বাংলাদেশের ঈদের উৎসবের মূলত দুটো দিক৷ একদিকে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বিনিময়, অন্যদিকে রান্না-বান্না, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি৷ উৎসবের দিনগুলো যত এগিয়ে আসে, আগ্রহ উচ্ছ্বাস বাড়তে থাকে সবার মধ্যে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস সবার মধ্যে থাকলেও, উৎসব আয়োজন বা সম্পন্ন করার মূল ভারটি কিন্তু গিয়ে পড়ে নারীদের ওপর৷ বিশেষ করে ঈদ-উল আজহার সময় হাটে গিয়ে পশু কেনার দায়িত্বটি মূলত বাড়ির পুরুষ সদস্যের থাকলেও, উৎসবের আগের দিন থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত নানারকম প্রস্তুতি ও কাজ চলতে থাকে একজন গিন্নীর৷ সময় অনেকটা বদলেছে, নারীদের অবস্থানগত অনেক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু যেকোনো উৎসবে নারীদের এই দায়িত্ব পালনের বা উৎসব সামাল দেয়ার চিত্রটি কমবেশি এখনো বহাল এবং সেখানে আজও নারীদের অপরাজিত সেঞ্চুরির মতই জয়জয়কার বললে ভুল হবে না৷
এইসমস্ত বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল এমন একজনের সাথে যিনি তিন প্রজন্মের উৎসব আয়োজনে এমনটাই দেখে এসেছেন৷ তার নাম সুফিয়া জাহান৷ অভিজ্ঞতার সত্তরটি বছর পার করেছেন তিনি৷
অল্প বয়সে (ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়) বিয়ে হয়ে যায় সুফিয়া জাহানের ৷ পরে আইএ পাশ করে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন৷ বাবার বাড়ির মতো শ্বশুর বাড়িতেও ছিল যৌথ পরিবার৷ বাড়ির বড় বউ হিসেবে শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদদের নিয়ে সংসারে মূল দায়িত্বগুলো পালন করতে হতো তাকে৷ রান্না কী হবে, কে কে কী পছন্দ করে, অতিথির খাবার, বাড়ির বাজার ইত্যাদি সব চিন্তাই ছিল তার৷ চাকরির পাশাপাশি সংসার সামাল দেয়া, বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন-এসব দায়িত্বের মাঝে নিজের কোনো শখ বা বেড়ানোর ইচ্ছে কোনদিন পূরণ করার করার কথা ভাবতেই পারেননি৷
তাইতো যখন প্রশ্ন করলাম, "এত ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে গেল এবং বাড়ির বড় বউ হয়ে গেলেন আপনি৷ ঈদের মত এমন উৎসব এলে কীভাবে সামাল দিতেন?”
জবাবে সুফিয়া জাহান বলেন, "আগের রাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করতাম৷ আমি বাড়ির বড় বউ ছিলাম৷ অনেক দায়িত্ব ছিল৷ ঈদের দিন বা পরের দিন দেবর- ননদ, অন্যান্য মেহমান আসতো৷ রান্না করা, তাদের নিয়ে আনন্দ করা-এসব চলত৷ তবে একটা জিনিস মনে হত, ঈদের দিন কখনো কারও বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া হয়নি৷ কারণ চিন্তা ছিল আমাদের বাসায় মেহমান এসে তাহলে আমাকে পাবে না৷ তাই কোথাও যাওয়া হত না৷ তবে এটা নিয়ে কোনদিন সংসারে অশান্তি করিনি৷ ”
স্মৃতিচারণ করতে করতে ৪০/৫০ বছর পেছনে ফিরে তিনি বলতে থাকেন, "চাকরি, সংসারের কাজ৷ অনেক কষ্ট হত৷ কিন্তু কষ্টের মাঝেই আনন্দ খুঁজে নিতাম৷ বাড়ির কাজ করে স্কুলে পড়াতে যেতাম, ছোট ছোট বাচ্চারা ছিল, তারপরও যত কষ্টই হোক, সবাইকে নিয়ে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার মধ্যেই তখন আমাদের আনন্দ ছিল৷''
এই যে "কষ্ট হলেও আনন্দ খুঁজে নেয়ার” মানসিকতা যে উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করেন এই অঞ্চলের নারীরা! কারণ সুফিয়া জাহানও অন্য আর সব বাঙালি মেয়ের মতো নিজের মা-দাদী-নানী-চাচীদের এই রূপেই দেখে এসেছেন৷
ফলে উৎসবের রাত-দিন তাদের একাকার হয়ে কেটে যায় হেঁশেলেই৷ হয়তো সেখানেই কখনো খেয়ে নিয়েছেন৷ সারাদিন কাজ করে ঘামে ভিজে শেষ বিকেলে গা ধুয়েছেন৷ আর বাড়ির পুরুষ বা কর্তারা হাট থেকে বাজার করে বা কোরবানির পশু কিনে এনে যথেষ্ট ক্লান্ত৷ কিন্তু উৎসবে যেন নারীর ক্লান্তি আসেই না!
