ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়৷ আর এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় আরো বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু এই ছুটির সময় ফাঁকা ঢাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যায়৷
বিজ্ঞাপন
তাই নগরবাসীকে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার ১৪টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ আর পুলিশও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে৷
গত কোরবানির ঈদের চার দিনে ঢাকার ৫০টি থানায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে একশরও বেশি৷ এর মধ্যে ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ কনস্টেবলও নিহত হয়েছেন৷ আর বাড্ডা এলাকায় দিনের বেলা একটি বাসার পাঁচজনকে হাত পা বেঁধে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ওই ছুটির মধ্যেই৷ ডাকাতরা নগদ ১১ লাখ ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়৷ ব্যবসায়ী, গৃহস্থরা যা বলেন: ঈদের ছুটিতে দোকানপাট, মার্কেট বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানগুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকে৷ বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি এবং "অলংকার নিকেতনের” মালিক এম এ হান্নান আজাদ বলেন, " যাদের বড় মার্কেটে স্বর্ণের দোকান তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন উদ্বেগ নাই৷ কারণ সেখানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে৷ পুরো মার্কেট সিসি ক্যামেরার আওতায়৷ নিরাপত্তা প্রহরীরাও প্রশিক্ষিত৷ আর যাদের দোকান ছোট মার্কেটে বা আলাদা তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি৷ ওই সব দোকানেই ঈদের সময় চুরি ডাকাতি হয়৷ অনেক সময় সিকিউরিটি গার্ডরাও এর সঙ্গে যুক্ত থাকে ন৷”
"আমাদের দাবি ছুটির সময় যেন মার্কেট এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়৷ বিশেষ করে রাতে এই টহল বেশি হওয়া জরুরি৷ আর যেসব এলকা একটু বেশি ফাঁকা সেখানে টহল বেশি রাখা দরকার,” বলে তিনি৷
একইরকম দাবি করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন৷ তিনি বলেন, "দোকানগুলোর ৮০-৮৫ ভাগই এখন সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে৷ মার্কেটগুলোও সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো কোথাও কোথাও সিকিউরিটি গার্ডরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন৷ তখন কিছু করার থাকে না৷”
তিনি বলেন, "আমরা এবার সিকিউরিটি গার্ডদের ছুটি না দেয়ার জন্য বলেছি৷ ঈদের ছুটির পর তাদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হবে৷”
এদিকে মিরপুরের গৃহিনী জেসমিন লিপি বলেন, "চোর চক্র কৌশল পাল্টিয়েছে৷ তারা তাদের দলের নারী সদস্যদের ব্যবহার করছে৷ তারা সঙ্গে শিশুদের নিয়ে এমনভাবে যায় যে তারা কোনো বাসায় বেড়াতে এসেছে৷ এভাবে কৌশলে তারা ফ্ল্যাটে ঢুকে চুরি করে৷ আবার কোনো ফ্ল্যাটে দুইজন দারোয়ান থাকলে একজন ছুটিতে থাকে তখন সুযোগ বুঝে চোর দিনের বেলাতেই ঢুকে পড়ে৷”
আর আলাদা বা ছোট বাড়িতে গ্রিলকাটা চোর বা ডাকাতরা সুযোগ নেয় বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, "এই সময়ে ফাঁকা ঢাকায় ছিনতাইকারী ও প্রতারক চক্র বেড়ে যায়৷ রাস্তার পাশে অসুস্থতার ভান করে কেউ শুয়ে থাকেন৷ আপনি সহায়তা করতে গেলেই বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে৷ আপনাকে চেতনানাশক দিয়ে প্রতারক সব কিছু কেড়ে নিতে পারে ৷” কোন এলাকা অপরাধ প্রবণ:
ঢাকার তিনটি এলাকাকে বেশি অপরাধপ্রবণ বলে বিবেচনা করা হয়৷ এই তিনটি এলাকা হলো মিরপুর, রমনা এবং তেজগাঁও৷
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)আটটি বিভাগে চুরির মামলা হয়েছে এক হাজার ৭৮৬টি, ডাকাতি ৩৭টি, দস্যুতা ২৫০টি, খুন ১৮০টি ও অপহরণের ৭৭টি মামলা হয়েছে৷ আর ১৭৪টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে৷
এই সময়ে পুলিশের তেজগাঁ বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৩৯২টি চুরির মামলা হয়েছে৷ ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৭১টি৷ ডাকাতি-দস্যুতার মামলা হয়েছে ৭৭টি৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮০টি চুরির মামলা হয়েছে রমনা বিভাগে৷ ওই বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ৩২টি এবং ছিনতাইয়ের ১৪টি মামলা হয়েছে৷ মিরপুর বিভাগে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ২৬টি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ ডাকাতি ও দস্যুতার ২৩টি, চুরির ১৯৪টি, খুনের ২১টি ও অপহরণের আটটি মামলা হয়েছে৷ এইসব এলাকায় পুলিশ এবার ছুটিতে বিশেষ নজর রাখবে বলে জানিয়েছে৷ পুলিশের পরামর্শ ও নিরাপত্তা:
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন জানান, " ঈদের ছুটিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে৷ আর নগরবাসীকেও আমরা ১৪ ধরনের পরামর্শ দিয়েছি৷ আমরা বাড়তি টহল, চেকপোস্ট, নজরদারি ছুটির মধ্যে এগুলো বাড়াব৷ আর নগরবাসীকেও তাদের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে৷ আমরা ফাঁকা ঢাকায় মটরসাইকেল সহ যানবাহনের গতিও নিয়ন্ত্রণে রাখব৷”
