ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা একের পর এক নারী হারিয়ে যাচ্ছেন৷ পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু বলা হচ্ছে, তাঁরা বেড়াতে গেছেন৷ কিন্তু কোথায় গেছেন বা কবে ফিরবেন সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ৷
বিজ্ঞাপন
সাহসী নারী, যারা শাসকদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ভয় পান না, তাদের তো বটেই, এমনকি জনগণের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলা নারীরাও হুতিদের দমন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন৷
সামেরা আল-হুরির অভিজ্ঞতা
রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল হুতি বিদ্রোহীদের দখলে৷ তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা একদিন হঠাৎ করে রাজধানীতে সামেরা আল-হুরিদের বাড়িতে হানা দেয় এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়৷
তারা সামেরাকে একটি স্কুলের বেজমেন্টে নিয়ে যায়৷ সেখানে আরো কয়েকজন নারীকে আগে থেকেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হতো, দেয়া হতো ইলেক্ট্রিক শক৷ চলতো আরো নানা শারীরিক নির্যাতন৷ তাকে মৃত্যুদণ্ডও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একেবারে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়৷
৩৩ বছর বয়সি সামেরা আল-হুরিকে তিন মাস হুতি বিদ্রোহীরা বন্দি করে রাখে৷ পরে ক্যামেরার সামনে তাকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়৷ ইয়েমেনে পতিতাবৃত্তি আইনের চোখে অপরাধ৷
সংবাদ সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামেরা আল-হুরি নিজের ওই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন৷ জানান, রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তাইজ স্ট্রিটে বিভিন্ন বাড়ি ও স্কুলে নারীদের বন্দি করে রাখার গোপন সেলগুলোর কথা৷
কেমন আছেন এশিয়ার নারীরা?
এশিয়ার দেশগুলো গত কয়েক বছরে নারী অধিকার সূচকে উন্নতি করলেও, অনেক দেশের নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ ছবিঘরে দেখে নিন, এশিয়ার দেশগুলোতে নারী অধিকারের তুলনামূলক চিত্র৷
ছবি: NDR
আফগানিস্তান
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পতন ঘটানোর পর দেশটিতে নারী অধিকার বিষয়ে বেশ অগ্রগতি দেখা গেছে৷ তবে সম্প্রতি আফগান সরকারের সাথে তালেবানদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় দেশটিতে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আবারও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/R. Conway
ইরান
দেশটির নারী ফুটবল দল গঠনের বিষয়টি দেখে বোঝা যায় যে, ইরানে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ তবে সমাজের সকল স্তরে নারীদের সমানাধিকার রক্ষায় এখনো সংগ্রাম করতে হচ্ছে মানবাধিকার কর্মীদের৷ নাসরিন সুটুডেহ নামের এক নারী আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব প্রথা বাতিলের বিষয়ে লড়াই করছিলেন৷ সম্প্রতি দেশটির আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়৷
ছবি: Pana.ir
বাংলাদেশ
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, নারী অধিকার সূচকে ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে ভালো ছিল৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
পাকিস্তান
দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ছবিতে উজমা নাওয়াজ নামে পাকিস্তানের প্রথম নারী গাড়ি-কারিগরকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.S. Mirza
ভারত
নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনেকটাই এগিয়েছে ভারত৷ সম্প্রতি নারীদের রাস্তায় বাইক চালানোর বিষয়টি দেখে দেশটিতে নারীদের অবস্থার বিষয়ে ধারণা পাওয়া যেতে পারে৷ তবে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে অনেক নারীকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ সম্প্রতি নারীরা মি’টু আন্দোলনের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
