ত্রাণ সহায়তার জন্য ইয়েমেনের মূল বিমানবন্দর ও দুটি পোর্ট খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোট৷ এ মাসের শুরুর দিকে রিয়াদে মিসাইল হামলার প্রতিবাদে ইয়েমেনের স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পুরোপুরি বন্ধ করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতিসংঘের বিমানের জন্য রাজধানী সানার বিমানবন্দরটি খুলে দেয়া হবে৷ হোডেইডার রেড সি পোর্ট দিয়েও আনা যাবে ত্রাণ৷ কিছুদিনের মধ্যে ইয়েমেনের আরেক বন্দর সালেফও খুলে দেয়া হবে বলে জানান জাতিসংঘের সহ-মুখপাত্র ফারহান হক৷ তবে, এসব পথে ঠিক আগের মতোই পণ্য পরিবহন করা যাবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা৷ অবরোধ পুরোপুরি তুলে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়েও জোটের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি৷
রাষ্ট্র না হয়েও বিচ্ছিন্ন
ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোটার এক গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ অনেক বছর ধরেই অবশ্য এই অঞ্চল কার্যত স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ গোটা অঞ্চলে এমন আরও কয়েকটি দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/B. Feher
ইরাকি কুর্দিস্তান
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ ও ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার ফলে বিপর্যস্ত সাদ্দাম হুসেনের প্রশাসন উত্তরে কুর্দি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ধাপে ধাপে হারিয়ে ফেলে৷ কুর্দিরাও সেই সুযোগে নিজস্ব পতাকা, সরকার, সংসদ ও সেনাবাহিনী গড়ে তুলে এক রাষ্ট্রীয় কাঠামো সৃষ্টি করে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/B. Feher
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালের জুলাই মাসে বিশ্বের সবচেয়ে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগে দক্ষিণ সুদানও বেশ কিছুকাল কার্যত স্বাধীনতা ভোগ করেছে৷ ২০০৫ সালের এক শান্তি চুক্তির আওতায় এক গণভোটে দক্ষিণের মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন৷ ১৯৮৩ সালের গৃহযুদ্ধের সময়েই বিচ্ছিন্নতাবাদের এই বীজ বপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Messara
লিবিয়ার পূ্র্বাঞ্চল
২০১১ সালে মুয়াম্মার আল গদ্দাফির পতনের পরেই লিবিয়ায় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে৷ ত্রিপোলি শহরে যে প্রশাসন গঠিত হয়, তার আনুগত্য মানতে নারাজ ছিল দেশের পূ্র্বাঞ্চলের উপজাতীয় নেতারা৷ মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের মদতে তোবরুক শহরে এক সমান্তরাল প্রশাসন উগ্র ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷
ছবি: dapd
উত্তর ইয়েমেন
২০১৪ সালে সর্বশেষ গৃহযুদ্ধের ফলে আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন৷ ইরানের মদতে রাজধানী সানা ও দেশের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে শিয়া সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের হাতে৷ ইয়েমেনের সরকারের অস্তিত্ব শুধু দেশের দক্ষিণাচলেই সীমিত রয়েছে৷ উল্লেখ্য, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইয়েমেন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল
দীর্ঘ ও জটিল গৃহযুদ্ধের জের ধরে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি সম্প্রদায় কার্যত এক স্বাধীন ছিটমহল গড়ে তুলেছে৷ পিওয়াইডি নামের সিরীয় কুর্দি গোষ্ঠী সেই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে৷ ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই বাশার আল আসাদ প্রশাসনের সঙ্গে তাদের একটা বোঝাপড়া রয়েছে৷ মার্কিন বিমান হামলার সুযোগ নিয়ে পিওয়াইডি-র সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna
5 ছবি1 | 5
ফারহান হক বলেন, ‘‘এ ধরনের অগ্রগতিগুলো আমরা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি৷ যদি এগুলো হয়, তবে আমরা তা স্বাগত জানাবো৷ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এসব অগ্রগতি৷ আমরা পরিস্কারভাবে পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেছি৷’’
এ মাসের শুরুর দিক থেকে কঠোরভাবে জারি হওয়া এ অবরোধের ফলে ইয়েমেনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের হিসাব মতে, ইয়েমেনের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জন্য খাবার পানি ও জ্বালানি সরবরাহ করাও প্রয়োজন৷
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর পক্ষ থেকে জোটের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হলেও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ খুব একটা কার্যকর হবে না বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ‘‘ইয়েমেনের প্রয়োজনের তুলনায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা খুবই সামান্য৷ এখানকার অধিবাসীদের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়া খুবই জরুরি৷’’
সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুতি বিদ্রোহীরা৷ এরপরই স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট৷ তবে, অবরোধ আরোপের আগে থেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছিল দেশটি৷ ইয়েমেনের আমদানির ৮০ শতাংশই থাকে খাবার৷