সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে এক ইহুদি নারীর গল্প, যিনি ইহুদিদেরই ধরিয়ে দিতেন নাৎসি বাহিনীর কাছে৷ টাকিস ভ্যুর্গারের লেখা স্টেলা নামের উপন্যাসটি এ সপ্তাহে জার্মানিতে প্রকাশের পর শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
লেখক টাকিস ভ্যুর্গার একজন সাংবাদিক, যিনি বিভিন্ন সময়ে অনেকগুলো যুদ্ধ কভার করেছেন৷ তাঁর এই উপন্যাসের রিভিউ লিখতে গিয়ে ডি ভেল্ট পত্রিকার হান্নাহ ল্যুহমান বলেছেন, ‘‘আমাদের সামনে সাহিত্যের এক নতুন বিতর্ক চলে এসেছে৷’’
জানুয়ারির ১১ তারিখ এ উপন্যাস প্রকাশ হয় স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা হানসার ফেরলাগ থেকে৷ উপন্যাসে স্টেলা ক্যুবলারের গল্প তুলে ধরা হয়েছে৷ এই স্টেলা পরিচিত ছিলেন ‘ক্যাচার’ নামে, যার কাজ ছিল আত্মগোপনে থাকা ইহুদিদের হিটলারের গোপন পুলিশ গেস্টাপোর কাছে ধরিয়ে দেয়া৷
তীব্র সমালোচনা
এটি ভ্যুর্গারের লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস৷ নাৎসি বাহিনী নিয়ে এই পদকজয়ী সাংবাদিকের আগ্রহ দীর্ঘদিনের৷ স্টেলাকে নিয়ে এর আগে লেখা বইগুলোর তুলনায় এই উপন্যাস সমালোচকদের নজর কেড়েছে বেশি৷
উপন্যাস প্রকাশের দিনই একে ‘অবমাননাকর, অপমানকর ও অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে রিভিউ প্রকাশ করেছে স্যুডডয়চে সাইটুং৷ এছাড়া, প্রকাশক সব ধরনের ‘নৈতিক মানদণ্ড হারিয়েছেন’ বলেও সমালোচনা করা হয়েছে৷ লেখককেও শিক্ষা ও ইতিহাস বিষয়ে ‘অসচেতন’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷
উপন্যাসটিকে ‘বমি উদ্রেককারী’ বেল উল্লেখ করেছে ডি সাইট৷ এর মাধ্যমে হলোকাস্টের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগও করা হয়েছে৷
প্রকাশকের প্রতিবাদ
উপন্যাসের প্রকাশক সংস্থা হানসার ফেরলাগের সম্পাদক ও সংস্কৃতি সাংবাদিক ফ্লোরিয়ান কেসলার সামাজিক য়োগাযোগ মাধ্যমে এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন৷ ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘‘এই সমালোচনা সেই ১৯৪৫ সাল থেকেই চলে আসছে৷’’
বার্নহার্ড শ্লিঙ্কের উপন্যাস দ্য রিডারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে এই বইয়ের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ওঠে৷ কিন্তু কয়েক বছর পরই তা নাৎসি জার্মানি কেমন ছিল, সে ধারণা দিতে স্কুলে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো শুরু হয়৷
পাঠকই সিদ্ধান্ত নিক
ডি ভেল্টের হানাহ ল্যুহমান অবশ্য বলছেন, এই তীব্র সমালোচনায় তিনি বিস্মিত৷ সার্বিকভাবে উপন্যাসটির পক্ষে কথা বললেও, এমন একটা ইস্যু নিয়ে জার্মানদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশও করেন ল্যুহমান৷
তবে ল্যুহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, লেখক এখনই এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে যোগ দিতে চান না৷ বরং পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিতে চান সাহিত্যের বিচার৷ বইটি নিয়ে এরই মধ্যে পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে বইটি৷ নয়টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে লাইসেন্স৷ ইংরেজি ছাড়াও স্প্যানিশ, চাইনিজ ভাষাতেও প্রকাশ হতে যাচ্ছে উপন্যাসটি৷
পেট্রা লাম্বেক/এডিকে
২০১৭ সালের জুন মাসের ছবিঘরটি দেখুন..
হিটলার কে ছিলেন?