সুফিয়া জাহান
সুফিয়া জাহান বলছিলেন, "আমাদের বাবার বাড়িতেও যৌথ পরিবার ছিল৷ বাবা-কাকা-মা-চাচীদের নিয়ে৷ সেখানে মা-চাচীদের দেখেছি সারাদিন তাদের নানারকম রান্না, ঘর গোছানো, সাজানো, নারকম পদ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন, গভীর রাতে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে যাওয়া-সেসব দেখে বুঝিনি তাদের আসলে কত কষ্ট করতে হতো৷ নিরে যখন বিয়ের পরে চাকরি, যৌথ পরিবারের নানান দায়িত্ব পালন শুরু করলাম তখন বুঝলাম সংসার আসলে কত কঠিন!”
‘সংসার আসলে কত কঠিন'-তিনি মুখে বলছেন বটে, কিন্তু এখনো সময় পেলে চলে যান রান্নাঘরে৷ বয়স ৭১ বছর৷ হলে কী হবে! উৎসবের বিশেষ কোন পদ রান্না, বৌমাকে দেখিয়ে দেয়া-এ যেন তাকে এখনো ফিরিয়ে নিয়ে যায় তার কমবয়সের চপলতার দিকে৷ তাই তো যখন জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি যেহেতু কর্মজীবী ছিলেন, সেখানে সংসারের কাজে স্বামীর তরফ থেকে কোন সহায়তা কি পেয়েছেন কখনো? বা আশা করেছেন?”
জবাবে তিনি বলেন, "আসলে আমাদের সময়ে পুরুষেরা তো ততটা সচেতন ছিলেন না৷ আমাদের মা-চাচীদের সময় তো অবস্থা আরো খারাপ ছিল৷ পুরুষেরা সেসময় হয়তো মনে করতেন, সংসারের ভেতরের কাজগুলো মেয়েরাই করবে৷ আর এটাও ঠিক যে সংসারের কাজ একটি মেয়ে যেভাবে করতে পারে একজন পুরুষ সেভাবে পারবে না!”
তো এই হলো মোদ্দা কথা! নারী নিজেও মনে করে তার চেয়ে ভালো এই দায়িত্বগুলো আর কে পারবে৷
সুফিয়া জাহান জানান, তাদের পরিবারেও সে পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে এখন৷ তার পুত্রবধু কর্মজীবী একজন নারী এবং মাঝে মাঝেই তার ছেলেটি স্বেচ্ছায় রান্না-বান্না করে৷
তবে যেকোন উৎসব আয়োজনে সিংহভাগ কাজ করেন পরিবারের মেয়েরা৷ একথা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ শহর-গ্রামভেদে এখনো বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের সেই একই চিত্র৷
চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরে এই নারী এখন ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সময় কাটান৷৷ পুত্রবধূ বিমানে চাকরি করেন তাই মাঝে মাঝেই তাকে দেশের বাইরে উড়াল দেওয়ার সুযোগ মেলে৷ ছেলে-মেয়েরা এখন আর তাকে সংসারের কাজে ব্যস্ত রাখতে চায় না৷ কিন্তু এখনো উৎসব এলে আর বসিয়ে রাখা যায় না তাকে৷ সুযোগ পেলেই ঢুকে যান রান্নাঘরে৷ তার সাথে যেদিন ধানমন্ডি এলাকায় ছেলের বাসায় কথা হচ্ছিল সেদিনের রান্নাগুলো সব তিনিই করেছেন৷ সেকথা বলছিলেন বেশ আনন্দ নিয়েই৷
