মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিদিন বিক্ষোভ হচ্ছে৷ বুধবার রেকর্ডসংখ্যক মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷ এদিকে, ইয়াঙ্গনে আরো সৈন্য মোতায়েন শুরুর খবরে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের ব়্যাপোটার কর্মকর্তা টম অ্যান্ড্রুস৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘‘অতীতে সৈন্য মোতায়েনের সময় গণহারে হত্যা, আটক ও গুমের ঘটনা ঘটেছে৷ একইসঙ্গে গণবিক্ষোভের পরিকল্পনা ও সৈন্য মোতায়ন শুরুর খবরে আমি শঙ্কিত৷''
অ্যান্ডুসের সঙ্গে একমত মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গেনার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, মিয়ানমারে ২১টি এথনিক সশস্ত্র গোষ্ঠী অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে৷ ফলে সংঘাতের আশঙ্কা অনেক বেশি৷''
ইয়াঙ্গনে প্রতিবাদকারীরা সামরিক যানের চলাচল ব্যাহত করতে রাস্তায় গাড়ি রেখে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন৷ তারা মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর দেয়া এক তথ্যে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ সেদিন শাসকগোষ্ঠীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন দাবি করেন, দেশটির পাঁচ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে চার কোটি মানুষ সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম সমর্থন করছে৷ এর প্রতিক্রিয়ায় খিন নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘তারা যা বলছে তা পুরোপুরি মিথ্যা... তারা বলছে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, কিন্তু এখানে জমায়েত হওয়া মানুষগুলোকে দেখুন৷''
অভ্যুত্থানের দিন অং সান সু চিকে আটক করা হয়৷ তার বিরুদ্ধে ন্যাচারাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন ভঙ্গ ও অবৈধভাবে ছয়টি ওয়াকিটকি রেডিও আমদানির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত শুনানিতে পরবর্তী শুনানির দিন ১ মার্চ ধার্য করা হয়েছে৷
১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিদিন মিয়ানমারে বিক্ষোভ হচ্ছে৷
মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অভিনব বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর মিয়ানমারজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চরম রূপ নিয়েছে৷ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন চিকিৎসক, শিক্ষকসহ সব স্তরের মানুষ৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসক আর নার্সরা প্রথম সারিতে
সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সরা ধর্মঘটের ডাক দেন৷ অন্যদেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তারা৷
ছবি: REUTERS
সব শ্রেণি পেশার মানুষ
অন্যদিকে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’৷ শনিবার রাত থেকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
আন্দোলনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংহতি
বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজপথে নেমেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে ভিক্ষুদের সংগঠন ‘সংঘ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ইয়াঙ্গুন বা মান্দালয়ের মতো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন৷ শান রাজ্যের মতো আদিবাসী অঞ্চলগুলোও বাদ যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
তিন আঙুলের অভিবাদন
হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হাঙ্গার গেমস যারা দেখেছেন তারা এই প্রতীকের সাথে পরিচিত৷ থাইল্যান্ডে বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ‘থ্রি ফিঙ্গার গ্রিটিংস’ ব্যবহার করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা৷ মিয়ানমারেও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিললো৷
ছবি: REUTERS
বারান্দা থেকে সংহতি
যারা রাজপথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পানি আর খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন, বারান্দায় দাঁড়িয়েও সংহতি জানিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
সু চি’র মুক্তি
১ লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডি’র অনেক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী৷ আন্দোলনকারীরা সবার মুক্তি দাবি করছেন৷
ছবি: Sem Van Der Wal/ANP/AFP/Getty Images
অভিনব প্রতিবাদ
বিক্ষোভ দমনে সোমবার রাতে সামরিক জান্তা ডিক্রি জারি করেছে৷ রাজধানীসহ প্রধান তিনটি শহরে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ৷ রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অনেকে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসেন দায়িত্বরত পুলিশের দিকে৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি
রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সামরিক জান্তা বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: REUTERS
সেনা সমর্থকরাও রাজপথে
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সমর্থকরা৷ সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি দেশজুড়ে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করেছে৷
ছবি: Thet Aung/AFP/Getty Images
৮৮’র অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ
বর্তমান বিক্ষোভ যে রূপ নিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের সেনা অভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতা হাতে নেয় সেনাবাহিনী৷ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, আটক করা হয়েছিল অনেককে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষার্থী৷
ছবি: ullstein bild-Heritage Images/Alain Evrard
11 ছবি1 | 11
এদিকে, টানা তৃতীয় রাতের মতো মঙ্গলবার রাতেও ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সামরিক বাহিনী৷ ফলে স্থানীয় সময় রাত ১টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল৷ এছাড়া তারা এমন একটি আইনের খসড়া তৈরি করছে বলে জানা গেছে, যেটা অনেক অনলাইন কার্যক্রমকে অপরাধ বলে গণ্য করবে৷