1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদযাত্রীদের পকেট থেকে লুট ‘৮ হাজার কোটি টাকা’

৩০ এপ্রিল ২০২২

ঈদের সময় অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকা পরিবহণ মালিক ও চাঁদাবাজরা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি৷ এই দাবির পক্ষে একটি হিসেবও দিয়েছে সংগঠনটি৷ তবে, পরিবহণ মালিকরা বলছেন ভিন্নকথা৷

Bangladesh | People are leaving city to celebrate Eid ul Adha with their family at village
ফাইল ছবি৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

অতিরিক্তি ভাড়া হিসেবে সড়ক, নৌ এবং আকাশপথে এই টাকা নেয়া হচ্ছে৷ তবে পরিবহণ মালিকদের দাবি, তারা কোনো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন না৷ আগে তারা প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে কম নিতেন৷ আর এখন ঈদের সময় প্রকৃত ভাড়া নেয়ায় যাত্রীদের কাছে ভাড়া বেশি মনে হচ্ছে৷

এদিকে, যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদযাত্রার বাড়ি যাওয়া এবং ফিরে আসার সময় অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল থেকে ১০ মে, এই ১৫ দিন যাতায়াত বিবেচনায় নিয়ে এই হিসেব করেছে৷ সব ধরনের যানবাহন মিলিয়ে এসময়ে তারা ৬০ কোটি ট্রিপ হবে বলে ধরে নিয়েছেন৷ ট্রিপ বলতে বোঝানো হচ্ছে, একজন যাত্রী এই সময়ের মধ্যে যতবার যানবাহন ব্যবহার করবেন তার ততটি ট্রিপ হবে৷

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এই ৬০ কোটি ট্রিপের মধ্যে সড়কপথে হবে ৪০ কোটি এবং ট্রেন, বাস ও বিমানে হবে ২০ কোটি ট্রিপ৷ তার কথা, ‘‘এই সময়ে বিভিন্ন যানবাহনে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভাড়া আদায় হচ্ছে৷ তার মধ্যে আট হাজার কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘সড়কপথে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে প্রতি ট্রিপে গড়ে যদি অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে নেয়া হয় তাহলে তার পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা৷ আর লঞ্চ, ট্রেন ও বিমানে যদি গড়ে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয় তাহলে সেখানে চার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে৷ এই মোট আট হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে৷’’

‘ঈদের সময় তারা ইচ্ছেমত ভাড়া নিচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

তার অভিযোগ, ‘‘বাসে এখন দেড় থেকে দুইগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে৷ আকাশপথে এই বাড়তি ভাড়ার পরিমাণ আড়াইগুণ পর্যন্ত৷ রেলের টিকিট চলে যাওয়ায় যাত্রীদের প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে দুইগুণেরও বেশি দামে টিকিট কিনতে হয়েছে৷’’

চৌধুরী বলেন, ‘‘আর লঞ্চে এখন ডেকের প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে কয়েকশ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে৷ দুই হাজার পাঁচশ টাকার ডাবল বেডের কেবিন ভাড়া এখন তিন হাজার পাঁচশ টাকার নীচে পাওয়া যাচ্ছেনা৷ আকাশপথে আড়াইগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে৷’’

এদিকে, তার এই বক্তব্যে সত্যতা বাস্তবেও পাওয়া যাচ্ছে৷

ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটে যাত্রী প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে৷

যেমন ঢাকা-রংপুর রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভাড়া আগে এক হাজার টাকা নেয়া হলেও এখন এক হাজার ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ জনপ্রতি আটশ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে৷ এই রুটের ঈগল পরিবহনের ভাড়া আগে এক হাজার ২০০ টাকা নেয়া হলেও এখন এক হাজার ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ ছয়শ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে৷ 

ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চে এক বেডের কেবিন ভাড়া ছিলো এক হাজার দুইশ টাকা৷ এখন নেয়া হচ্ছে এক হাজার ছয়শ টাকা৷

আকাশপথে ইউএস বাংলার ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ভাড়া ছিলো চার হাজার আটশ টাকা৷ এখন যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে ১০ হাজার আটশো টাকা৷

তবে ইউএস বাংলার মহা-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘এখানে বোঝার ভুল আছে৷ আগে টিকিট কাটলে ভাড়া কম, পরে কাটলে ভাড়া বেশি৷ সারবিশ্বে বিমানের এটাই নিয়ম৷ তাই ভাড়া বেড়েছে এটা বলা যাবেনা৷ আর জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় ভাড়াও সমন্বয় করা হয়েছে৷’’

আর সড়কপথে বাসে কেউ কেউ বেশি ভাড়া নিচ্ছে বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুলল্লাহ৷ তবে সবাই বেশি ভাড়া নিচ্ছে না বলে দাবি তার৷

তার কথা, ‘‘আগে প্রতিযোগিতার কারণে প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেয়া হতো৷ এখন প্রকৃত ভাড়া নেয়ায় যাত্রীদের কাছে বেশি মনে হচ্ছে৷ তবে যেসব বাস মাঝপথ থেকে ছাড়ে তারা ভাড়া বেশি নিচ্ছে৷ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না৷’’

তিনি অবশ্য বেশি ভাড়া নেয়ার পক্ষে তাদের যুক্তিও তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে যাত্রী বোঝাই করে গেলে ফেরার পথে যাত্রী পাওয়া যায়না৷ তাই যাওয়া আসার খরচ না উঠলে তো বাস চালানো যাবে না৷’’

একই কথা বলেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (এসপি মাহবুব)৷ তার দাবি, ‘‘কোনো লঞ্চে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না৷ আগে কম নেয়া হতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাত্রী ধরার জন্য আর এখন সরকার নির্ধারিত প্রকৃত ভাড়া নেয়া হচ্ছে৷ ফলে যাত্রীরা মনে করছেন ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে৷’’

‘প্রকৃত ভাড়া নেয়ায় যাত্রীদের কাছে বেশি মনে হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

এর জবাবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে থেকেই তারা (পরিবহণ মালিকরা) সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতো৷ তেলের দাম বাড়ানোর পর তারা বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়েছে৷ আর এখন ঈদের সময় তারা ইচ্ছেমত ভাড়া নিচ্ছে৷’’

তার অভিযোগ, ‘‘এই যে আট হাজার কোটি টাকা ঈদে বেশি নেয়া হচ্ছে তার কমপক্ষে ৩০ ভাগ পাবে পরিবহণ চাঁদাবাজ ও সারাদেশে পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য৷ তাই যাত্রীরা প্রতিকার পান না৷ অভিযোগ করলে হয়রানি হতে হয়৷’’

সরেজমিনে মহাখালি বাস টার্মিনালে গিয়ে শুক্রবার রাতে দেখা যায় বিভিন্ন রুটে পুলিশের সামনেই ডাবল ভাড়া নেয়া হচ্ছে৷ এই প্রতিবেদক সেটা কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে পরিবহণ শ্রমিকরা একজোট হয়ে রীতিমত হুমকি দেন৷ আর সেখানে পুলিশের একটি টিম থাকলেও অভিযোগ করলে তারা বলেন, ‘‘বড় স্যারকে বলেন৷’’ কিন্তু ‘বড় স্যারকে’ অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