প্রায় তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনের ৫০ লাখেরও বেশি শিশু দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রয়েছে বলে তথ্য সেভ দ্য চিলড্রেনের৷ বন্দর শহর হোদাইদাতে আক্রমণে খাদ্য, জ্বালানি ও ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে৷
সৌদি-সমর্থিত আক্রমণে লোহিত সাগরের পাড়ে অবস্থিত শহরটির বন্দর যে-কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন ইয়েমেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তামের কিরোলোস বলছেন, ‘‘সরবরাহ সামান্য মাত্রায় ব্যাহত হলেও এরই মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা লাখ লাখ শিশু মৃত্যুর হুমকিতে পড়তে পারে৷''
দেশটিতে পাঠানো খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তার ৮০ শতাংশই আসে ২০১৪ সাল থেকে হুতি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা হোদাইদা দিয়ে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশজুড়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার দুই মাস পর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে নতুন করে হোদাইদায় যৌথ হামলা শুরু করে ইয়েমেন সেনাবাহিনী, সরকারপন্থি মিলিশিয়া এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট৷
তাদের জীবন বাঁচে ডাস্টবিনের খাবার খেয়ে
যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ গৃহহীন৷ মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের৷ অনেকেরই সম্বল এখন ডাস্টবিনের খাবার৷ তেমনই এক পরিবারের কথা জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/A. Zeyad
মোহাম্মেদ রুজাইকের পরিবার
ইয়েমেনের রুজাইক পরিবার প্রাণভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে লোহিত সাগরের তীরের হোদেইয়া বন্দরের কাছের একটি জায়গায়৷ আপাতত প্রাণ বাঁচাতে পারলেরও প্রায়ই সবার ভাগ্যে খাবার জোটে না৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আয়ের পথ নেই
২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে৷ তবে হুতি বিদ্রোহীদের উৎখাত করে প্রেসিডেন্ট হাদিকে ক্ষমতায় ফেরাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী হামলা শুরু করার পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে৷ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত৷ যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের অনেকেরই রুজি-রোজগার বন্ধ৷ অনেকেই প্রথমে রাস্তাঘাট থেকে প্লাস্টিকের বোতল বা ধাতব ক্যান বিক্রি করে সামান্য কিছু আয় করত৷ সে পথও ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
বাজার মন্দা
আগে প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বোতল বা ধাতব ক্যান ৫০ ইয়েমেনি রিয়ালে বিক্রি করা যেত৷ এখন আর সেই দাম পাওয়া যায় না৷ কোনো দোকানেই এখন আর প্রতি কেজি প্লাস্টিক বা ধাতব বস্তু ১০ রিয়ালের বেশি দামে বিক্রি করা যায় না৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
ভরসা এখন আবর্জনার স্তূপ
ঘরে খাবার নেই, টাকাও নেই৷ তাহলে উপায়? উপায় একটা বের করেছে রুজাইক পরিবার৷ আগে বোতল আর ক্যান কুড়াতো ডাস্টবিন থেকে৷ এখন তারা খাবারও কুড়ায়৷ হ্যাঁ, অনেকদিন ডাস্টবিন থেকে কুড়ানো খাবারেই কোনোরকমে ক্ষুধা মেটায় রুজাইক পরিবার৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
কী পায় ডাস্টবিনে?