ইন্দোনেশিয়া
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইন্দোনেশিয়া গত কয়েক বছরে বেশ অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনো নারীদেরকে নিপীড়নমূলক শরিয়া আইনের মুখোমুখি হতে হয়৷ যেমন, দেশটির আচেহ প্রদেশ নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান আইন প্রণয়ন করেছে৷
ছবি: Imago/C. Ditsch
শ্রীলংকা
এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় নারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে৷
ছবি: Imago/Photothek
চীন
দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুফল ভোগ করছে নারীরা৷ তবে দেশটির পুরুষদের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনও সমান উপস্থিতি নেই নারীদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
8 ছবি1 | 8
বলেন, ‘‘নানা শারীরিক নির্যাতনের পাশপাশি নারীদের ধর্ষণও করা হয়৷ সেখানে অনেকের অভিজ্ঞতা আমার চেয়েও খারাপ৷’’
২০১৯ সালের জুলাই মাসে কালাশনিকভ হাতে একদল মুখোশ পরা কর্মকর্তা সামেরাকে তুলে নিয়ে যায়৷ তিনি বলেন, "তাদের আয়োজন দেখে মনে হচ্ছিল আমি ওসামা বিন লাদেন৷ আমার অপরাধ, আমি তাদেরকে আমার সহযোদ্ধা মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়ার এবং গোয়েন্দাগিরি করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম৷”
সামেরাকে তাইজ স্ট্রিটের পরিত্যক্ত স্কুল দার আল-হিলাল-এ বন্দি করে রাখা হয়েছিল৷ তার সঙ্গে সেখানে দেশটির পরিচিত কবি বারদিস আসাইয়াঘিসহ আরো ১২০জন নারী বন্দি ছিলেন৷
তিনি বলেন, ‘‘বন্দি নারীদের মধ্যে স্কুলের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, এমনকি কিশোরীরাও ছিল৷ তারা আমার মাথা এমনভাবে টেবিলে ঠুকে দিতো যে, মুক্তির পর আমার চোখে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে৷’’
সানার অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান সুলতান জাবিন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেন জানিয়ে সামেরা আল-হুরি আরো বলেন, ‘‘জাবিন দেখতে সুন্দর মেয়েদের স্কুলের বাইরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতেন৷’’
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও জাবিনের গোপন একটি বন্দিশালা থেকে দৌড়ে বের হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন৷ সেখানে মেয়েদের ধর্ষণ করা হতো৷
নেতৃত্বে নারী
দীর্ঘ ঐতিহ্য ও নানা সামাজিক সুরক্ষা নীতির কারণে আগে ইয়েমেনে নারীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিপীড়ন করা যেতো না৷ কিন্তু গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ওই সব নিয়মের বালাই এখন আর নেই৷
গত ছয় বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে দেশটির অনেক পুরুষ হয় মারা গেছেন বা জেলে রয়েছেন৷ ফলে রক্ষণশীলতা ভেঙে নারীরা এখন রাজনীতিতে আসতে শুরু করেছেন৷
অনেক সময় নারীরা বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করছেন, মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ আন্তর্জাতিক নানা সংগঠনে কাজ করছেন, এমনকি দেশে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগেও অংশ নিচ্ছেন৷
এমন একজন রাশা জারহুম৷ ‘পিস ট্র্যাক ইনিশিয়েটিভ’ এর প্রতিষ্ঠাতা এই নারী বলেন, ‘‘ইয়েমেনের নারীদের জন্য এটা সবচেয়ে অন্ধকার সময়৷ এক সময় এমনকি ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো নারীকে আটকাতে পারতেন না৷ আটকালে তা লজ্জার বলে গণ্য হতো৷’’
জার্মান নারীরা ১০০ বছরেও সমান অধিকার পাননি
১০০ বছর আগে জার্মানিতে নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছেন, কিন্তু সমান অধিকার পাননি৷ গত বছর এক লাখেরও বেশি নারী তাঁদের পার্টনার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন৷ জীবনও দিতে হয়েছে বহু নারীকে৷ নারী-পুরুষের বৈষম্যের কিছু নমুনা থাকছে৷
ছবি: Imago/M. Heine
পারিবারিক সহিংসতা
