গত কয়েক দিনে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনার সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ৬৫ জন মারা গেছেন। দেশের উত্তরভাগ দখল করতে চাইছে হুতি বিদ্রোহীরা।
বিজ্ঞাপন
হুতি বিদ্রোহীদের ইরান সমর্থন করে। আর সৌদি আরবের সমর্থিত জোট এখন সরকার চালায়। সেই হুতি বিদ্রোহীরা এবার দেশের উত্তরাংশের শহরগুলি ইয়েমেন সরকারের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে। মারিবের কাছে সেনা ও বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৬৫ জন মারা গেছেন। মারিবই হলো সরকারের দখলে থাকা সব চেয়ে শক্ত ঘাঁটি।
গত জুনে হুতি বিদ্রোহীরা মারিব দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সময় সৌদি আরবের মদতপুষ্ট বাহিনীর বিমান হামলায় তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। জুনের পর আবার তারা মারিব দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গত রোববার থেকে ইয়েমেনে লড়াই শুরু হয়েছে। ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে বিদ্রোহীরা। এর ফলে প্রচুর সেনার মৃত্যু হয়েছে। গত ডিসেম্বরের পর এত ভয়ংকর হামলা আর হয়নি।
জাতিসংঘের প্রয়াস
ইয়েমেনে নতুন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে জাতিসংঘ। সুইডেনের কূটনীতিক হ্যানস গ্রান্ডবার্গ দায়িত্ব নেয়ার মুখে এই ঘটনা ঘটল। এর আগে বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথ বলেছেন, তিনি তিন বছর ধরে চেষ্টা করেছিলেন যুদ্ধবিরতির জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।
‘আমাদের দেশ এখন মরুভূমি হবার পথে’
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে চরম অনাহার- এর মাঝে মরুভূমিতে পরিণত হবার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অর্থনীতির কোপ
১২ বছর বয়সি ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে আলি কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি বাবলা গাছ কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। এককালে এই আলির রোজগার চলতো চাষ ও ঘরামির কাজ করে। ইয়েমেনের পড়ন্ত অর্থনীতি বন্ধ করেছে সেই সুযোগ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
জ্বালানির অভাব
এক সময় ইয়েমেনের বেশির ভাগ চুলা জ্বলত গ্যাসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ধসে পড়া অর্থনীতির ফলে সেই জায়গা দখল করেছে কাঠ ও পাথর। ফলে বাজারে দামি পণ্য বলতে কাঠই, যা বিক্রি করছে আলির মতো অসংখ্য জীবিকা-হারানো মানুষ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অনাহার
সাত সন্তানের পিতা আলি বলেন, ‘‘যদি বেশি করে কাঠ আমরা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমাদের দুমুঠো খাবার জোটে। কিন্তু আজকাল গাছের অভাব চোখে পড়ার মতো। কী হবে জানি না। হয় একসাথে বাঁচবো, বা একসাথে মরবো।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কেন এই অভাব
টানা ছয় বছর ধরে চলা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের আশি শতাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সম্পদ ও শস্য থেকে। গবেষণা বলছে, দেশটির বেশির ভাগ জনতার জীবন নির্ভর করছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর। ইয়েমেনের মূল বন্দর হোদেইদাহ হুতিপন্থি গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির জ্বালানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
ঝুঁকিতে ইয়েমেন
রাজধানী সানাতেই প্রতি বছর প্রয়োজন হয় আট লাখ ৮৬হাজার গাছের কাঠ। গত তিন মাসেই কাটা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি গাছ, জানাচ্ছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী আবদুল্লাহ আবদুল-ফুতুহ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
মরুভূমি হবে ইয়েমেন
কাঠবিক্রেতা সুলাইমান বলেন, ‘‘কাঠের চাহিদা আরো বাড়ে যখন হোদেইদাহ বন্দরে জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি যে, খুব শিগগিরই এই দেশটা মরুভূমি হয়ে যাবে। এখনই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে যে ঘন সবুজ দেখা যেতো পাহাড়ের গায়ে, তা আজ আর নেই।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কাঠের বাজার
গাছের মালিকের কাছ থেকে একশ মার্কিন ডলার সমান দামে একটি বাবলা গাছ কিনতে পারেন কাঠুরেরা। তারপর সেই গাছের কাঠ ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী সানাসহ অন্যান্য শহরে। এক ট্রাক কাঠ থেকে আয় হয় তিনশ থেকে সাতশ মার্কিন ডলার।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
7 ছবি1 | 7
নতুন করে শান্তি আলোচনার আগে বিদ্রোহীরা মারিব দখল করে নিতে চায়। তাহলে তারা অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় শান্তি আলোচনা করতে পারবে। তাদের দরাদরির ক্ষমতা বাড়বে। তারা দেশের সব চেয়ে বড় বিমানবন্দর সানা খোলার দাবিও জানিয়েছে। ২০১৬ সালে সৌদির ব্লকেডের জন্য তা বন্ধ আছে।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। অনেক সময়ই তা সৌদি ও ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখন বিদেশি সাহায্যেই বেঁচে আছেন।