ঈদের সরকারি ছুটি আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু। মঙ্গললবার থেকেই শুরু হয়েছে ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। আর এই সুযোগ নিয়েছেন বাস মালিকেরা।
বিজ্ঞাপন
নির্দিষ্ট ভাড়ার কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না কেউ। একই পরিস্থিতি লঞ্চের ক্ষেত্রেও।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি আশঙ্কা করেছিলো এবার ঈদের আগে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করবে বিভিন্ন যানবাহন। তবে সংগঠনের মহাসচিব মঙ্গলবার বলেন, "এখন যা পরিস্থিতি দেখছি তাতে এর পরিমাণ আরো বেশি, ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।”
ঘরমুখো যাত্রীদের অভিযোগ
মানবাধিকার কর্মী নুরুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। দুইদিন আগেই কাজে গাজীপুর গিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে মঙ্গলবার বগুড়া যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে। বিকেল চারটার দিকেও তিনি নিশ্চিত নন যে যেতে পারবেন কীনা। তিনি বলেন, "৫০০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাকা চাচ্ছে। ট্রাকে করে ২৫০ টাকায় যাওয়া গেলেও এখন চাচ্ছে ৫০০ টাকা। পোশাক কর্মীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে।”
এই পরিস্থিতি দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ তার। তিনি বলেন, "বাস কাউন্টারের লোকজনের কথা, এই ভাড়ায় গেলে যান, না গেলে না যান।”
মহাখালী বাস টার্মিনালে পোশাক শ্রমিক মো, ইমন তার পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, "২০০ টাকার ভাড়া চাইছে ৬০০ টাকা। আজকেই ঈদ যাত্রীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। তারা যার কাছ থেকে যা পারছে আদায় করে নিচ্ছে। আমরা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছি। মনে হচ্ছে যা বেতন বোনাস পেয়েছি তা বাস ভাড়াতেই শেষ হয়ে যাবে।”
চায়না বেগম যাবেন সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল। তিনি বলেন, "বরিশালের ভাড়া চাইছে ৮০০ টাকা। এটা প্রায় দুই গুণ।”
শ্রমিক নেতা যে পরিস্থিতির কথা জানালেন
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, "মহাখালী বাসস্ট্যান্ড খেকে ঢাকা-ময়মনসিংহের ভাড়া ৩০০ টাকা। সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশালের ভাড়া ৫০০ টাকা, নেয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ভাড়া ২০০ টাকা, নেয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে বাস বেশি থাকলেও ঈদের অজুহাতে ১০০ টাকা করে বেশি রাখা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, "জেলা থেকে জেলায় বাস ভাড়ায় আরো বেশি নৈরাজ্য চলছে শেষ সময়ে। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এটা দুই গুণ। প্রতিটি রুটেই ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের কারণে বাসগুলো সেখানে সুবিধা করতে পারছে না।”
তিনি জানান, "যারা আগেই বাসের টিকিট কেটে রেখেছেন তারা স্বস্তিতে আছেন। ওইসব পরিবহণে তো এখন আর টিকিট নাই। কিন্তু যারা আগে টিকিট কাটেননি, শ্রমজীবী, পোশাক শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষ, তারা পড়েছেন বিপাকে। লঞ্চেও ঈদ বখশিশের নামে ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।”
‘ঢাকা-টাঙ্গাইল ভাড়া ২০০ টাকা, নেয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা’
মহাখালীর ঈগল পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার মিলন মিয়া বলেন, "শেষ সময়ে যাত্রী বেশি, বাস কম। তাই ভাড়া একটু বেড়েছে। আর এই সময়ে ভাড়া বাড়বে এটা তো সাধারণ নিয়ম, তারপরও টিকিট দিতে পারছি না।”
চন্দ্রা পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল হালিমও জানালেন একই পরিস্থিতির কথা। তিনি বলেছেন, "শেষ সময়ে সবাই এক যোগে বাড়ি ছুটছে। তাই ভাড়া একটু বেশি।”
ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতে পুলিশ থাকলেও বাসের কর্মচারীরা তার কোনো তোয়াক্কা করছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে যুগ্ম কমিশার মো. মেহেদী হাসান বলেন, "বাড়তি ভাড়া আদায় করলে বিআরটিএর মোবাইল কোর্টের তা দেখার কথা। তবে আমরাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিই। আর যাত্রীরা সরাসরি ৯৯৯-এ ফোন করতে পারেন।”
তবে ঢাকার কোনো বাস টার্মিনালেই বিআরটিএর মোবাইল কোর্টের দেখা মেলেনি।
