1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ই-কমার্স নিয়ে যত অভিযোগ

২৬ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশের অনলাইন ভিত্তিক বেচাকেনা দিন দিন বাড়ছে৷ কিন্তু তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগও উঠছে৷ যার প্রেক্ষিতে এই খাতের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্যোক্তারা নিজেরাও চিন্তিত৷

করোনার কারণে এবার কোরবানির ঈদে অনেকে অনলাইনে গরু কিনেছেনছবি: goruhaat.sobjibazaar.com

বাংলাদেশে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়েছে এক দশকেরও কম সময় হয়েছে৷ তবে ২০১৪ সালের পর থেকে তা জনপ্রিয় হতে শুরু করে৷ বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার জানান, এই বাজারটির আকার এখন আট হাজার কোটি টাকার৷ অনলাইনে মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে৷ তবে করোনার সময়ে তা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ পচনশীল পণ্য থেকে শুরু করে ঔষধ, ইলেকট্রনিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও কিনছেন মানুষ৷ সংশ্লিষ্টদের অনুমানে প্রায় এক লাখ অর্ডার প্রতিদিন আসছে৷ যদিও এর বড় অংশই ঢাকাভিত্তিক৷

বাংলাদেশে কত প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স সেবা দিচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই৷ শুরুর দিককার একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিল এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর জানান, ‘‘চার-পাঁচ হাজারের মতো উদ্যোক্তা এখন আছে৷ এর মধ্যে অনেকেই ছোট উদ্যোক্তা যারা ফেসবুকে কাজ করে৷ আবার অনেক দেশি-বিদেশি বড় উদ্যোক্তাও গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ করেছে৷’’

তবে ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে ১২০০ এর কিছু বেশি৷ শমী কায়সার বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ এর এই সময়ে আমাদের সদস্য বেড়েছে৷ তবে এখন আমরা কিছুদিনের জন্য সদস্য করা বন্ধ রেখেছি৷ আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ আসছে৷ সে কারণে আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে, কতটা অথেনটিক সেটা পরীক্ষা করে এবং তাদের ট্র্যাক রেকর্ড দেখে সদস্যপদ দিচ্ছি৷’’

শমী কায়সার

This browser does not support the audio element.

যেসব অভিযোগ রয়েছে

বিশ্বের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটগুলোতে পণ্য অর্ডার দেয়ার সময়ই ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমে দাম পরিশোধ করেন ক্রেতারা৷ পরবর্তীতে পণ্যটি সময়মত ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়৷ গ্রাহক তার চাহিদামাফিক পণ্য না পেলে ফেরত দিতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে গ্রাহক টাকা ফেরতও পান৷ কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটি ভিন্ন৷ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর এক গবেষণাতে দেখা গেছে সত্তর ভাগ অনলাইন কেনাকাটাতেই টাকা পরিশোধ হয় ক্যাশ অন ডেলিভারি বা পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর পরে৷ বিআইবিএম এর সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আর পণ্যের যে মান তাতে অগ্রিম টাকা দিয়ে গ্রাহকরা পণ্য নিতে চান না৷ দ্বিতীয়ত, পেমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারণার অভাব রয়েছে৷ যে কারণে সারা বিশ্বে ই-কমার্সের যে মডেল গড়ে উঠেছে আমাদের এখানে সেটা জনপ্রিয় নয়৷’’

এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের পণ্য সরবরাহ করা, নকল পণ্য দেয়া বা মান ভালো না হওয়া, সঠিক সময়ে সরবরাহ না করা, প্রলোভন দেখিয়ে হয়রানি এমন নানা অভিযোগ পাওয়া যায় বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটগুলোর বিরুদ্ধে৷ শমী কায়সার বলেন, ‘‘বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে তার মধ্যে অনলাইনে যেই ধরনের পণ্য দেখাচ্ছে ভোক্তা ঠিক সেই পণ্যটি পাচ্ছে না৷ ভিন্ন পণ্য দেয়া হচ্ছে বা আকার-আকৃতি ঠিক থাকছে না, এমন অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে৷’’

ফাহিম মাশরুর

This browser does not support the audio element.

ফাহিম মাশরুর মনে করেন, ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় বিষয় হল গ্রাহকদের আস্থা৷ তা যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে একটি দুটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা শিল্পের উপরই মানুষ আস্থা হারাবে৷ তাই যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে খতিয়ে দেখা উচিত৷ ‘‘অতীতেও আমরা দেখেছি অনেক কোম্পানি অনেক বছর ধরে কাজ করছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে হয়তো টাকাও নিচ্ছে, কিন্তু এক পর্যায়ে আইনী কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এর ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে গ্রাহকদেরই৷ ই-কমার্সেও এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সবার সতর্ক হওয়া দরকার,’’ বলেন বিডি জবসের এই প্রতিষ্ঠাতা৷

গ্রাহকদের জন্য সাপোর্ট সেন্টার

ক্রেতা কোন কারণে প্রতারিত হলে তার অভিযোগ জানানোর সুযোগ আছে সরকারের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে৷ তবে সেখানে অভিযোগের নিষ্পত্তিতে কিছুটা সময় লাগে৷ এক্ষেত্রে ই-কমার্সের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি আলাদা সাপোর্টে সেন্টার এর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে৷ এর সঙ্গে থাকছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও৷ ‘‘কিছু কিছু ভোক্তাদের যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো একেবারেই যৌক্তিক৷ আবার কিছু কিছু অভিযোগের কতটা যৌক্তিকতা আছে সেটাও পরীক্ষা করা প্রয়োজন পড়ে৷ সেই কারণেই আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে একটা ই-সাপোর্ট সেন্টার করছি,’’ বলেন শমী৷

এর মাধ্যমে ভোক্তা এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা যাবে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘ই-কমার্স শিল্পে আস্থার বিষয়টি জরুরি৷ সেটা মূল্য সংশ্লিষ্ট হোক বা পণ্য সংশ্লিষ্ট হোক কিভাবে আস্থার জায়গাটা আমরা আরো দৃঢ় করতে পারি সেকারণেই এই সাপোর্ট সেন্টারটা কাজ করবে এবং একই সঙ্গে অভিযোগগুলো মিটমাট করবে৷’’

ই-কমার্সের জন্য আলাদা আইন

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনায় আলাদা কোন আইন নেই৷ তবে ন্যাশনাল ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ নামে একটি নীতিমালা রয়েছে৷ ই-কমার্সের ব্যবসার কাঠামো এবং ইকো-সিস্টেম কেমন হবে সেই বিষয়টিও এই নীতিমালাতে রয়েছে বলে জানান শমী কায়সার৷ তার ভিত্তিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ডিজিটাল সেল গঠন করা হয়েছে৷ ডিজিটাল সেল এবং ই-সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে এই খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করেন তিনি৷

তবে ফাহিম মাশরুর মনে করেন পলিসি থেকে কিছু বিষয় নিয়ে ই-কমার্স এর জন্য আলাদা একটি আইনি কাঠামো দরকার৷ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতেই তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷ নয়তো একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে বাজারটি চলে যেতে পারে৷ সেই সঙ্গে সেবার মান আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা তার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