ইয়েমেনের সানা বিমানবন্দরে সৌদি জোটের বিমান হামলা। তার আগে সরে যেতে বলা হলো জাতিসংঘের কর্মী ও সাধারণ মানুষকে।
বিজ্ঞাপন
ইয়েমেনের সানা বিমানবন্দর হুতি বিদ্রোহীরা দখল করে রেখেছে। সেখানেই বিমান হামলা করলো সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট। সৌদ সংবাদসংস্থা আল আরাবিয়া সোমবার এই বিমান হামলার কথা জানিয়েছে।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে
জোটের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিমানবন্দরে সামরিক জায়গাগুলিতে আক্রমণ চালিয়েছে। কারণ, এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে হুতি বিদ্রোহীরা। এখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তারা আক্রমণ চালায়।
বিমান হামলার আগে জোটের তরফ থেকে জাতিসংঘ ও সাধারণ মানুষকে বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল বলে আল আরাবিয়া দাবি করেছে। এই বিমান হামলায় বিমানবন্দরের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। কোনো মৃত্যুর খবরও এখনো পর্যন্ত নেই।
সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র তুর্কি আল-মালিকি জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে মোট ছয়টি জায়গায় আক্রমণ করা হয়েছে। তবে সেই জায়গাগুলিতে আক্রমণ করা হলেও বিমান চলাচলের উপর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে তার দাবি।
‘আমাদের দেশ এখন মরুভূমি হবার পথে’
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে চরম অনাহার- এর মাঝে মরুভূমিতে পরিণত হবার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অর্থনীতির কোপ
১২ বছর বয়সি ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে আলি কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি বাবলা গাছ কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। এককালে এই আলির রোজগার চলতো চাষ ও ঘরামির কাজ করে। ইয়েমেনের পড়ন্ত অর্থনীতি বন্ধ করেছে সেই সুযোগ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
জ্বালানির অভাব
এক সময় ইয়েমেনের বেশির ভাগ চুলা জ্বলত গ্যাসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ধসে পড়া অর্থনীতির ফলে সেই জায়গা দখল করেছে কাঠ ও পাথর। ফলে বাজারে দামি পণ্য বলতে কাঠই, যা বিক্রি করছে আলির মতো অসংখ্য জীবিকা-হারানো মানুষ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অনাহার
সাত সন্তানের পিতা আলি বলেন, ‘‘যদি বেশি করে কাঠ আমরা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমাদের দুমুঠো খাবার জোটে। কিন্তু আজকাল গাছের অভাব চোখে পড়ার মতো। কী হবে জানি না। হয় একসাথে বাঁচবো, বা একসাথে মরবো।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কেন এই অভাব
টানা ছয় বছর ধরে চলা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের আশি শতাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সম্পদ ও শস্য থেকে। গবেষণা বলছে, দেশটির বেশির ভাগ জনতার জীবন নির্ভর করছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর। ইয়েমেনের মূল বন্দর হোদেইদাহ হুতিপন্থি গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির জ্বালানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
ঝুঁকিতে ইয়েমেন
রাজধানী সানাতেই প্রতি বছর প্রয়োজন হয় আট লাখ ৮৬হাজার গাছের কাঠ। গত তিন মাসেই কাটা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি গাছ, জানাচ্ছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী আবদুল্লাহ আবদুল-ফুতুহ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
মরুভূমি হবে ইয়েমেন
কাঠবিক্রেতা সুলাইমান বলেন, ‘‘কাঠের চাহিদা আরো বাড়ে যখন হোদেইদাহ বন্দরে জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি যে, খুব শিগগিরই এই দেশটা মরুভূমি হয়ে যাবে। এখনই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে যে ঘন সবুজ দেখা যেতো পাহাড়ের গায়ে, তা আজ আর নেই।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কাঠের বাজার
গাছের মালিকের কাছ থেকে একশ মার্কিন ডলার সমান দামে একটি বাবলা গাছ কিনতে পারেন কাঠুরেরা। তারপর সেই গাছের কাঠ ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী সানাসহ অন্যান্য শহরে। এক ট্রাক কাঠ থেকে আয় হয় তিনশ থেকে সাতশ মার্কিন ডলার।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
7 ছবি1 | 7
এর আগে রোববার জোটের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই বিমানবন্দর থেকে একটি ড্রোন সৌদির এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। সেই ড্রোন ধ্বংস করা হয়।
সৌদির দাবি, বিমানবন্দরটি ইরানের মদতপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। কয়েক বছর ধরে হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। তবে তাতে সৌদির বড়সড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
মানবিক সংকট
এই বিমানবন্দরটি জাতিসংঘ ত্রাণ পৌঁছনোর কাজে ব্যবহার করে।
ইয়েমেন হলো আরব দুনিয়ার সবচেয়ে গরিব দেশগুলির মধ্যে একটি। ২০১৪ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে সেখানে মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকেই হুতি সানা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৫ সালে সৌদি আরব এই সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে। তাদের ভয় ছিল, হুতি এই অঞ্চলে বড় শক্তি হিসেবে উঠে আসতে চলেছে।