ইয়েমেন যুদ্ধে জার্মান অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র রপ্তানি নীতি নিয়ে জার্মানি গর্ব বোধ করে৷ সশস্ত্র সংঘাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে না দেশটি৷ কিন্তু ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোট জার্মান অস্ত্র ব্যবহার করছে৷
বিজ্ঞাপন
আবুধাবিতে গতসপ্তাহে আয়োজিত প্রতিরক্ষা মেলা দেখে এক পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, ‘‘যুদ্ধের বিশ্ব''৷ সেই মেলায় বারোশ'র বেশি প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে৷ মেলায়জার্মান অস্ত্র বিক্রিতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বড় উপস্থিতিও দেখা গেছে৷
অস্ত্র বিক্রয়কারীদের হতাশ করেনি মেলার আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)৷ মার্কিন এবং ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাঁচ বিলিয়ন ইউরোর সমরাস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে দেশটি৷
এখানে বলা প্রয়োজন, ইউএই হচ্ছে জার্মান অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অন্যতম ক্রেতা৷ কিন্তু, ২০১৫ সাল থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে বিবেচিত ইয়েমেন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে৷
যে সাত দেশ সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে
শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রি আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে অস্ত্র বিক্রিতে এক নম্বর অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ক্রেতা এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷
ছবি: picture-alliance/empics
০১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করা দেশটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ গত পাঁচ বছরে বিক্রি হওয়ায় অস্ত্রের ৩৩ শতাংশ সরবরাহ করেছে সেদেশ৷ গত কয়েক বছরে দেশটির অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে৷ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্ক এ সব অস্ত্রের মূল ক্রেতা৷
ছবি: Reuters
০২. রাশিয়া
বিশ্বের অপর পরাশক্তি রাশিয়ার দখলে আছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারের ২৫ শতাংশ৷ দেশটিতে উৎপাদিত অস্ত্রের মূল ক্রেতা ভারত৷ চীন এবং ভিয়েতনামও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Belcher
০৩. চীন
পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কাছাকাছি না হলেও তিন নম্বরে অবস্থান করছে চীন৷ বিশ্বের অস্ত্র বাজারের ৫ দশমিক নয় শতাংশ তাদের দখলে৷ ক্রেতা পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার৷
ছবি: AP
০৪. ফ্রান্স
চীনের পরেই ফ্রান্সের অবস্থান, গত কয়েক বছরে বিক্রি হওয়া অস্ত্রের ৫ দশমিক ছয় শতাংশ তৈরি করেছে সেদেশে৷ তবে লক্ষণীয় হলো, ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানির পরিমান আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে৷ মূলত মরক্কো, চীন এবং মিশর সেদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে৷
ছবি: Reuters/ECPAD
০৫. জার্মানি
জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ সিপ্রির হিসেবে গত দশকের তুলনায় অনেক কমেছে৷ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের ৪ দশমিক সাত শতাংশ তাদের দখলে আছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং গ্রিস জার্মানির মূল ক্রেতা৷
ছবি: Ralph Orlowski/Getty Images
০৬. যুক্তরাজ্য
অস্ত্র বিক্রির বাজারে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ষষ্ঠ, সংখ্যার হিসেবে ৪ দশকিম পাঁচ শতাংশ৷ মূলত সৌদি আরব, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাজ্য থেকে অস্ত্র আমদানি করে৷
ছবি: Reuters
০৭. স্পেন
স্পেনের দখলে আছে অস্ত্র বাণিজ্যের ৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ৷ অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এবং তুরস্ক অস্ত্র আমদানি করে স্পেন থেকে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
জাতিসংঘ এই যুদ্ধকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে৷ দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে অভুক্ত থাকছেন এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন৷
এখন অবধি জার্মান সরকার বলে আসছে যে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব কিংবা ইউএই জার্মান অস্ত্র বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে তাদের জানা নেই৷ কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনেও জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমি এব্যাপারে এখন অবধি কোনো তথ্য পাইনি৷''
তবে, জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার বায়ারিশে ব়্যুন্ডফুঙ্ক, স্টার্ন ম্যাগাজিন, ডাচ তথ্য ব্যুরো লাইটহাউস রিপোর্ট এবং অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক বিলিংক্যাটের সহযোগিতায় ডয়চে ভেলে টুইটার, ইউটিউব এবং গুগল আর্থ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত যাচাইবাছাই করে এক ভিন্ন চিত্র পেয়েছে৷
ডয়চে ভেলের তদন্ত অনুযায়ী, জলে, স্থলে এবং আকাশে জার্মানিতে তৈরি অস্ত্র এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ যদিও জার্মানির অস্ত্র রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, এরকম যুদ্ধে জড়ানো দেশে জার্মান সমরাস্ত্র বিক্রি করার কথা নয়৷
এআই/জেডএইচ (ডয়চে ভেলে)
ইয়েমেনের শহরটি যেন এখন মৃত্যুপুরী
তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে৷ চলছে মৃত্যুর মিছিল৷ গুলি, বোমায় মৃত্যু, অনাহারে থেকে থেকে মৃত্যু, বিনা চিকিৎসায় ভুগে ভুগে মৃত্যু৷ যারা বেঁচে আছে আতঙ্কের সঙ্গেই তাদের নিত্য বসবাস৷ মানুষ এখন মৃত্যু এড়াতে ছুটছে...
ছবি: REUTERS
জীবনে যুদ্ধ, খেলাতেও যুদ্ধ
এই কিশোরীর হাতে কিন্তু খেলনা বন্দুক! হোদাইদায় শিশু-কিশোররা এখন জেগে যুদ্ধ দেখে, স্বপ্নেও বোধহয় যুদ্ধই দেখে৷ প্রাণ হাতে নিয়ে যখন সবাই শহর ছেড়ে পালাচ্ছে এই কিশোরী কিন্তু খেলনা বন্দুকটি সঙ্গে নিতে ভোলেনি!
ছবি: REUTERS
আতঙ্কগ্রস্ত মা-মেয়ে
সম্প্রতি ইয়েমেনের বন্দর নগর হোদাইদায় জোরদার হামলা চালায় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট৷ গৃহহারা হয় অনেক মানুষ৷ ছবির এই মা-মেয়েও এখন ঘরছাড়া৷ হোদাইদার এক স্কুলই তাদের অস্থায় ঘর৷
ছবি: REUTERS
ক্লান্তিতে ঘুম
শহর ছেড়ে পালাচ্ছে হোদাইদার এক গৃহহারা পরিবার৷ যাত্রাপথে গাড়িতেই এক শিশুর ঘুম৷
ছবি: Reuters/M. al-Sayaghi
স্কুলই তার আশ্রয়
বাবা-মা ঘরছাড়া, তাই এই শিশুরও দিন-রাত কাটে স্কুলে৷ স্কুলই তার ক্রীড়াঙ্গন৷
ছবি: REUTERS
দৃষ্টিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কে জানে এই মা আর শিশুর ভবিষ্যতে কী আছে!
ছবি: Reuters/K. Abdullah
কান্না কে দেখে!
আতঙ্কে, নাকি অনাহারে কাঁদছে স্কুলে আশ্রয় পাওয়া এই শিশু?