বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা পালিত হচ্ছে শুক্রবার৷ তবে বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপন করছিল সৌদি আরবের মানুষ৷ ঈদের দিনে হজের আনুষ্ঠানিকতাও ঠিকভাবেই চলছিল৷ একেবারে শেষ দিকে হুড়োহুড়ি শুরু হওয়ার কারণেই শুরু হয় বিপর্যয়৷

হজের একেবারে শেষ দিকের একটি আনুষ্ঠানিকতা ‘বড় জামারা’, অর্থাৎ ‘বড় শয়তান’-কে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারা৷ নির্বিঘ্নেই শুরু হয়েছিল এই আনুষ্ঠানিকতা৷ প্রতীকী অর্থে শয়তানকে ঢিল ছোড়ার জন্য পাথর সংগ্রহ করার সময়ও বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে কোনো উত্তেজনা বা আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়নি৷

হাজিদের নির্বিঘ্নে শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি বা পাথর ছোড়ার এই ছবি দেখে কে বলবে এই আনুষ্ঠানিকতা সারতে গিয়েই জীবনাবসান হতে পারে অনেকের! অথচ তা-ই হয়েছে৷ পায়ের নীচে চাপা পড়ে সাতশ’রও বেশি মানুষ মারা গেছে, আহতের সংখ্যাও অনেক৷

ভিড়ের চাপ এবং হুড়োহুড়িতে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে৷ ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যুর মিছিলটা অনেক দীর্ঘ গয়ে গেছে!

সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ-র ধারণা, হজযাত্রীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ঠিকভাবে না মানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি-খামেনেই দুর্ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের ‘অব্যবস্থাপনা’-কে দায়ী করেছেন৷ দুর্ঘটনায় ইরানের প্রায় একশ’র বেশি হজযাত্রী নিহত হয়েছেন৷ তাই দেশটিতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে৷

দুর্ঘটনার পর সৌদি বাদশা সালমান হজ পরিকল্পনা নতুন করে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন৷

পোপ ফ্রান্সিস বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে তাঁর সান্ধ্য প্রার্থনাসভার সূচনায় মিনায় নিহতদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ পোপ সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথিড্রালে তাঁর প্রাথমিক প্রার্থনায় বলেন, ‘‘এই প্রার্থনার মুহূর্তে আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনায় মিলিত হচ্ছি৷’’

জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার মিনার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন৷

এ বছর ২০ লক্ষ হজযাত্রীর নিরাপত্তার জন্য প্রায় এক লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা করেছিল সৌদি আরব৷ কিন্তু তারা এত বড় জনসমাবেশের নিরাপত্তা দেয়ার মতো প্রশিক্ষিত নন এবং নিরাপত্তা কর্মীদের ভাষাজ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইরফান আল-আলাউই৷ মক্কায় যে উন্নয়ন কাজ চলছে তার কঠোর সমালোচক আলাউই৷ তিনি মনে করেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল ও রাগবি প্রতিযোগিতা আরও ভালভাবে আয়োজন করা হয়৷

১৯৯০ সালে হজের সময় মক্কায় এক দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে ১,৪২৬ জন নিহত হয়েছিল৷ ওটাই এখন পর্যন্ত হজ সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় নিহতের সবচেয়ে বড় সংখ্যা৷ বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার অবস্থান তার পরেই৷

গত ১১ সেপ্টেম্বরও দুর্ঘটনার কারণেই খবরের শিরোনামে এসেছিল সৌদি আরব৷ সেদিন মক্কার মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ায় মারা যান ১০৯ জন৷ ৯ বছর আগে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল সৌদি আরবে৷ সেবার শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারার সময়ই নিহত হয়েছিলেন ৩৬৪ জন হাজি৷