গত বছর জার্মানিতে মোট ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন তাঁদের সাবেক পার্টনার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন৷ আর তাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৬৫জনই ছিলেন নারী৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৪৭ জনকে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে৷ অথচ দেশটিতে নারীদের ভোটাধিকার পাওয়ার ১০০ বছর পূর্ণ হলো গত ৩০ নভেম্বর৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski
স্কুল এবং প্রশিক্ষণ
যদিও অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে, তারপরও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি এখনো৷ এক হিসেব বলছে, জার্মানিতে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে শতকরা ৪৫.১% ছেলে, আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা শতকরা ৭২. ৫%৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Lubenow
হাই স্কুল গ্যাজুয়েট
নর্থরাইন ওয়েস্ট ফেলিয়া রাজ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ ছেলে আবিট্যুর বা হাই স্কুল গ্যাজুয়েট করে৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার শতকরা ৫৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
উচ্চশিক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে শতকরা ২৭ ভাগ ছেলে৷ এখানে মেয়েরা শতকরা ৩২ ভাগ,অর্থাৎ উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/apops
বেতনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য
নারী এবং পুরুষ একই কাজ করলেও পুরুষকর্মীকে নারীর চেয়ে শতকরা ২১ ভাগ বেশি বেতন দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/imageBroker/S. Klein
‘বস’ কিন্তু পুরুষ
জার্মানিতে শতকরা ৪৬ ভাগ নারীই কিন্তু চাকরিজীবী৷ তবে লিডিং পজিশন বা ‘বস’ হওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকেন৷ এ ক্ষেত্রে লাটভিয়ার নারীরা এক নম্বরে৷ সেখানে শতকরা ৪৪.৩ ভাগ লিডিং পজিশনে নারী৷ সুইডেন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে৷ওই তালিকায় জার্মানি রয়েছে ৯ নম্বরে৷ এ দেশের কর্মক্ষেত্রে শতকরা ২৯.৩ ভাগ নেতৃত্বস্থানীয় পদে রয়েছে নারী৷
ছবি: Fotolia
সমঅধিকার
অনেক রাজনীতিকই সমঅধিকার নিয়ে কথা বলেন, তবে বাস্তব পরিস্থিতি কি খুব ভালো? চাকরি, জীবনসঙ্গী, সেনাবাহিনী এবং সিভিল সুরক্ষার মতো নানা ক্ষেত্রে নারীর আইনি অধিকার থাকলেও জার্মান নারীরা এখনো তাঁদের পূর্ণ অধিকার চর্চার সুযোগ পায়নি৷
ছবি: Residenztheater/T. Dashuber
7 ছবি1 | 7
অথচ এখন এক সানাতেই ২০০ থেকে ৩৫০ জন নারীকে জিজ্ঞাবাদের নামে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার৷ অন্যান্য প্রদেশের প্রকৃত অবস্থা বা সংখ্যা জানা আরো কঠিন৷
উইমেন ফর পিস ইন ইয়েমেন কোয়ালিশন- এর প্রধান নূরা আল-জারউই বলেন, রাজধানীর দক্ষিণে ধামার প্রদেশে আরো শতাধিক নারীকে বন্দি করা হয়েছে৷
হুতি বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া নারীদের জন্য মিশরের কায়রোতে একটি আন্তর্জাতিক সাপোর্ট গ্রুপ পরিচালনা করেন আল-জারউই৷ তিনি ৩৩ জন নারীর কথা জানান, যারা হুতি বন্দিশালায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে আটজন প্রচণ্ড নির্যাতনে প্রায় মরতে বসেছিলেন৷
এপির সাংবাদিকরা কায়রোতে এমন ছয়জন নারীর দেখা পেয়েছেন, যারা হুতি বন্দিশালা থেকে মিশরের কায়রো শহরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন৷
পরিবার পাশে দাঁড়ায় না
কায়রোতে পালিয়ে যাওয়া নারীদের একজন ইতিহাসের এক সাবেক শিক্ষিকা৷ ইয়েমেনে থাকা পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না৷ তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সানার কাছেই কোনো একটা বাড়িতে তাকে রাখা হয়েছিল৷তার সঙ্গে ওই বাড়িতে আরো প্রায় ৪০ জন নারী বন্দি ছিলেন৷
‘‘রাতের বেলা আমি শুধু কুকুরের ডাক শুনতে পেতাম৷ মনে হতো এত দূরে আছি, যেন পৃথিবীতেই নেই৷
