আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন' বুধবার জানিয়েছে, ইয়েমেনে ক্ষুধা ও রোগে ভুগে পাঁচ বছরের কমবয়সি প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে৷ ২০১৫ সালের মার্চ থেকে দেশটিতে যুদ্ধ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের হিসেবে, ইয়েমেনের ১৩ লক্ষের বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, তারা অতীত গবেষণার ভিত্তিতে শিশুমৃত্যুর এই সংখ্যা বের করেছে৷ ঐ সব গবেষণায় জানা গেছে, চিকিৎসা না পাওয়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর সাধারণত মৃত্যু হয়ে থাকে৷
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর ইয়েমেনের পরিচালক তামার কিরোলস বলেন, ‘‘বোমা ও বুলেটের আঘাতে শিশুর যেমন মৃত্যু হচ্ছে, তেমনি খাবারের অভাবেও অনেক শিশু মারা যাচ্ছে, যা সহজেই ঠেকানো যায়৷''
ইয়েমেনে এত শিশুর মৃত্যুর জন্য সৌদি নেতৃত্বাধীন অবরোধকে দায়ী করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন৷
হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকেইয়েমেনের উপর জল, স্থল ও আকাশপথে অবরোধ শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট৷ হুতি বিদ্রোহীরা গত নভেম্বরে সৌদি আরবের রিয়াদে ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করলে অবরোধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় সৌদি আরব৷
তাদের জীবন বাঁচে ডাস্টবিনের খাবার খেয়ে
যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ গৃহহীন৷ মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের৷ অনেকেরই সম্বল এখন ডাস্টবিনের খাবার৷ তেমনই এক পরিবারের কথা জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/A. Zeyad
মোহাম্মেদ রুজাইকের পরিবার
ইয়েমেনের রুজাইক পরিবার প্রাণভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে লোহিত সাগরের তীরের হোদেইয়া বন্দরের কাছের একটি জায়গায়৷ আপাতত প্রাণ বাঁচাতে পারলেরও প্রায়ই সবার ভাগ্যে খাবার জোটে না৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আয়ের পথ নেই
২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে৷ তবে হুতি বিদ্রোহীদের উৎখাত করে প্রেসিডেন্ট হাদিকে ক্ষমতায় ফেরাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী হামলা শুরু করার পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে৷ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত৷ যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের অনেকেরই রুজি-রোজগার বন্ধ৷ অনেকেই প্রথমে রাস্তাঘাট থেকে প্লাস্টিকের বোতল বা ধাতব ক্যান বিক্রি করে সামান্য কিছু আয় করত৷ সে পথও ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
বাজার মন্দা
আগে প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বোতল বা ধাতব ক্যান ৫০ ইয়েমেনি রিয়ালে বিক্রি করা যেত৷ এখন আর সেই দাম পাওয়া যায় না৷ কোনো দোকানেই এখন আর প্রতি কেজি প্লাস্টিক বা ধাতব বস্তু ১০ রিয়ালের বেশি দামে বিক্রি করা যায় না৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
ভরসা এখন আবর্জনার স্তূপ
ঘরে খাবার নেই, টাকাও নেই৷ তাহলে উপায়? উপায় একটা বের করেছে রুজাইক পরিবার৷ আগে বোতল আর ক্যান কুড়াতো ডাস্টবিন থেকে৷ এখন তারা খাবারও কুড়ায়৷ হ্যাঁ, অনেকদিন ডাস্টবিন থেকে কুড়ানো খাবারেই কোনোরকমে ক্ষুধা মেটায় রুজাইক পরিবার৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
কী পায় ডাস্টবিনে?
১১ বছর বয়সি আয়ুব মোহাম্মেদ রুজাইক বললো, ‘‘অন্যরা যা ফেলে দেয়, সেই খাবার কুড়িয়েই আমরা খাই, পান করি৷ আমরা মাছ, মাংস, আলু, পেঁয়াজ, ময়দা ইত্যাদি কুড়িয়ে নিয়ে রান্না করে খাই৷’’
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া
রুজাইক পরিবারের প্রধান মোহাম্মেদ রুজায়েক বললেন, ‘‘এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে আমরা চাই তারা যুদ্ধটা বন্ধ করুক৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা – যুদ্ধ বন্ধ হোক৷’’
ছবি: Reuters/A. Zeyad
6 ছবি1 | 6
অবরোধ ছাড়াও হোদাইদা বন্দরকে ঘিরে যে যুদ্ধ চলছে সেটিকেও শিশুমৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করছে ইয়েমেন৷ বন্দরটি এখন বিদ্রোহীদের দখলে আছে৷ এই বন্দর দিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ খাবার ও ত্রাণ আমদানি করে থাকেইয়েমেন৷
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, হোদাইদা বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে ৫৫ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্য খালাস কমে গেছে৷ এই পরিমাণ পণ্য দিয়ে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানায় সংস্থাটি৷
সম্প্রতি সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের উপর থেকে তার সমর্থন সরিয়ে নিয়েছে৷ চলতি মাসের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