সংসদে অভিসংশনের মাধ্যমে অপসারিত প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ রবিবারই কিয়েভ ছাড়েন৷ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন ওলেকসান্ডার তুর্চিনভ৷ ইউক্রেনে নতুন নির্বাচন হবে আগামী ২৫শে মে৷
বিজ্ঞাপন
গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ অবশেষে স্তিমিত হয়েছে৷ ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর, সংসদে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে অভিসংশন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়৷ প্রস্তাবটি পাশ হলে ইয়ানুকোভিচ রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের দিকে চলে যান৷ সেখান থেকে তিনি দেশ ত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন বলেও বার্তাসংস্থাগুলো জানিয়েছে৷ তবে সীমান্তরক্ষীদের বাধার মুখে তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ-র দেয়া খবর অনুযায়ী, ইউক্রেন পুলিশ সদ্য ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে৷
ইউক্রেনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইউক্রেনে৷ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, রাস্তায় নেমে আসে বিরোধী দলের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক৷
ছবি: Reuters
ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য লড়াই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে সরকার অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে ইউক্রেনে চলছে তুমুল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে সরকারের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে এসেছে রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সড়ক অবরোধ
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে কার্যালয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কিয়েভের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রচণ্ড শীতে রাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷
ছবি: Reuters
ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে তাঁবুর শহর
কিয়েভের ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে এখন শত শত তাঁবু৷ শীতের কষ্ট সহ্য করে সেখানেই থাকছেন অনেকে৷ সারি সারি তাঁবু নয় বছর আগের কমলা বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়৷সেবার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা এবারও শেষ দেখেই ঘরে ফিরতে চান৷
ছবি: DW/A. Sawizki
চা, কফি আর ইন্টারনেট
বিক্ষোভকারীদের সুবিধার্থে ক্যাফে আর বারগুলো থাকছে খোলা৷ শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলেই তাঁরা পান করতে পারছেন চা, কফি কিংবা অন্য কোনো পানীয়৷ কোনো কোনো ক্যাফে আর বার-এ বিক্ষাভকারীদের থাকা এবং ওয়াইফাই-এ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Sawizki
গীর্জায় আশ্রয়
সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর সমাবেশ হয়েছিল কিয়েভের সেইন্ট মাইকেল’স ক্যাথেড্রালের সামনে৷ সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা৷ অন্য গীর্জাগুলোও বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি আগ্রাসী?
বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে এখন ব্যাপক উত্তেজনা৷ পুলিশ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মুক্ত করার চেষ্টা করায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ সপ্তাহান্তের এ সংঘর্ষে অনেকে আহত হন৷
ছবি: Reuters
‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’
পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানাতে একসময় বিক্ষোভকারীরা হাতে তুলে নেন ব্যানার, সেখানে লেখা ছিল, ‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের পুতে ফেলবে৷’
ছবি: DW/L. Grischko
ন্যাটোর সমালোচনা
বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ন্যাটো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আবার সেই বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ন্যাটোর বিবৃতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল৷ লাভরভ মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা না বুঝে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: GENYA SAVILOV/AFP/Getty Images
সরকারের অনাস্থা ভোট জয়
মিকোলা আজারভ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেলেও সংসদে বিরোধী দলের তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে তারা জয়ী হয়েছে৷ বিরোধী দল ২২৬ ভোট পেলে বিপদ হতো, কিন্তু সব মিলিয়ে ১৮৬ ভোট পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে সরকার৷
ছবি: Reuters
শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
কাউন্সিল অফ ইউরোপ, অর্থাৎ ইউরোপীয় পরিষদ এখন ইউক্রেনের ইউরোপপন্থি বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এদিকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন ওলেকসান্ডার তুর্চিনভ৷ তবে সরকার গঠনের আগেই দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনেরও উদ্যোগ নিতে হচ্ছে৷ দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের কারণে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজতে সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসেছে৷ ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে৷ ইইউ-র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন সোমবার ইউক্রেন সফরে আসছেন৷ তাঁর এ সফরের উদ্দেশ্যও, পূর্ব ইউরোপের সংকটপূর্ণ দেশটিকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা৷
রবিবার ইউক্রনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট তুর্চিনভ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ এ সময় ম্যার্কেল ইউক্রেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগণের আস্থাভাজন এবং আঞ্চলিক সুসম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম সরকার গঠনের ওপর জোর দেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি অথবা রাশিয়ার নেতৃত্বে শুল্ক ইউনিয়ন – এই দুই বিকল্পের মধ্যে রাশিয়ার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে গত নভেম্বরে সংকটে পড়েছিল ইউক্রেন সরকার৷ সরকারের এ সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধীরা৷ লাগাতার বিক্ষৈাভের মুখে একে একে ভেঙে পড়ে সরকারের সব প্রতিরোধ৷ বিক্ষোভ থামাতে গত সপ্তাহে ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কয়ারে হামলা চালায় পুলিশ৷ হামলায় এ পর্যন্ত ৮০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