বিশাল জনগোষ্ঠীর শহর ঢাকায় যানজটের ফলে যে শুধু সময় নষ্ট হয়, তা নয়৷ ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও৷ আর এই যানজট শুরু হয় সপ্তাহের একেবারে প্রথম দিনটি থেকেই৷ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকালে তোলা ছবিটি দেখুন৷ রাজধানী ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ-এর যানজট এটি৷

ঢাকার যানজটের কারণগুলোর একটি হলো যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো৷ এক্ষেত্রে চালকদের যেমন সচেতনতার অভাব আছে, তেমনি অসচেতন যাত্রীরাও৷

ঢাকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের মাঝখানে গাড়িগুলোকে এভাবে আকাবাঁকা করে দাঁড় করানোর আরো একটি কারণ যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা৷ সাধারণত একই রুটের বাসগুলো বেশি যাত্রী উঠানোর জন্য এরকম প্রতিযোগিতায় নামে৷ ফলে সৃষ্টি হয় যানজট৷

ঢাকার প্রগতি সরণীর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সামনের সড়কের ফুটপাথটি দখল করে রেখেছে গাড়ি৷ এ শহরের বেশিরভাগ ভবনেরই নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা৷ ফলে এ সব ভবনে আসা গাড়িগুলো পার্ক করা হয় ফুটপাথে কিংবা সড়কের ওপর, যেটা যানজটের অন্যতম একটি কারণ৷

ঢাকার যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ যত্রতত্র পথচারী পারাপার৷ এ শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই ‘ট্র্যাফিক ম্যানার’ জানেন না৷ ব্যস্ততম সড়কে যত্রতত্র পারাপার তাই যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ অবশ্য ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত ওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং না থাকাও এর একটা কারণ৷

পর্যাপ্ত ফুট ব্রিজ বা ওভার ব্রিজ না থাকলেও, যে কটি আছে তাও ব্যবহার করতে চান না পথচারীরা৷ ছবিতে দেখুন রাজধানীর প্রগতি সরণীর ওভার ব্রিজের নীচ থেকেই কেমন রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা৷ এই দলে আছে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থীরা৷

যেসব পথচারী ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চান, তাদের অনেকসময়ই শিকার হতে হয় নানা বিড়ম্বনার৷ দিনেরবেলায় ওভার ব্রিজগুলো হকারদের দখলে চলে গেলেও, দেখার নেই কেউ৷ আর রাতেরবেলা এ সব ওভার ব্রিজে মানুষ উঠতে চান না ছিনতাইকারীর ভয়ে৷

যে কোনো বড় রাস্তারই দু’টো দিক থাকে – গাড়ি আসার একদিক আর যাওয়ার একদিক৷ ঢাকা শহরে যানজটের একটা প্রধান কারণ উল্টো পথে গাড়ি চালানো৷ হ্যাঁ, রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম হলে অনেককেই দেখা যায় গাড়ি ঘুরিয়ে ঝট করে উল্টো দিকের চলে যেতে৷ এতে করে যানজট তো বাড়েই, দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থেকে যায়৷

ঢাকার যানজটের অন্যতম একটি কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা খোড়াখুড়ি৷ ঢাকার গুলশানের এ সড়কটিতে স্যুয়ারেজের লাইন মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চলছে৷ ফলে দিনেরবেলায় সড়কটিতে লেগেই থাকছে যানজট৷

ঢাকা শহরের যানজটের কারণের মধ্যে আছে দীর্ঘ সময় ধরে উড়াল সেতু নির্মাণও৷ উড়াল সেতু নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে সড়কের বেশিরভাগ জায়গায়৷ ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট৷ তাছাড়া এ সব উড়াল সেতু নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনারও অভাব আছে বাংলাদেশে৷

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রেই আছে কমপক্ষে ২০টি রেল ক্রসিং৷ এ সব ক্রসিং থেকে দিনে কমপক্ষে ৭০টিরও বেশি রেলগাড়ি চলাচল করে৷ এক হিসেব মতে, এই ক্রসিংগুলোর কারণে দিনে প্রায় ছয় ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে ঢাকায়৷

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ডাস্টবিনই সড়কের ওপরে৷ এ সব ডাস্টবিনে উপচে পড়া ময়লা আবর্জনা সড়কের ওপরেও ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে সেসব জায়গায় স্লথ গতিতে চলে যানবাহন৷ তাছাড়া রাতেরবেলা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না৷ যত্রতত্র এ সব ডাস্টবিনের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় মহানগরীতে৷

তাড়াতাড়ি রওনা দিতে হবে, তা না হলে ছুটি থেকে একটা দিন নষ্ট হবে-এরকম ধারণা অনেকেরই৷ এক্ষেত্রে সরকারি ছুটির আগের দিন বিকেল বা ছুটির দিন সকালে নয়৷ ধীরে সুস্থে আরাম করে এক কর্মদিবসে রওনা দিন, অনেকটাই স্ট্রেসমুক্ত থাকবেন৷

কন্টিনেন্টাল মবিলিটি সমীক্ষা ২০১৮ - এর করা এক সমীক্ষা জানায়, জার্মানদের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ যানজটের কারণে মানসিক চাপ বোধ করেন৷

পাঁচ কোটি ৭০ লাখ যান জার্মানির রাস্তায় চলাচল করে, কাজেই কর্মস্থলে যাতায়াতের সময় বাদ দিয়ে অন্য সময় বেছে নিন, একথা বলেন জার্মানি যান চলাচল বিষয়ক মনোবিজ্ঞানী ইভেটে ওরল্ভস্কি৷

এই গ্রীষ্মে গড়ে জার্মানির ৫৪০টি রাস্তায় মেরামতের কাজ হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে বেশি লাগতেই পারে৷ সেক্ষেত্রে নেভিগেটারের সাহায্য নিন৷

নির্ধারিত সময়ে বেশি লাগতেই পারে, সেসময়ে কোথাও বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন কিংবা কাছাকাছি কোনো মিউজিয়াম বা সুন্দর কোনো জায়গায় বসে বাচ্চাদের নিয়ে কিছুক্ষণ আনন্দ করতে পারেন৷ ভ্রমনের দিনটিকেও ছুটি ভেবে পরিবার নিয়ে হৈ হুল্লোড় করুন৷ শুধু শুধু স্ট্রেস কেন ?

লম্বা ভ্রমনে খাবার বক্স কখনো গাড়ির পেছনে ট্রাঙ্কে না রেখে বরং পেছনের সিটে বা পায়ের কাছে রাখুন৷ কারণ খাওয়া শুধু নার্ভকেই শান্ত রাখেনা , খাবার চিবানো মস্তিষ্ককেও সচল রাখে৷

প্রতি ৯০ মিনিটে গাড়ির চালক বদলান অর্থাৎ মা-বাবার মধ্যে ভাগাভিগি করে নিন৷ তাছাড়া গাড়িতে ওঠার আগে বাচ্চাদের প্রিয় খেলনা, বই, ম্যাগাজিন, কম্বল, পছন্দের গান গাড়িতে তুলতে ভুলবেন না৷