‘ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম'
২২ নভেম্বর ২০২২
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে গিয়েছে- এমন দাবি করেছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক উম্মে সালমা তানজিয়া৷
ছবি: DW/D. Guha
বিজ্ঞাপন
নোয়াখালীর এক মতবিনিময় সভায় তিনি আরো বলেন, মাত্র ১২শ জনবল নিয়ে ১৮ কোটি মানুষের সেবা দিচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর৷
নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গতকাল সোমবার এক মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মানবসম্পদ, ব্যবস্থাপনা ও অর্থ) উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, ১১৮৪ জনের জনবল নিয়ে ১৮ কোটি মানুষের সেবা দিচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর৷ এর মধ্যে বাংলাদেশে ৭২টি অফিস এবং প্রবাসে ৮০টি দূতাবাস অফিস রয়েছে৷
‘‘স্বল্প জনবল নিয়েও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি; সকলের সহযোগিতায় সুনাম বৃদ্ধি করতে চাচ্ছি,'' বলেন তিনি৷
উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম পাসপোর্ট বিভাগ নিয়ে ভেবেছিলেন৷ তিনি ১৯৭৩ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিভাগ নিয়ে ভাবছেন৷ তিনি এই বিভাগের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন৷''
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে গিয়েছে উল্লেখ করে উম্মে সালমা বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ সাহস করেনি ই-পাসপোর্টে যাওয়ার, শেখ হাসিনা সেই সাহস দেখিয়েছেন৷”
ডিজিটাল বাংলাদশ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ; এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাসপোর্ট প্রাপ্তিও নিশ্চিত করার উদ্যাগ নিয়েছে সরকার, বলেন উম্মে সালমা৷
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় পাসপোর্ট নিয়ে জনদুর্ভোগ, দালালের দৌরাত্ম্য, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে হয়রানি নিরসনে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা৷
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন, সদ্য পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা, সাংবাদিক আলমগীর ইউসুফ, মনিরুজ্জামান চৌধুরী ও আবু নাছের মঞ্জুসহ জেলা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিগণ তাদের মতামত তুলে ধরেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে জেনে নিন
বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে৷ আসুন ই-পাসপোর্ট ও এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই৷
ছবি: Press Information Department of Bangladesh
এ বছরই দেশ জুড়ে
২০২০ সালের মধ্যেই সারাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ এছাড়া প্রবাসীরাও পর্যায়ক্রমে ই-পাসপোর্ট পাবেন৷ পাশাপাশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও কার্যকর থাকবে৷
ছবি: Press Information Department of Bangladesh
মেয়াদ
ই-পাসপোর্ট হবে পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি। পাসপোর্টের আকারও হবে দুই ধরনের; ৪৮ পৃষ্ঠা ও ৬৪ পৃষ্ঠা৷ উভয় মেয়াদে উভয় ধরনের ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করা যাবে৷
ছবি: Press Information Department of Bangladesh
৪৮ পৃষ্ঠার খরচ
৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের (১৫ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে) জন্য ফি লাগবে ৩৫০০ টাকা৷ সাতদিনের মধ্যে (জরুরি) পেতে ৫৫০০ এবং দুদিনে (অতি জরুরি) পাওয়ার জন্য খরচ ৭৫০০ টাকা৷ ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ৫ হাজার, জরুরি ৭ হাজার ও অতি জরুরির জন্য ৯ হাজার টাকা ফি ধরা হয়েছে৷
ছবি: Press Information Department of Bangladesh
৬৪ পৃষ্ঠার খরচ
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে লাগবে যথাক্রমে ৫৫০০ টাকা, সাত হাজার ৫০০ ও ১০ হাজার ৫০০ টাকা৷ আর ১০ বছর মেয়াদের জন্য লাগবে যথাক্রমে ৭ হাজার, ৯ হাজার ও ১২ হাজার টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
প্রবাসীদের জন্য
বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট আবেদনে আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১০০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ১৫০৷ ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১২৫ ও জরুরি ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ৬৪ পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ২০০ এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৭৫ ও জরুরি ফি ২২৫ মার্কিন ডলার৷
ছবি: dapd
আবেদন প্রক্রিয়া
ই-পাসপোর্ট এর আবেদন অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে৷ এতে কোনো ছবির প্রয়োজন হবে না; কাগজপত্র সত্যায়নও করতে হবে না৷
ছবি: AP
কোন কোন দেশে ই-পাসপোর্ট
বাংলাদেশের আগে আরো ১১৮টি দেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু আছে৷ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং মালদ্বীপেও ই-পাসপোর্ট আছে৷
ছবি: AP
সুবিধা
ই-পাসপোর্ট নামে পরিচিত বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট মেশিন রিডএবল পাসপোর্টের মতই, তবে এতে স্মার্ট কার্ড প্রযুক্তি ব্যবহার হয়৷মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনার মাধ্যমে এ পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাসপোর্টের ডেটা পেইজ এবং চিপে সংরক্ষিত থাকবে৷ এক ব্যক্তির একাধিক পাসপোর্ট করার সুযোগ বন্ধ হওয়াসহ এই পাসপোর্ট নাগরিক ভোগান্তি কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: AP
অসুবিধা
ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরও ই-পাসপোর্টে প্রাইভেসি নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়ে গেছে৷ পাসপোর্টের ডেটা তারবিহীন আরএফআইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রান্সফার করার কারণে তা বেহাত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে৷ চিপে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য আর পাসপোর্ট নাম্বার সঠিকভাবে এনক্রিপ্ট করে না রাখা হলে তা অপরাধীদের হাতেও চলে যেতে পারে৷ যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে৷