অনেক সময় তর্কযুদ্ধে অনেকেই দাবি তোলেন, নারীর ওপর রান্নার ভার চাপিয়ে দিয়ে তাকে শৃঙ্খলে বেধে রাখা হয়েছে৷ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এই দায়িত্ব৷ কিন্তু আসলে কি নারী নিজে এই দায়িত্বের শৃঙ্খল থেকে পুরোপুরি বের হতে চেয়েছে ? নাকি নির্ভরতার কাজের মাঝে নিজের শান্তি খুঁজে নিয়েছে৷ সে তর্কের বিষয়বস্তু৷ কিন্তু এই বয়সে এসেও রান্না করতে যে তার এখনো ভালো লাগে সেকথা বলছিলেন সুফিয়া জাহান নিজে, "আমি ঈদ এলে বসে থাকি না৷ এমনিতে তেমন রান্না-বান্না করি না৷ কিন্তু ঈদের সময় আমিও কিছু কিছু রান্না করি৷ হয়তো বৌমা বোঝে না তখন বলে মা এটা আপনি করেন৷ সেটা করি, আমারও ভালো লাগে৷ ঈদের দিনও আমি বৌমার সঙ্গে রান্না করলাম৷ কোন অনুষ্ঠানে আমি ছোটখাট কাজে হলেও হাত লাগাই”৷
উৎসবে হোক আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা-ই হোক, ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে এখনো অফিস থেকে ফেরা নারীটি বা হোমমেকার ঘরোয়া বধূটি কীভাবে উৎসবে নতুন কিছু রেসিপি করবেন, ঘরের অন্দরের সাজসজ্জা আরও ভিন্ন করবেন তা নিয়েই ভাবেন৷ কখনও নিজে ভেবে কখনও ইউটিউব বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে এই কর্মপরিকল্পনা তার চোখে-মুখে ক্লান্তির বদলে প্রশান্তির উৎসবে বর্ণময় হয়৷ বাংলার উৎসবে নারীর তাই উৎসবের প্রাণ৷
অন্দরের ঈদ: পুরুষদের চোখে নারী
রান্না করে, ঘর গুছিয়ে, আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর মধ্য দিয়েই উৎসবের দিনটা কেটে যায় নারীদের৷ সারাটা দিন ঘরের মধ্যেই পার হয় তাদের৷ এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ কী বলছেন?
ছবি: Shahnaz Munni
‘ঈদ আমরা উপভোগ করি, কিন্তু নারীদের বঞ্চিত করি’
ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোজাহার হোসেন বুলবুল বলেন, ‘‘আমাদের দেশে উৎসবে নারীদের অবদানকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না৷ ঈদের দিন সকাল থেকে রান্না-বান্না নিয়ে তাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়৷ এর সঙ্গে অতিথি আপ্যায়ন আছে৷ ফলে ঈদটাকে যে উপভোগ করা, একটু বেড়ানো বা কোথাও যাওয়া সেটা তারা করতে পারেন না৷ আমি মনে করি, ঈদে নারীদের বিশেষ অবদান আছে৷ ...ঈদটাকে আমরা উপভোগ করি, কিন্তু তাদের বঞ্চিত করি৷”
ছবি: Samir Kumar Dey
‘উৎসবের পূর্ণতা পায় নারীদের ভূমিকার কারণে’
দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলম বলেন, “উৎসবের পরিপূর্ণতা পায় মূলত নারীদের ভূমিকার কারণে৷ ঘরে-গৃহস্থলিতে তারা সবকিছু সামাল দেন৷ এই যে কোরবানি ঈদ গেল, এখানে মাংস আনার পর সেটার প্রক্রিয়া করা এবং রান্না করার কাজটা নারীরাই করেন৷ বিশেষ করে ঘরটাকে সামাল দেওয়া কিন্তু বড় একটা বিষয়৷ শুধু ঘরে না, বাইরেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই ভূমিকা না হলে হয়তো উৎসব পরিপূর্ণতা পেত না৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘ঈদের দিন তারা রান্না না করলে আমরা কোথায় খাব?’
