পশ্চিম তীরে অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ওয়াশিংটন কার্যত সেগুলির বৈধতা মেনে নিলো৷ ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ফিলিস্তিনিরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া বহুকাল ‘মুমূর্ষু' অবস্থায় রয়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চেও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র আর অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না৷ তা সত্ত্বেও অধিকৃত এলাকায় বসতি নিয়ে ইসরায়েল এতকাল একঘরে হয়ে ছিল৷ এবার ট্রাম্প প্রশাসন সেই এলাকার উপর ইসরায়েলের অধিকার কার্যত স্বীকার করে নিলো৷ দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে ওয়াশিংটন ইহুদি বসতি স্থাপনের অধিকারকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি' হিসেবে গণ্য করে আসার পর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নীতি বর্জন করা হলো৷ উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করার পর থেকে সেখানে ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলেছে৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সোমবার এই ঘোষণা করায় গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷ চলতি বছর দু-দুটি নির্বাচনে অস্পষ্ট ফলাফলের পর তিনি কোনোরকমে ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছেন৷ এই অবস্থায় ওয়াশিংটনের ঘোষণাকে নিজের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছেন তিনি৷ নেতানিয়াহু বলেন, অবশেষে এক ‘ঐতিহাসিক ভুল' সংশোধন করা হলো৷
পম্পেও প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও রনাল্ড রেগানকে উদ্ধৃত করে ইহুদি বসতির আইনি বৈধতা নিয়ে সংশয় দূর করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি অবশ্য খোলসা করে বলেন, এই অবস্থানের মাধ্যমে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা সম্পর্কে কোনো আগাম সমাধানসূত্র বাতলে দেওয়া হচ্ছে না৷ দুই পক্ষকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
এমন সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি এর আগে পূর্ব জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েও অ্যামেরিকা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল৷ বলা বাহুল্য, ফিলিস্তিনিরা ওয়াশিংটনের এই নীতি পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ ফিলিস্তিনি মধ্যস্থতাকারী সায়েব এরেকাত বলেন, ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক আইনের বদলে ‘জঙ্গলের আইন' কায়েম করার হুমকি দিচ্ছে৷ ফিলিস্তিনিরা আরও মনে করিয়ে দিয়েছে, যে আন্তর্জাতিক স্তরে আইনি সিদ্ধান্ত বাতিল করার কোনো এক্তিয়ার ওয়াশিংটনের নেই৷
এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে হিংসার আশঙ্কা সম্পর্কেও সচেতন ট্রাম্প প্রশাসন৷ ফলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নাগরিক ও স্থাপনাগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে নীতি পরিবর্তনের সময় বাছাই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ ডনাল্ড ট্রাম্প ও বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু যে যার দেশে এই মুহূর্তে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন৷ সেই সংকট থেকে মনোযোগ কিছুটা অন্তত দূরে সরিয়ে নিতে তাঁরা এমনটা করছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল: যে সম্পর্ক বিভাজনের
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের নাবলুস ঘুরেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক জুলফিকার এবানি৷ তুলে এনেছেন সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আর পাশাপাশি থেকে ইসরায়েলিদের সাথে তাদের যোজন যোজন দুরত্বের চিত্র৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ডাক টিকিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড
পশ্চিম তীরে নাবলুসের একটি সড়ক৷ পাশেই ইসরায়েল কিন্তু ফিলিস্তিনের কোনো ডাক টিকিট চলে না সেখানে৷ আবার বিপরীতে ইসরায়েলের কোনো ক্রেডিট কার্ড আপনি ফিলিস্তিনে ব্যবহার করতে পারবেন না৷ ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে অবস্থানকালে ডয়চে ভেলের জুলফিকার এবানিকে সেখানকার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির পাঠানো বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘‘অবস্থান প্যালেস্টাইন অঞ্চলে৷ লেনদেন সম্ভব নয়৷ আপনি কার্ডটি এই দেশে ব্যবহার করতে পারবেন না৷’’
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
বিভাজনের দেয়াল
জুলফিকার এবানি ফিলিস্তিনে অবস্থান করেছেন ‘ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে’৷ তাঁর ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে ‘নিকৃষ্ট দৃশ্য’ অবলোকন করা যায় হোটেলটি থেকে৷ ফিলিস্তিন থেকে যে দেয়াল পৃথক করেছে ইসরায়েলকে সেটি দেখতে পাবেন এই হোটেলের জানালা দিয়ে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
চাকুরি না বিদ্যা?
আন-নাজাহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়৷ ছবিতে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি নিউজলেটার দেখা যাচ্ছে৷ যার শিরোনাম ছিল ‘দখলদারিত্বের ১৯ বছর’৷ ফিলিস্তিনের ৪০ ভাগ স্নাতোকোত্তরই বেকার৷ যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি চাকুরি সংকট আছে এমন কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা বন্ধ করে দিচ্ছে৷ জোর দেয়া হচ্ছে গণিত আর প্রকৌশলে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
যে বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন বিশ্ব থেকে
আন-নাজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নাহের নাতসেহ৷ ফিলিস্তিনের অন্য বিজ্ঞানীদের মতো তিনিও একটা সময় পর্যন্ত বিদেশে থেকে ফিরে এসেছেন দেশে৷ তাঁর জন্ম জেরুজালেমে৷ কাজ করেছেন মিশরের কায়রো, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে৷ নাহের নাতসেহ জানান বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে তারা আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না৷ এমন কি নিরাপত্তার কারণে ইসরায়েলিদের আনা সম্ভব না৷
ছবি: DW/Z. Abbany
তবুও বড় স্বপ্ন
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আরবের শীর্ষ দুই ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে আন-নাজাহর পরিচালকরা৷ যদিও সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কয়েকগুণ কম বাজেট নিয়েই চলছেন তারা৷ তবে আন-নাজাহর কমপ্লেক্স কিন্তু বেশ আধুনিক আর দৃষ্টিনন্দন৷ যেমনটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ফিলিস্তিনের কাঁচা বাজার
এটি ফিলিস্তিনের একটি কাঁচা বাজার৷ কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ী আর বাসিন্দারা প্রায়ই ইসরায়েলি সৈন্যদের তল্লাশীর মধ্যে পড়েন বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
কানাফে বা কুনাফার স্বাদ
ফিলিস্তিনের একটি রেস্টুরেন্টের ছবি৷ সেখানে বেশ জনপ্রিয় কানাফে৷ যা কুনাফা নামেও পরিচিত৷ এটি মূলত এক ধরনের মিষ্টান্ন যা শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই সমান জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
অদৃশ্য সীমান্ত
ফিলিস্তিনের ব্যস্ত কোন বাজার বা পথ ধরে হাটতে গিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন ইসরাইলে৷ যেমন এই মার্কেটটি৷ এর এক পাশে ফিলিস্তিন অন্য পাশে ইসরায়েল৷ তবে ইসরায়েল অংশে ট্যাংক কিংবা ভারি যানবাহন নিয়ে সবসময় প্রহরায় থাকে সেনারা৷