বাড়তি ভাড়ার পরিমাণ কত?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি দুই দিন আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলো, ঈদ যাত্রায় বিভিন্ন পরিবহণে ৯৮৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে। তারা তাদের পর্যবেক্ষণে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের চিন্তা করে ওই হিসাব দিয়েছিলো। কিন্তু মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "আমাদের ধারণার চেয়ে বাস্তবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আমাদের হিসাব ছিলো ৩ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত। এখন যাত্রীর চাপ একদিনে অনেক বেড়ে যাওয়ায় ভাড়ার নৈরাজ্য কোনো হিসাবেই মেলানো যাচ্ছে না। আমার বাসার সামনে সাইনবোর্ড (নারায়ণগঞ্জ) থেকে নরসিংদীর ভাড়া ৮০ টাকা। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে নিয়েছে ৫০০ টাকা।”
রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রার নানা রূপ
ঈদের ছুটিতে পথ চেয়ে থাকা স্বজনদের সঙ্গে উৎসবের আবহে কয়েকটা দিন কাটাতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে। তাই প্রতিদিন ট্রেন, লঞ্চ, বাস ও অন্যান্য বাহনে প্রচণ্ড ভিড়। ঢাকাবাসীর ঈদযাত্রা দেখুন ছবিঘরে।
ছবি: Johny Hoque/DW
প্রতিদিন ২ লাখ ট্রেনযাত্রী
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। কমলাপুরসহ ঢাকার আশেপাশের স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার ৫০০ জন। বাকিগুলো লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
ট্রেনে স্বস্তি
অন্যান্যবারের মতো এবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি। প্রতিদিনই কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা লাগছে না। এবার এখন পর্যন্ত ট্রেনের ছাদে বসে যাত্রীদের চলাচল করতেও দেখা যায়নি।
ছবি: Johny Hoque/DW
সোনামনিদের আনন্দ
শিশুদের কাছে ঈদ মানেই মজা আর আনন্দ। ঈদে স্কুলে লম্বা ছুটি থাকায় ট্রেনে চড়ে দাদাবাড়ি কিংবা নানাবাড়িতে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! ছবির এই খুদে যাত্রীর নাম ফারিন। মা-বাবার সঙ্গে সিলেট যাচ্ছে সে। তার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।
ছবি: Johny Hoque/DW
দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট
এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে একসপ্তাহ ধরে বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেননি। তবুও নাড়ির টানে বাড়ি তো যেতে হবেই! সেজন্য আসনবিহীন টিকিট কিনতেও কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট বিক্রি হয়।
ছবি: Johny Hoque/DW
বেসরকারি ট্রেন
কমলাপুর থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত সাতটি কমিউটার ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর টিকিট কাউন্টারের সামনেও বিপুল যাত্রী সমাগম দেখা গেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে দাঁড়িয়ে হলেও যাওয়া চাই তাদের। তাই আসনবিহীন টিকিট কিনতে ভিড় করেছেন তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
ঈদে কম গতি
মো. ইয়াসিন আলি ৩৯ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছেন। সাধারণ সময় ও ঈদে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণ সময়ে ৮০-৮২ কিলোমিটার বেগে চালাই। কিন্তু ঈদে যেহেতু যাত্রীর চাপ বেশি থাকে সেজন্য গতি কমিয়ে চালাতে হয়।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রীসেবার বুথ
কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীরা কেউ টিকিট অনুযায়ী ট্রেনের নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম চিনতে না পারলে তাদের সহায়তা করে থাকে রেলওয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি তথ্য কেন্দ্র। একটি বুথে দায়িত্বরত তন্নী আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তথ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ আছি আমরা।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
কমলাপুরের ‘চেনামুখ’
কমলাপুর স্টেশনের মূল ফটক থেকে ট্রেনের বগি পর্যন্ত যাত্রীদের মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য ট্রলি সেবা দিয়ে থাকেন লাল পোশাকধারী শ্রমিকরা। মাসুদ রানা নামে একজন ডয়চে ভেলেকে জানান, লাল রঙা শার্ট তাদের নিজেদেরই বানিয়ে নিতে হয়। প্রতিদিন একেক জন কুলি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করেন বলেও জানান তিনি।
ছবি: Johny Hoque/DW
টিকিট যার, ভ্রমণ তার
বিনা টিকিটে স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের অস্থায়ী গেট। দুই ধাপে টিকিট যাচাইয়ের পর যাত্রীরা ঢুকতে পারছেন। প্রিন্ট করে আনা টিকিট, কিংবা মোবাইল ফোনে দেখানো টিকিটের ছবি স্ক্যান করে নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর মিলিয়ে তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই যাত্রীদের ভেতরে যেতে দিচ্ছেন রেল কর্মকর্তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
মাইকে হাঁকডাক
যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। টার্মিনালে বেশ কিছু লঞ্চের কর্মী মাইকে হাঁকডাক করেন। ‘‘যারা আগে যাবেন, চলে আসুন’’, ‘‘অযথা সময় নষ্ট করবেন না’’ কথাগুলো বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। তাদেরই একজন এম ভি পূবালী-৫ লঞ্চের কিনারে বসে থাকা মো. জামাল।