‘হিটলার কে ছিলেন’ প্রশ্নটি হ্যারমান প্যোল্কিং-এর বহুল পঠিত বইয়ের বিষয়৷ হিটলারের নিজের এবং তার সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন উদ্বৃতিও উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে৷ সেগুলোরই কয়েকটি থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP
শিশু অ্যাডলফ হিটলার (১৮৯০)
‘‘পরিবারের অন্য সবার চেয়ে সে ব্যতিক্রম ছিল৷’’ – মা ক্লারা হিটলারকে উদ্বৃত করে অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে এ কথা জানিয়েছিলেন তার ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট ক্যুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিন্সে ক্লাসের ছবি, ১৯০০/০১
‘‘সে নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিল, ভারসাম্যহীনও ছিল, তবে সহিংস ছিল না৷ অবশ্য অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল৷ আর সে কঠোর পরিশ্রমীও ছিল না’’ – বলেছেন হিটলারের ফরাসি শিক্ষক ড. এডওয়ার্ড হুয়েমার৷ (ছবিতে একেবারে উপরের সারির ডানদিকের কোণায় হিটলারকে দেখা যাচ্ছে৷)
ছবি: picture-alliance/akg-images
অ্যাডলফ হিটলারের নিজের পোট্রেট
‘‘আত্মীয়স্বজনরা তাকে এমন ফালতু মনে করতো, যে কিনা সব ধরনের কঠিন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতো,’’ অ্যাডলফ হিটলারের ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট কুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কর্পোরাল হিটলার
‘‘ইহুদিদের প্রতি হিটলারের তীব্র ঘৃণা কেন ছিল তার কারণ আমি কখনো প্রকাশ করিনি৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা হয়ত এতে সামান্য অবদান রেখেছিল,’’ লিস্ট রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট ফ্রিৎস ভিডারমান৷
ছবি: Getty Images
অ্যাডলফ হিটলার (১৯৩৩)
‘‘উচ্চশ্রেণির মানুষেরা হিটলারের কাছে ঘেঁষতে চেয়েছে৷ এ রকম পরিবর্তনশীল মানুষদের জন্য আমার দাদার এক জুতসই ফর্মুলা ছিল: আপনি তাদের চোখে থুতু ছিটাবেন আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা’’, জার্মান ইহুদি সাংবাদিক বেলা ফ্রম৷ (জানুয়ারি ২৯, ১৯৩২)
ছবি: Ullstein
প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের কাছ থেকে ক্ষমতা নিচ্ছেন চ্যান্সেলর হিটলার, ১৯৩৩
‘‘আমি ক্ষণিকের জন্যও ভুলিনি যে, নাৎসিরা শত্রু – আমার শত্রু এবং আমার প্রিয় সবার শত্রু৷ তবে আমি একটা ক্ষেত্রে ভুল করেছিলাম, তা হচ্ছে, তারা কতটা ভয়াবহ শত্রু হবে সেটা আন্দাজ করতে পারিনি৷’’ – সেবাস্তিয়ান হাফনার, সাংবাদিক৷
ছবি: ullstein bild
ব্যাইরুথে হিটলার (১৯৩৮)
‘‘আমি এটা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি যে, সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার আগে আমি হিটলারের যুদ্ধ চলাকালে অনারোগ্য রোগীদের ধ্বংস করে দেয়ার আকাঙ্খা সম্পর্কে জেনেছিলাম৷ তিনি বলেছিলেন তারা নাকি অপ্রয়োজনীয় ভক্ষক৷’’ – ফ্রিৎস ভিডারমান, ১৯৩৯ সালের ১৯ জানুয়ারি অবধি অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টির অ্যাডজুটেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ওবারসাল্সবার্গে হিটলার
‘‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স একটি সাধারণ যুদ্ধে জড়াবে না৷’’ ১৯৩৯ সালের ১৩ আগস্ট ওবারসাল্ফবার্গে আর্মি জেনারেলদের বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
আলবার্ট স্পিয়ার এবং অ্যাডলফ হিটলার, ১৯৩৮
‘‘যুদ্ধের পুরো সময়টাতে হিটলার কখনো বোমাবর্ষণের শিকার কোনো শহর দেখতে যাননি৷’’ আলবার্ট স্পেয়ার, রাইশ মিনিষ্টার অফ আর্মামেন্টস অ্যান্ড ওয়ার প্রোডাকশন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভোল্ফ’স লেয়ারে গুপ্তহত্যা চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর হিটলার, ১৯৪৪
‘‘আমি সেখানে হিটলারকে দেখেছি, যিনি কিনা আমার বিক্ষিপ্ত অভিব্যক্তির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন৷ তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘লিঙ্গে, কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল৷’’’ – অ্যাডলফ হিটলারের খানসামা হাইন্স লিঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance
অ্যাডলফ হিটলার এবং হ্যারমান গ্যোরিং, ১৯৪৪
‘‘আমি জানি, যুদ্ধে আমরা পরাজিত হয়েছি৷ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব পরিষ্কার৷ আমি এখন আমার মাথায় গুলি করতে চাই৷ [কিন্তু] আমরা আত্মসমর্পন করি না৷ কখনো না৷ আমরা হারতে পারি৷ কিন্তু নিজেদের সঙ্গে একটা দুনিয়া নিয়ে যাবো৷’’ ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে অ্যাডজুট্যান্ট নিকোলাউস ফন বেলো-কে বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Fine Art Images
সংবাদপত্রে হিটলারের মৃত্যু সংবাদ, ১৯৪৫
‘‘একজনের মনে হতে পারে, হিটলারের মৃত্যু এখন বরং অর্থহীন৷ তার আরো আগে মরা উচিত ছিল৷ আমি ভাবছি, কতজন মানুষ তিনি চড়চড় করে পুড়ছেন ভেবে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে৷’’ – স্কটিশ লেখক নাওমি মিচিসন৷