১১ বছর বয়সি আয়ুব মোহাম্মেদ রুজাইক বললো, ‘‘অন্যরা যা ফেলে দেয়, সেই খাবার কুড়িয়েই আমরা খাই, পান করি৷ আমরা মাছ, মাংস, আলু, পেঁয়াজ, ময়দা ইত্যাদি কুড়িয়ে নিয়ে রান্না করে খাই৷’’
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া
রুজাইক পরিবারের প্রধান মোহাম্মেদ রুজায়েক বললেন, ‘‘এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে আমরা চাই তারা যুদ্ধটা বন্ধ করুক৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা – যুদ্ধ বন্ধ হোক৷’’
ছবি: Reuters/A. Zeyad
6 ছবি1 | 6
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে, ছয় লাখ বাসিন্দার এই শহরে আক্রমণ করা হলে দেশজুড়ে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে৷
নেই কান্নার শক্তিও
সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বলছেন, ‘‘পরবর্তী খাবার কখন পাওয়া যাবে তা নিয়ে সবসময়ই অনিশ্চয়তায় থাকে দেশটির লাখ লাখ শিশু৷ আমি একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, যেখানে শিশুরা ক্ষুধায় এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তাঁরা কাঁদতেও পারছিল না৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধ ইয়েমেনের একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ তাঁরা বোমা থেকে শুরু করে ক্ষুধা, এমনকি কলের মতো রোগের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছে৷'' ইয়েমেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ হয়েছেন বাস্তুচ্যূত৷ আরো হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন অপুষ্টিতে ও রোগে ভুগে৷
২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলের দখল নিয়ে নেয়, নিয়ন্ত্রণে আসে রাজধানী সানার কর্তৃত্বও৷ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে ২০১৫ সালে ইয়েমেন সংকটে হস্তক্ষেপ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব জোট৷
হোদাইদা বন্দর ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশ ইরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ সৌদি আরবের৷ তবে ইরান এবং হুতি বিদ্রোহীরা এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে৷
অন্তত হাসতে পারছে মেয়েটি
বয়স তার ১৮৷ কিন্তু ওজন মাত্র ১৬ কেজি৷ তাও গত দেড় মাসের চিকিৎসায় ওজন পাঁচ কেজি বেড়েছে বলে৷ ছবিঘরে থাকছে সাঈদা আহমেদ বাঘিলির কথা৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
অবশেষে মুখে হাসি
গত অক্টোবরে সাঈদা আহমেদ বাঘিলিকে যখন ইয়েমেনের হোডাইডা শহরের আল থাওরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন ১৮ বছরের মেয়েটির ওজন ছিল মাত্র ১১ কেজি৷ সহজে চোখ খোলা রাখতে পারত না সে৷ দাঁড়াতেও পারত না৷ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন অন্তত সে হাসতে পারছে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
তবে ঐটুকুই
হ্যাঁ৷ সে যে হাসতে পারছে সেটুকুই উন্নতি বলা হয়৷ কারণ এখনও তার শরীর বেশ খারাপ৷ হাড়গোড়ের অবস্থাও ভঙ্গুর৷ অবস্থা যে কোনোদিন স্বাভাবিক হতে পারে, সে আশা করছেন না ডাক্তাররা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আগে যেমন ছিল
প্রথম দু’টি ছবি আর ‘ক্যাপশন’ পড়ার পর যাঁরা বাঘিলি আগে দেখতে কেমন ছিল জানতে চান তাদের জন্য এই ছবি৷ অক্টোবরে তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখনকার ছবি এটি৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
শুরু পাঁচ বছর আগে
পাঁচ বছর আগে প্রথম বাঘিলির মধ্যে পুষ্টিহীনতার লক্ষণ দেখা দেয়৷ গলায় ব্যথার কারণে সে শক্তি কিছু খেতে পারে না৷ ফলে শুধু তরল জাতীয় খাবার খেতে হচ্ছে তাকে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
গৃহযুদ্ধ সমস্যা বাড়িয়েছে
ইয়েমেনে গত প্রায় ১৯ মাস ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট ও ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি মুভমেন্টের সদস্যদের মধ্যে এই যুদ্ধ চলছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বাঘিলির অভিভাবকরা পর্যাপ্ত অর্থ আয় করতে পারেননি বলে এই সময়টায় তাঁর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি৷ ছবিতে বাঘিলির বাবাকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
অবশেষে
বাঘিলির খালা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, কয়েকজন দানশীল ব্যক্তি অর্থ সহায়তা দেয়ায় বাঘিলিকে ২২ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ ছবিটি সেই সময় তোলা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আগের কথা
অসুস্থ হওয়ার আগে ভেড়া পালতো বাঘিলি৷ হোডাইডা থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি গ্রামে তারা বাস করে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
খাদ্য সংকট
জাতিসংঘ বলছে, গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে৷ বর্তমানে দেশটির অর্ধেকেরও (১৪ মিলিয়ন) বেশি নাগরিক খাদ্য সংকটে রয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Yahya Arhab
অপুষ্টি
ইউনিসেফ-এর হিসেবে সে দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে৷ এর মধ্যে তিন লক্ষ ৭০ হাজার শিশুর মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা এত বেশি, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল করে দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/B. Stirton
প্রাণহানি
গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ অবশ্য জাতিসংঘের হিসেবে সংখ্যাটি সাত হাজারের কাছাকাছি৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
যুদ্ধরত দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিভিন্ন পশ্চিমা রাষ্ট্রের সরকার৷