ছবি: Johny Hoque/DW
লঞ্চের ডেকে ভিড়
রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে চাঁদপুর ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের চাপ খুব একটা নেই। তবে সব লঞ্চের ডেকে যাত্রী সমাগম চোখে পড়ার মতো। বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের অধিকাংশ কেবিন ফাঁকাই থাকে। ডেক পরিপূর্ণ হলেও কেবিন থেকেই মূলত লঞ্চ মালিকদের লাভের বড় অংশ আসে।
ছবি: Johny Hoque/DW
লঞ্চে প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী কম
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চারপাশে তেমন ভিড় নেই। এবারের ঈদকে ঘিরে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী অনেক কম। যাত্রী আশানুরূপ না পাওয়ায় বরিশাল রুটসহ কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল হয়েছে। পটুয়াখালীগামী লঞ্চ অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে।
ছবি: Johny Hoque/DW
আরামের যাত্রা
লঞ্চযাত্রা এই ছবির মতো আরামদায়ক হলেও রাজধানীবাসীদের অধিকাংশই সময় বাঁচাতে পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে যাতায়াত করছেন। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে আরামে চলাচলের জন্য লঞ্চও বেছে নেন কেউ কেউ। ঘাটে ও লঞ্চে বেশি ভিড় না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়ছেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রী আকর্ষণের কৌশল
‘ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় না’ ব্যানার টাঙিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যানার কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। অন্য সময়ের মতো ‘স্বাভাবিক’ ভাড়ায় ঈদযাত্রার টিকিট কাটতে পেরে খুশি তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
ভ্রাম্যমাণ আদালত
ঢাকার তিনটি বাস টার্মিনালে (সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত যেন কেউ না নিতে পারে সেটি নিশ্চিত করছি আমরা।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
টিকিট কাউন্টারে অলস সময়
ঈদযাত্রার ভিড় এড়াতে চাকরিজীবী অনেকে আগেভাগে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে থেকে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ তুলনামূলক কম। মহাখালীতে টিকিট কাউন্টারগুলোতে বিক্রেতাদের অনেকটা অলস সময় কাটছে।
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রী খরায় দূরপাল্লার বাস
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকতো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। কোথাও যেন তেমন যাত্রী নেই! খুব কমসংখ্যক যাত্রী দূরপাল্লার বাসে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
মোটরসাইকেলে ১২ লাখ মানুষ!
ঈদে বাস-ট্রেন-লঞ্চ ছাড়া অন্যান্য বাহনেও বাড়ি যাচ্ছেন রাজধানীবাসীদের অনেকে। এর মধ্যে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করছেন অনেকে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি দাবি করেছে, এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়বে ১২ লাখ মানুষ। এছাড়া মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া করেও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে।
ছবি: Johny Hoque
18 ছবি1 | 18
তিনি বলেন, "লঞ্চেও একই অবস্থা। এমনিতে লঞ্চে যাত্রী কমলেও ঈদের সময় ৬০ লাখ যাত্রী লঞ্চে ঢাকা ছাড়ছেন বলে আমাদের পর্যবেক্ষণ। অর দুই হাজার ৫০০ ধারণ ক্ষমতার লঞ্চ এখন সাত হাজার যাত্রী বহন করছে। ঢাকা বরিশাল রুটে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা ভাড়া হলেও আজকে (মঙ্গলবার) ৬০০-৮০০ টাকা করে নেয়ার তথ্য পেয়েছি। ঢাকা-ভোলা রুটে ভাড়া ছিলো ৪৫০টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা।”
তিনি বলেন, "আমাদের হিসাবে আজকে এক দিনে কমপক্ষে ৪০ লাখ যাত্রীর চাপ পড়ায় যানবাহনের মালিকেরা এই সুযোগ নিচ্ছে। এমনকি মোটরবাইক রাইডের ভাড়াও বেড়ে গেছে। তারা এক হাজার টাকার নিচে কোনো ট্রিপ নিচ্ছে না।”
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "ঈদে লঞ্চের ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ কাল্পনিক। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক পয়সাও বেশি নিচ্ছি না। এমনিতিই লঞ্চের যাত্রী অনেক কমে গেছে। সাধারণভাবে তাই যাত্রী আকর্ষণে স্বাভাবিক সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেয়। এখন সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে।”
আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, "ঈদে যাতে বাড়তি ভাড়া কেউ না নেয় এজন্য মালিক সমিতি তৎপর আছে। কেউ বাড়তি নিলে পুলিশ বা আমাদের মালিক সমিতির কাছে অভিযোগের অনুরোধ করছি।”