ডিএমপির পরামর্শের মধ্যে আছে-নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখা৷ রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে৷ গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে রাখা৷ বাসা বাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে দরজা জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের করার পর গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা৷ চুরি প্রতিরোধে বাসা-বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসানোসহ আগের বসানো সিসি ক্যামেরা সচল রাখা৷ বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখা৷ প্রয়োজনে ৯৯৯ কল করে জানানো৷ মোটরসাইকেল চুরি রোধে এলার্ম লাগাতে হবে৷
খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, "সব পরামর্শ পুলিশের আওতায় পড়ে না৷ তবু সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা পরামর্শ দিয়েছি৷ আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ কথা বলেছি বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে৷ প্রত্যেক জোনের ডিসি এবং ওসিরা এই দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর স্বর্ণের দোকানের নিরাপত্তার জন্য বাজুসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছি৷”
"আমাদের পরামর্শ হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে আইপি সিসি ক্যামেরা লাগানো৷ সেটা করলে আপনি বিদেশে গেলেও সেখান থেকে মনিটরিং করতে পারবেন৷ আর বাসায় যদি কাউকে রেখে যান এবং নিরাপত্তা কর্মীদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হবেন৷”
তিনি জানান,"ঢাকার প্রবেশ পথ ছাড়াও নির্জন এলাকায় বাড়তি চেকপোস্ট থাকবে৷ আর টহল বাড়ানো হবে নির্জন ঢাকায় চুরি ও ছিনতাই রোধে৷”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ধারণা এবার ঈদে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যাবেন৷ এরমধ্যে রাজধানী থেকেই ঢাকা ছাড়বেন এক কোটি মানুষ৷ তাদের হিসাবে গত ঈদে রাজধানী এবং আশপাশ এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন৷
‘ঈদের ছুটিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে’
‘যাদের দোকান ছোট মার্কেটে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি’
রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রার নানা রূপ
ঈদের ছুটিতে পথ চেয়ে থাকা স্বজনদের সঙ্গে উৎসবের আবহে কয়েকটা দিন কাটাতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে। তাই প্রতিদিন ট্রেন, লঞ্চ, বাস ও অন্যান্য বাহনে প্রচণ্ড ভিড়। ঢাকাবাসীর ঈদযাত্রা দেখুন ছবিঘরে।
ছবি: Johny Hoque/DW
প্রতিদিন ২ লাখ ট্রেনযাত্রী
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। কমলাপুরসহ ঢাকার আশেপাশের স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার ৫০০ জন। বাকিগুলো লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
ট্রেনে স্বস্তি
অন্যান্যবারের মতো এবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি। প্রতিদিনই কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা লাগছে না। এবার এখন পর্যন্ত ট্রেনের ছাদে বসে যাত্রীদের চলাচল করতেও দেখা যায়নি।
ছবি: Johny Hoque/DW
সোনামনিদের আনন্দ
শিশুদের কাছে ঈদ মানেই মজা আর আনন্দ। ঈদে স্কুলে লম্বা ছুটি থাকায় ট্রেনে চড়ে দাদাবাড়ি কিংবা নানাবাড়িতে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! ছবির এই খুদে যাত্রীর নাম ফারিন। মা-বাবার সঙ্গে সিলেট যাচ্ছে সে। তার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।
ছবি: Johny Hoque/DW
দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট
এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে একসপ্তাহ ধরে বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেননি। তবুও নাড়ির টানে বাড়ি তো যেতে হবেই! সেজন্য আসনবিহীন টিকিট কিনতেও কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট বিক্রি হয়।
ছবি: Johny Hoque/DW
বেসরকারি ট্রেন
কমলাপুর থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত সাতটি কমিউটার ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর টিকিট কাউন্টারের সামনেও বিপুল যাত্রী সমাগম দেখা গেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে দাঁড়িয়ে হলেও যাওয়া চাই তাদের। তাই আসনবিহীন টিকিট কিনতে ভিড় করেছেন তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
ঈদে কম গতি
মো. ইয়াসিন আলি ৩৯ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছেন। সাধারণ সময় ও ঈদে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণ সময়ে ৮০-৮২ কিলোমিটার বেগে চালাই। কিন্তু ঈদে যেহেতু যাত্রীর চাপ বেশি থাকে সেজন্য গতি কমিয়ে চালাতে হয়।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রীসেবার বুথ
কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীরা কেউ টিকিট অনুযায়ী ট্রেনের নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম চিনতে না পারলে তাদের সহায়তা করে থাকে রেলওয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি তথ্য কেন্দ্র। একটি বুথে দায়িত্বরত তন্নী আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তথ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ আছি আমরা।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
কমলাপুরের ‘চেনামুখ’
কমলাপুর স্টেশনের মূল ফটক থেকে ট্রেনের বগি পর্যন্ত যাত্রীদের মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য ট্রলি সেবা দিয়ে থাকেন লাল পোশাকধারী শ্রমিকরা। মাসুদ রানা নামে একজন ডয়চে ভেলেকে জানান, লাল রঙা শার্ট তাদের নিজেদেরই বানিয়ে নিতে হয়। প্রতিদিন একেক জন কুলি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করেন বলেও জানান তিনি।
ছবি: Johny Hoque/DW
টিকিট যার, ভ্রমণ তার
বিনা টিকিটে স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের অস্থায়ী গেট। দুই ধাপে টিকিট যাচাইয়ের পর যাত্রীরা ঢুকতে পারছেন। প্রিন্ট করে আনা টিকিট, কিংবা মোবাইল ফোনে দেখানো টিকিটের ছবি স্ক্যান করে নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর মিলিয়ে তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই যাত্রীদের ভেতরে যেতে দিচ্ছেন রেল কর্মকর্তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
মাইকে হাঁকডাক
যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। টার্মিনালে বেশ কিছু লঞ্চের কর্মী মাইকে হাঁকডাক করেন। ‘‘যারা আগে যাবেন, চলে আসুন’’, ‘‘অযথা সময় নষ্ট করবেন না’’ কথাগুলো বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। তাদেরই একজন এম ভি পূবালী-৫ লঞ্চের কিনারে বসে থাকা মো. জামাল।
ছবি: Johny Hoque/DW
লঞ্চের ডেকে ভিড়
রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে চাঁদপুর ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের চাপ খুব একটা নেই। তবে সব লঞ্চের ডেকে যাত্রী সমাগম চোখে পড়ার মতো। বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের অধিকাংশ কেবিন ফাঁকাই থাকে। ডেক পরিপূর্ণ হলেও কেবিন থেকেই মূলত লঞ্চ মালিকদের লাভের বড় অংশ আসে।
ছবি: Johny Hoque/DW
লঞ্চে প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী কম
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চারপাশে তেমন ভিড় নেই। এবারের ঈদকে ঘিরে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী অনেক কম। যাত্রী আশানুরূপ না পাওয়ায় বরিশাল রুটসহ কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল হয়েছে। পটুয়াখালীগামী লঞ্চ অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে।
ছবি: Johny Hoque/DW
আরামের যাত্রা
লঞ্চযাত্রা এই ছবির মতো আরামদায়ক হলেও রাজধানীবাসীদের অধিকাংশই সময় বাঁচাতে পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে যাতায়াত করছেন। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে আরামে চলাচলের জন্য লঞ্চও বেছে নেন কেউ কেউ। ঘাটে ও লঞ্চে বেশি ভিড় না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়ছেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রী আকর্ষণের কৌশল
‘ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় না’ ব্যানার টাঙিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যানার কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। অন্য সময়ের মতো ‘স্বাভাবিক’ ভাড়ায় ঈদযাত্রার টিকিট কাটতে পেরে খুশি তারা।
ছবি: Johny Hoque/DW
ভ্রাম্যমাণ আদালত
ঢাকার তিনটি বাস টার্মিনালে (সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত যেন কেউ না নিতে পারে সেটি নিশ্চিত করছি আমরা।’’
ছবি: Johny Hoque/DW
টিকিট কাউন্টারে অলস সময়
ঈদযাত্রার ভিড় এড়াতে চাকরিজীবী অনেকে আগেভাগে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে থেকে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ তুলনামূলক কম। মহাখালীতে টিকিট কাউন্টারগুলোতে বিক্রেতাদের অনেকটা অলস সময় কাটছে।
ছবি: Johny Hoque/DW
যাত্রী খরায় দূরপাল্লার বাস
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকতো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। কোথাও যেন তেমন যাত্রী নেই! খুব কমসংখ্যক যাত্রী দূরপাল্লার বাসে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন।
ছবি: Johny Hoque/DW
মোটরসাইকেলে ১২ লাখ মানুষ!
ঈদে বাস-ট্রেন-লঞ্চ ছাড়া অন্যান্য বাহনেও বাড়ি যাচ্ছেন রাজধানীবাসীদের অনেকে। এর মধ্যে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করছেন অনেকে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি দাবি করেছে, এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়বে ১২ লাখ মানুষ। এছাড়া মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া করেও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে।