সংস্থাটির দাবি, যুদ্ধে লিপ্ত দু'পক্ষই, অর্থাৎ হুতি বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনী, শিশুদের যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে বাধ্য করছে৷
ইয়েমেনের বেসরকারি সংস্থা মোতানা ফর হিউম্যান রাইটস বুধবার প্যারিসে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ বছরের কম বয়সী এক হাজার একশ' ১৭ জন শিশুকে যুদ্ধে জোর করে অংশগ্রহন করানো হয়েছে৷ প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী শিশুদের শতকরা ৭২ ভাগ বিদ্রোহিগোষ্ঠী হুতির পক্ষ হয়ে কাজ করছে৷ আর বাকিরা কাজ করছে সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে৷
যুদ্ধে লিপ্ত দলগুলো শিশুদেরকে দিয়ে চেকপোস্টের নিরাপত্তা, যোদ্ধাদের জন্য রসদ সরবরাহ ও সরাসরি যুদ্ধ অংশগ্রহনের মতো কাজ করাচ্ছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়৷ বিধ্বস্ত জনজীবন: ইয়েমেন মানবাধিকার ২০১৮ নামে এ প্রতিবেদনটি প্রায় দুই হাজার ইয়েমেনবাসীর সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়৷
বিপর্যস্ত জনজীবন
প্রায় ছয় বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে লিপ্ত আছে সৌদি আরব সমর্থিত ইয়েমেন সরকারের বাহিনী আর ইরান ও হিজবুল্লাহ সমর্থিত হুতি বিদ্রোহিগোষ্ঠী৷ ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও অধিক লোকের প্রাণহানী হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো৷ যুদ্ধে জনজীবনের উপর প্রভাবের বিষয়ে বলতে গিয়ে মোতানা ফর হিউম্যান রাইটস এর প্রধান রাধেয়া আল মোতাওয়াকেল বলেন, প্রতিদিনের এ যুদ্ধ সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে, তাঁদের জীবনযাপনকে শঙ্কার মধ্যে ফেলছে৷ ‘‘দেশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছে৷ সরকারের পক্ষ থেকেও জনগনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না'', দাবি করেন তিনি৷
ক্ষুধা, দারিদ্র্যসহ চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন ইয়েমেনের মানুষ৷ সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah২০১৪ সালের শেষ দিকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবু রাব্বু মনসুর হাদিকে উৎখাত করে দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা৷ ২০১৫ সালের মার্চে তাঁকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট৷ গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি হয়েছে, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ H. Jamaliবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সৌদি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০,০০০ মানুষ নিহত ও ৬০,০০০ হাজার জন আহত হয়েছেন৷ তবে ‘অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার’ নামের একটি সংগঠনের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৫৭,০০০ ছাড়িয়েছে৷ আরেক সংস্থার হিসাবে ৩৩ লাখ মানুষ দেশটিতে বাস্তুচ্যূত হয়েছে৷
ছবি: Reutersশিশুদের জন্য দেশটিতে বসবাস করা নরকের সমতুল্য বলে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ৷ তাদের নভেম্বর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরের নীচের ১৮ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে৷ ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’এর হিসাবে এপ্রিল ২০১৫ থেকে অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত ৮৫,০০০ শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় মৃত্যুবরণ করেছে৷ ছবিতে পুষ্টিহীনতায় ভোগা ১২ বছর বয়সি এক মেয়েকে হাসপাতালের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahদারিদ্র্যের কারণে প্রতি পাঁচ মেয়ে শিশুর দুজনেরই ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ তিন চতুর্থাংশের আঠারো বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে৷ অন্যদিকে কয়েক হাজার ছেলে শিশুকে যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahছবির এই শিশুর নাম আফাফ৷ পুষ্টিহীনতার কারণে দুই বছর ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে না৷ জাতিসংঘের হিসাবে, দেশটিতে তার মতো ৭০ লাখ স্কুল বয়সি শিশু আছে৷ তাদের ২০ লাখই এখন শিক্ষা বঞ্চিত৷ আড়াই হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ৷ যার দুই তৃতীয়াংশই হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahখাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবন ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন ইয়েমেনের নাগরিকরা৷ জাতিসংঘের হিসাবে দেশটির আশিভাগ মানুষেরই এখন কোনো না কোনো মানবিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইয়েমেনের দুই তৃতীয়াংশ জেলা রয়েছে প্রাক দুর্ভিক্ষ পর্যায়ে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahআরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইয়েমেন অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত৷ যুদ্ধ সেই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে৷ ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ যার কারণে মানবিক সহায়তা, জ্বালানি, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশের সব জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ ছবির মহাসড়কটি ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে যুক্ত করেছে৷ যেটি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahদেশটির মানুষ সুপেয় পানির অভাবেও ভুগছেন৷ পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হয়৷ কিন্তু জ্বালানির অভাবে সব জায়গায় পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না৷ যে কারণে পানির দামও বেড়ে গেছে৷ অনেক জায়গায় পুকুরের পানিই ব্যবহার করছেন মানুষ৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah আরআর/কেএম (এপি, এএফপি)