‘‘একবার আমার পায়ের নখ উপড়ে নেওয়া হয়েছিল৷ কর্মকর্তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে৷ ধর্ষণের সময় নারী কারারক্ষীরা আমাকে চেপে ধরে রেখেছিল৷’’
২০১৮ সালের মার্চে তাঁকে একটি ফ্লাইওভারের নীচে ফেলে যাওয়া হয়৷ লজ্জায় তাঁর পরিবার তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়৷
‘‘আমার পরিবার মনে করে, যেহেতু আমি বিক্ষোভ করতে বাইরে গেছি, তাই এটা আমার পাওনা ছিল৷ আমার বিরুদ্ধেও পতিতাবৃত্তির অভিযোগ দায়ের করা হয়৷’’
হুতি সরকারের অস্বীকৃতি
তবে হুতি সরকারের মানবাধিকারমন্ত্রী রাদিয়া আব্দুল্লাহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, "যদি এসব অভিযোগ সত্য হয় তবে আমরা এ সমস্যার সমাধান করবো৷’’
ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশ
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
সাউথ আফ্রিকা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reuters
বোতসোয়ানা
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe
লেসোথো
দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Stark
সোয়াজিল্যান্ড
সোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
বারমুডা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmons
সুইডেন
ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tamboly
সুরিনাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troon
কোস্টা রিকা
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulate
নিকারাগুয়া
মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Ocon
গ্রেনাডা
ক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara
অন্যান্য
১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
11 ছবি1 | 11
হুতি মন্ত্রিসভার দুই নারী মন্ত্রীর একজন তিনি৷ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, পতিতাবৃত্তি দমন অভিযানে কয়েকটি ক্যাফে, অ্যাপার্টমেন্ট এবং নারীদের সমাবেশ থেকে কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বলেন, "তারা সমাজকে অপরাধগ্রস্ত করেছে এবং শত্রুপক্ষের হয়ে কাজ করছে৷’’
২০১৭ সালের শেষ দিকে হুতিরা তাদের এক সময়ের মিত্র সাবেক শাসক আলি আব্দুল্লাহ সালেহকে হত্যা করে৷ সালেহর মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ওই সময় নারীরা কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল৷ তারপর থেকেই মূলত নারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দমন অভিযান শুরু হয়৷
আল-জারউই বলেন, ‘‘প্রথমে তারা বিরোধীদলের নেতাদের, তারপর বিক্ষোভকারীদের এবং এখন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যে কোনো নারীকে আটক করতে শুরু করেছে৷’’
আরেক নারীর অভিযোগ, তাকে ট্যাক্সি থেকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচুর মারধর করা হয়৷ লন্ডন ভিত্তিক একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে সানা পুলিশ স্টেশনে কয়েক সপ্তাহ আটকে রাখা হয় বলে দাবি করেন তিনি৷
৪৮ বছরের কম্পিউটার শিক্ষিকা বলেন, ১৮ জন অস্ত্রধারী তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে বাড়ির সবাইকে পেটায় এবং তাকে যৌন নির্যাতন করে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি রাজনীতি করি না৷ কিন্তু সরকার মাসের পর মাস বেতন দিচ্ছে না- এ কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম৷ তাতেই আমার ও পরিবারের উপর এমন নির্যাতন নেমে আসে৷’’
ওই ঘটনার পর পরিবার নিয়ে মিশরে পালিয়ে গেছেন তিনি৷
ইয়েমেন থেকে কায়রোতে পালিয়ে যাওয়া নারীরা পরষ্পরকে সাহায্য করছেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিচ্ছেন৷ তারা মাঝে মধ্যে সন্তানদের নিয়ে একজায়গায় জড়ো হন, খাবার খান এবং সুসময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন৷
আল-হুরি রাতে ঘুমাতে পারেন না৷ বলেন, ‘‘সেখানে এখনো অনেক নারী বন্দি আছেন৷ চোখ বুঁজলে আমি তাদের চিৎকার শুনতে পাই৷ আমি শুনতে পাই তারা চিৎকার করে বলছে, সামেরা আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও৷’’