1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক কারখানা মালিকদের প্রণোদনা দাবি

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ এপ্রিল ২০২১

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে আবারও প্রনোদনা চান পোশাক শিল্পের মালিকেরা। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছে পোশাক ও বস্ত্র খাতের তিনটি সংগঠন।

Bangladesch TextilarbeiterInnen Coronavirus Arbeitslosigkeit
ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই মহামারির মধ্যে যতটা সম্ভব প্রণোদনা দিয়ে এই সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবে এতে আপত্তি শ্রমিক নেতাদের। তারা বলছেন, গত বছর পোশাক খাতের আড়াই লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাদের তো খোঁজ রাখেন না কেউ। সবসময় যদি পোশাক মালিকদের প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয় তাহলে এতদিন তারা কী করেছেন? প্রণোদনা দিলে সবাইকে দেওয়া উচিৎ।

পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গত রোববার আমরা অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই প্রণোদনার কথা জানিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের রপ্তানি কমে গেছে ব্যাপকভাবে। এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। অর্থায়নের ব্যবস্থা না হলে ছোট ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলোতে বেতন-ভাতা নিয়ে বিশৃঙ্খলা লেগে যেতে পারে। এজন্য এপ্রিল, মে ও জুন মাসের জন্য আমরা দুই শতাংশ হারে সরকারের কাছে ঋণ চেয়েছি। এই টাকা পরে আমাদের রপ্তানি বিল থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে সমন্বয় করে নিতে পারবে। এখন বায়ারদের কাছ থেকেও তো টাকা আসছে না। আমাদের কারখানায় যে সব স্টক রয়েছে, সেগুলোও শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না। ফলে প্রণোদনা না পেলে অনেক কারখানার পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি, আগামী জুলাই থেকে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

শহীদুল্লাহ আজিম

This browser does not support the audio element.

শুধু বিজিএমইএ নয়, বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ এর পক্ষ থেকেও প্রণোদনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাও একইভাবে প্রণোদনা চেয়েছেন। এর আগে গত বছরও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন ঘোষণা এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য শুরুতে দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জে তিন মাসের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার আওতায় ঋণ দেয়। পরে তা বেড়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এছাড়া ঋণ পরিশোধের সময় প্রথমে ছয় মাস থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে দেড় বছর করা হয়েছে। এছাড়া সাড়ে চার শতাংশ সুদে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা তহবিল থেকেও পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন।

অর্থমন্ত্রীর কাঠে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য অনেক ক্রেতা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার ফলে তাদের কাছ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের বিপরীতে অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। রপ্তানি আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ায় পোশাক খাত নিদারুণ সংকটে রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয় পরিশোধ করা হতো ক্রেতার কাছ থেকে অর্থ পাওয়া এবং নগদ সহায়তা বাবদ প্রণোদনার অর্থপ্রাপ্তির পর। কিন্তু রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে নগদ সহায়তার আবেদন করা যাচ্ছে না। আবার অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্ট হারে মূল্য পরিশোধ করছে, যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। আগামী ঈদের আগে বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের জন্য রপ্তানিকারকদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।

বিকেএমইএ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, বর্তমান পরিস্তিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাদের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকার এই মুহুর্তে তাদের এই প্রণোদনা না দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

নাজমা আক্তার

This browser does not support the audio element.

বারবার একই সেক্টরে প্রণোদনা দিয়ে অন্য সেক্টরগুলোকে কী বঞ্চিত করা হচ্ছে না? জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শুধু গার্মেন্টস নয়, আমরা তো ক্ষুদ্র ও মাঝারি সব শিল্পকেই প্রণোদনা দেওয়ার পক্ষে। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, গার্মেন্টস সেক্টরে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ করেন। এখন একটা কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু করাও কঠিন। পাশাপাশি অনেক শ্রমিকও বেকার হয়ে যাবেন। ফলে মহামারির এই সময়ে সরকারের পক্ষে যতোটা সম্ভব প্রণোদনা দিয়ে এই সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পোশাক খাতে সব উদ্যোক্তার হয়তো প্রণোদনার দরকার নেই। যাদের দরকার তাদের সঠিক উপায়ে চিহ্নিত করে এই সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।”

বিশেষজ্ঞদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "দেখেন একজন শ্রমিক আজকে কাজ করলে তবেই বেতন পায়। এখন গার্মেন্টস মালিকদের তো চাওয়ার শেষ নেই। তারা চাইতেই থাকে। শুধু তাদের কেন প্রণোদনা দিতে হবে। একজন মুদি দোকানদার লকডাউনের কারণে দোকান খুলতে পারে না। তাকেও তো প্রণোদনা দেওয়া দরকার। তাই শুধু গার্মেন্টস মালিকদের না দিয়ে সবাইকে ভাতা দেওয়া উচিৎ। গত এক বছরে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। কেউ তো তাদের খোঁজ নেয়নি। আর কথায় কথায় যদি মালিকদের প্রণোদনা লাগে, তাহলে এতদিন তারা কী করেছেন?”

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত এক বছরে ৬৩০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের এক প্রতিবেদনে এই সংখ্যার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় ছিল এই কারখানাগুলো। তবে অন্য জায়গায় কী পরিমাণ কারখানা বন্ধ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৩০টি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৭২টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ২৩টি মিল রয়েছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