্ষেপ আরও এক বাধার সৃষ্টি করলো৷ আন্নান আরও বলেন,আমাকে বলতেই হচ্ছে যে আমি শেখ ইয়াসিনের পরিকল্পিত হত্যা এবং এই হামলায় অন্যান্যদের হত্যার নিন্দা করছি৷ এই ধরণের পদক্ষেপের মাধ্যমে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয় না, শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রেও এই ধরণের হামলা সহায়ক হয় না৷ আমি ঐ অঞ্চলের সব পক্ষের উদ্দেশ্যেই শান্ত থাকার আবেদন জানাচ্ছি যাতে পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক না হয়ে পড়ে৷
জাতিসংঘ, আরব বিশ্ব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সারা বিশ্ব শেখ ইয়াসিনের হত্যার নিন্দা করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য প্রথমেই সরাসরি ইস্রায়েলের সমালোচনা করে নি৷ সব পক্ষের উদ্দেশ্য শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও শারন সরকারের কোনো নিন্দা শোনা যায় নি ওয়াশিংটন থেকে৷ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কনডোলিসা রাইস বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে হামাস এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং আমাদের বিশ্বাস যে শেখ ইয়াসিন ব্যক্তিগতভাবে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতো না৷
এর কয়েক ঘন্টা পর অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মূখপাত্র রিচার্ড বাউচার বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত বিব্রতকর৷ ওয়াশিংটন সফররত ইস্রায়েলী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালম অবশ্য ইস্রায়েলের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানকে বুশ প্রশাসনের অনুরূপ অভিযানের সঙ্গে তুলনা করেছেন৷