‘ইহুদি অতিথিদের' গোসল করে তারপর সুইমিং পুলে নামার নির্দেশনা দিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন এক হোটেল মালিক৷ সুইস আল্পসের এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে খোদ ইসরায়েলও৷
বিজ্ঞাপন
আলপাইন গ্রাম আরোসাতে অবস্থিত হোটেলটির নাম ‘দ্য প্যারাডাইস অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল'৷ সেখানে অবস্থানরত এক অতিথি ইহুদিদের গোসল সংক্রান্ত নির্দেশনার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ এতে লেখা রয়েছে, ‘‘ইহুদি অতিথিদের প্রতি, সাঁতরাতে যাওয়ার আগে দয়া করে গোসল করে নিন৷ আপনি যদি এই নিয়ম অমান্য করেন তাহলে আমি আপনার জন্য সুইমিং পুলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব৷ বিষয়টি বোঝার জন্য ধন্যবাদ৷''
ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া ছবিটি ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে৷
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও দ্রুত এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ সেদেশের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি হটভ্লি এই নির্দেশনাকে ‘একটি অত্যন্ত জঘন্য ইহুদি বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড' আখ্যা দিয়ে এর বিচার দাবি করেছেন৷ পাশাপাশি, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জেকব কাইদার সুইস সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টির নিন্দা জানানোর দাবি জানিয়েছে৷ সুইস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁকে জানিয়েছে যে, দেশটি যেকোন ধরণের বর্ণবাদী, ইহুদি বিরোধী এবং বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়৷
গোসলের পোশাকে যত ফ্যাশন
কখনো এক কাপড়, কখনো দুটো, কখনো টাঙ্কিনি থেকে বুরকিনি–আরো কত কত অভিনব পোশাক৷ গোসলের পোশাকে নতুনত্ব সময়ে সময়ে দিয়েছে নতুন মাত্রা৷
ছবি: ullstein bild - Zander & Labisch
গোসলের পোশাকের ধারা
অষ্টাদশ শতাব্দীতে নারী ও পুরুষদের জন্য গোসলের পৃথক পোশাক প্রথম দেখা যায়৷ পাতলা উল এবং কটনের কাপড়ে তৈরি পোশাক পরে মানুষ গোসল করতো৷ সেই পোশাকের পানি শোষণের ক্ষমতা ছিল অনেক৷ ওই সময় নারী ও পুরুষের পোশাকে যেমন ভিন্নতা ছিল, তেমনি গোসলের জন্য জায়গাও আলাদা ছিল৷
ছবি: picture alliance/IMAGNO
অগ্রগতি
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্যটনের প্রসার শুরু হলে সাগরে সাঁতার ট্রিপ শুরু হয়৷ মৌসুমের শুরুতে সাগর থাকতো উন্মুক্ত৷ এ সময় সাঁতারের পোশাক কিছুটা টানটান হতে শুরু করে৷ ইলাস্টিকের পাতলা কাপড়ের প্রচলন শুরু হয়৷ রোদ থেকে বাঁচতে এখনকার হ্যাটের মতো ক্যাপের ব্যবহার শুরু হয়৷
ছবি: ullstein bild - Zander & Labisch
আধুনিকতা
বিংশ শতাব্দীতে এসে শেষ পর্যন্ত আধুনিকতায় প্রবেশ করে সাঁতারের পোশাক৷ ছোট বেল্ট, সোনালি বোতাম এই ধারার পোশাকে নারীসুলভ ভাব নিয়ে আসে৷ এ সময় সাঁতারের পোশাক ছোট হয়ে যায়৷ তখন প্লাস সাইজের পোশাক পাওয়া যেত না৷
ছবি: Getty Images
বিকিনির আত্মপ্রকাশ
কেবল চারটা ছোট ত্রিভুজে নতুন এক পোশাক আসে, যা বিস্ময়ের সাথে প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব৷ এর নাম বিকিনি৷ ১৯৪৬ সালের ৫ জুলাই নৃত্যশিল্পী মিশেলিন বার্নারডিনি এই পোশাকে প্যারিসিয়ান পুলে ক্যামেরার সামনে আসেন৷ লুই রেয়ার্ড এর ডিজাইন করেন৷ তিনিও হয়ত জানতেন না যে, এটা নারীদের গোসলের পোশাকের স্টাইল চিরদিনের জন্য বদলে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একদিনে বদলে গেল দুনিয়া
অলিম্পিক সাঁতারু এস্থার উইলিয়ামস একটা ওয়াটার শো-তে অংশ নিতে গিয়ে হলিউডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেননি৷ এটা তাঁকে আয়ের একটা পথ করে দেয়৷ ওই সময় তিনি ‘নেপচুন’স ডটার’ নামে একটা সিনেমায় অভিনয় করেন, যা ১৯৪৯ সালে মুক্তি পায়৷ এতে তিনি আকর্ষণীয় গোসল-সৌন্দর্য্যের জন্য তারকাখ্যাতি পান৷ তা পরে তাকে হলিউডের অন্যতম ধনী নারীতে পরিণত করে৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
সাঁতারের পোশাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা
১৯৫০-এর দশকে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বেশ মডেস্ট একটা ভাব ছিল৷ হাই হিল জুতা পরা এই প্রতিযোগীদের সাঁতারের পোশাকে আসতে উৎসাহ দেয়া হতো৷ মিস জার্মানি পেট্রা শুরমান (বাম থেকে সপ্তম) ১৯৫৬ সালে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জ্যামিতিক প্রভাব
পপ আর্ট দৃশ্যপটে আসার পর জ্যামিতিক ধরণ ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে৷ এটা ১৯৬০’র দশকের অন্যতম প্রধান স্টাইলে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/H. Flesch
অগ্রাধিকারে মাথা
১৯৬০’র দশকে নারীদের সাঁতারের পোশাকে অগ্রাধিকারে থাকতো মাথা-ঢাকা৷ যেমনটা করেছিলেন ইটালিয়ান অভিনেত্রী জিনা লোলোব্রিজিডা৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
সাঁতার পোশাক নিয়ে টিভি সিরিজ
আমেরিকান টিভি সিরিজ ‘বে-ওয়াচ’ লেখা হয়েছে সাঁতার পোশাকের ইতিহাস নিয়ে৷ এই সিরিজের তরুণীদের পরা পোশাক ৯০ দশকের প্রথমদিকে রাজত্ব করেছে৷
ছবি: Getty Images
দ্য বন্ড গার্লস
১৯৬২ সালে যখন উরসুলা অ্যান্ড্রেস সাগর থেকে ওঠেন, তখন তাঁর গায়ে ছিল দুটো আঁটোসাটো পোশাক৷ ওই সময় সিনেমামুখী ইহুদিরা একে বর্জন করেছিল৷ ৪০ বছর পর হালে বেরি একই পোশাক পরে পানি থেকে বের হয়ে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/UPI/Fox
আদর্শ সীমারেখার সন্ধানে
সাঁতারের পোশাক ডিজাইনারদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কত বেশি উপকরণ দিলে সেটা অতিরিক্ত হয়ে যাবে? বিকিনি এবং সাঁতার পোশাকের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করে বলাও কঠিন৷ ২০১১ সালে মিয়ামিতে ফ্যাশন সপ্তাহে এই পোশাক উপস্থাপন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G.I. Rothstein
বুরকিনি কেবল মুসলিমদের জন্য নয়
এই ছবিটা অস্ট্রেলিয়ার সৈকত থেকে নেয়া হয়েছে৷ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে অনেক মানুষই গোসলের সময় রোদে পুড়তে চান না৷ সে কারণে মুসলিম এবং ভিন্নধর্মীরা সূর্য রশ্মি থেকে তাদের ত্বক বাঁচিয়ে চলেন৷ অন্যদিকে ফরাসি রিভিয়েরা এবং জার্মানির অনেক জায়গাতেও বুরকিনির অনুমোদন নেই৷ বুরকিনিতে নিষেধাজ্ঞা খুবই বিতর্কিত৷
ছবি: Privat
12 ছবি1 | 12
সুইজারল্যান্ডের পর্যটন কার্যালয় এই ‘অনাকাঙ্খিত' ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, আলোচিত হোটেলটি ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছে এবং নির্দেশনাটি সরিয়ে নিয়েছে৷ প্যারাডাইস হোটেলের ম্যানেজার ব়্যুথ থম্যান সুইস গণমাধ্যমের কাছ দাবি করেছেন, নির্দেশনাটি লেখার ক্ষেত্রে ‘শব্দচয়নে ভুল করেছেন'৷ তিনি কোনভাবেই ইহুদিবিদ্বেষী নন বলেও দাবি করেছেন৷
দৈনিক সংবাদপত্র ব্লিককে তিনি বলেন, ‘‘হোটেলটির অনেক ইহুদি অতিথি রয়েছেন৷ এবং অন্যান্য অতিথিরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ গোসল না করেই সুইমিং পুলে নেমেছিলেন৷''
উল্লেখ্য, সুইস আল্পসের আলোচিত ঐ অঞ্চলে অনেক কট্টর রক্ষণশীল ইহুদি পর্যটক যান৷ এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সেখানকার হোটেলগুলো ইহুদি ধর্মের নিয়ম মেনে তৈরি ‘কওশার ফুড' পরিবেশ করে এবং তাদের অন্যান্য চাহিদাও পূরণ করে থাকে৷