রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও বিমান হামলা। হামলায় আটকে জাতিসংঘের মিশন।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা কেবলমাত্র হুতি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে। তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতেই এই হামলা।
ইসরায়েলের সেনা বাহিনী জানিয়েছে, তারা সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পার্শ্ববর্তী আল-দাইলামি বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছে। ঘটনার পর হুতি আল মাসিরা টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে। তার মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে সানা বিমানবন্দরে। ১১ জন গুরুতরভাবে আহত। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইরানের ‘অ্যাক্সিস অফ রেজিস্টেন্স’ কী?
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করলে আশেপাশের কয়েকটি দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করে৷ এসব গোষ্ঠী ইরানের সহায়তাপুষ্ট বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ৷
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
‘অ্যাক্সিস অফ রেজিস্টেন্স’
এটি কয়েকটি ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি নেটওয়ার্ক, যেটি দিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তার শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে৷ ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের পর এই নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে৷ গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই নেটওয়ার্কের কয়েকটি গোষ্ঠী ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করেছে৷
ছবি: Morteza Nikoubazl/NurPhoto/picture alliance
ইসলামিক রেজিস্টেন্স ইন ইরাক
কয়েকটি সশস্ত্র কট্টরপন্থি শিয়া মুসলিম গোষ্ঠীর জোট এটি৷ ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর এই জোট সিরিয়া ও ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে দেড়শোর বেশি হামলা চালিয়েছে৷ ২৮ জানুয়ারি জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত মার্কিন এক ঘাঁটিতে হামলার জন্য ইসলামিক রেজিস্টেন্স ইন ইরাককে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন৷
ছবি: Planet Labs PBC/AP/dpa/picture alliance
ইরান সংশ্লিষ্টতা
গত কয়েকমাসে মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা করা ইরাকি সশস্ত্র শিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে আছে কাতাইব হেজবোল্লাহ ও নুজাবা গ্রুপ৷ ইরানের এলিট রেভুলুশনারি গার্ডসের সঙ্গে এরা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত৷ তাদের কাছে ড্রোন, রকেট ও ব্যালিস্টিক মিসাইল আছে৷ এসব গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: dpa/picture alliance
হুতি
রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে হুতি৷ ৩১ অক্টোবর সানা থেকে ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও মিসাইল ছুড়ে যুদ্ধে প্রবেশ করে তারা৷ এরপর নভেম্বরে লোহিত সাগর দিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা ইসরায়েলের বন্দরের দিকে যাওয়া জাহাজে হামলা শুরু করে হুতিরা৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস হুতিদের মিসাইল ও ড্রোন হামলার পরিকল্পনায় সহায়তা করছে ইরানের রেভুলুশনারি গার্ড৷ ইরান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে৷
ছবি: Houthi Military Media/REUTERS
হেজবোল্লাহ
৮ অক্টোবর থেকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে প্রায় প্রতিদিন হামলা করছে লেবাননের হেজবোল্লাহ গ্রুপ৷ ১৯৮২ সালে ইরানের রেভুলুশনারি গার্ড হেজবোল্লাহ প্রতিষ্ঠা করে৷ এরপর থেকে এটি ঐ অঞ্চলে তেহরান সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীর জন্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে৷ লেবানন রাষ্ট্রের চেয়েও হেজবোল্লাহ শক্তিশালী বলে মনে করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র হেজবোল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে৷
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
5 ছবি1 | 5
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস গেব্রিয়েসুস জানিয়েছন, তাদের কয়েকজন কর্মী ইয়েমেনে আটকেপড়েছিলেন। তাদের উদ্ধার করে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘের বিমান সানা বিমানবন্দর থেকে উড়তেই পারেনি। তার আগেই ইসরায়েল সেখানে আক্রমণ চালায়। ঘটনায় একজন জাতিসংঘের কর্মীও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আপাতত বিমানটি আটকে পড়েছে কারণ, হামলায় রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘের মিশন বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে
ইসরায়েলের সেনা বাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেনে হুতি অধ্যুষিত অঞ্চলে বৃহস্পতিবার তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর সংগ্রহ করেই এই আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত পশ্চিমের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে আক্রমণ চালানো হয়েছে। ইয়েমেনের যথেষ্ট ভিতরেও প্রবেশ করা হয়েছে।
হুতিরা সানা বিমানবন্দর ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহ করতো বলে ইসরায়েলের অভিযোগ। সে কারণেই সেখানে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এছাড়াও হুতি বিদ্যুৎকেন্দ্রেও আক্রমণ চালানো হয়েছে। একাধিক হুতি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমা ফেলা হয়েছে বলে ইসরায়েলের দাবি।
যেখানে আক্রমণ করা হয়েছে, সেখান থেকে ইরানকেও অস্ত্র পাঠানো হতো বলে অভিযোগ। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও সেখানে যেতেন বলে অভিযোগ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণ বন্ধ করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ইরানকেও জবাব দেওয়া হলো বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।