শাহবাগের ফুল বিক্রেতা মো. সোহাগ বলেন, “ঘরের রান্না তো নারীরাই করবেন৷ পুরুষেরা বাইরে কাজ করেন, আর নারীরা ঘরে রান্না করেন৷ এখন ঈদের দিন তারা রান্না না করলে আমরা কোথায় খাব? এটাতে হয়ত তাদের কষ্ট হতে পারে৷ কিন্তু এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম৷ এটা নিয়ে নারীদের কোনো অভিযোগ কিন্তু নেই৷ কখনও তারা বলে না, আমরা রান্না করতে পারব না৷ এভাবেই পূর্বপুরুষদের আমরা দেখে এসেছি৷ এখনও সেভাবেই চলছে৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘নিজের নয়, পুরুষদের পছন্দের খাবার রান্না করে’
স্টাফ নার্স রেজাউল করিম বলেন, “ঈদের দিন নারীরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেন৷ বাচ্চা থেকে শুরু করে স্বামীদের দেখভালের কাজটা তাদের৷ সকালের নাস্তা সেরে দিনের আসল রান্না শুরু করে৷ বিশেষ করে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কী খাবার পছন্দ করে সেই খাবারই তারা রান্না করে৷ অথচ নিজের কোন পছন্দের খাবার থাকলেও সেটা করেন না৷ ঈদের দিন তাদের আসলে তাদের সর্বোচ্চ বিনোদন হলো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে ঈদের কোন অনুষ্ঠান দেখা৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘উৎসবে অন্যরা বাইরে গিয়ে খায়, আমরা লোক ঘরে ডেকে খাওয়াই’
প্রযুক্তি পণ্য বিক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইমরুল হাসান বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতিতে উৎসব মানেই বাসায় বিশেষ রান্নার আয়োজন৷ উৎসব সারা বিশ্বেই হয়৷ কিন্তু ওই সব দেশগুলোতে উৎসবে তারা বাইরে খায়৷ আর আমরা উৎসবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে বাসায় খাওয়াই৷ ফলে পরিবারের নারী সদস্যদের উপর একটা বাড়তি চাপ পড়ে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের বিশেষ দিনে রান্না করতে করতে দিন পার হয়ে যায়৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘সবাই মিলে কষ্ট করলেই তো খুশি থাকা যায়’
বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে রিক্সা চালানো মো. সোহেল বলেন, “গিন্নিরা যে সারাদিন শুধু রান্না করে তা কিন্তু না৷ একসাথে আমরা টিভিও দেখি৷ আবার আত্মীয়ের বাড়িতেও কিন্তু যায়৷ তারা একটু বেশি কষ্ট করে৷ আমরাও কিন্তু বাইরে কম কষ্ট করি না৷ তাদের খুশি রাখার জন্যই তা আমাদের এত কষ্ট৷ দিন-রাত রিক্সা চালায় দু’টো টাকার জন্য৷ সবাই মিলে কষ্ট করলেই তো খুশি থাকা যায়৷ সন্তানদের দেখে রাখবে, রান্না করবে, এটাই তো তাদের কাজ৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘আপ্যায়নেই আনন্দ পান নারীরা’
আগারগাঁওয়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল রফিজ উদ্দিন বলেন, “নারীরা ঘরে রান্না করলে যে আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, সেটা কিন্তু নয়৷ হ্যাঁ, তাদের কষ্টটা আমাদের চেয়ে বেশি৷ আপ্যায়নেও তারা কিন্তু আনন্দ খুঁজে পান৷ ছোট বাচ্চাদের তারা সাজগোজ করে দেন নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য৷ ঘরেও তারা নতুন পোশাক পরেন, সবাই মিলে একত্রে থাকার মধ্যেও কিন্তু আনন্দ আছে৷ সেই আনন্দটা তারা পান৷”
ছবি: Samir Kumar Dey
‘মিলেমিশেই আমরা আনন্দ উপভোগ করি’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রেই নারীরা গৃহকর্ম করেন৷ সবকিছু গুছিয়ে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে আত্মীয় স্বজনের বাসায় যান৷ অনেক সময় হয়তো সম্ভব হয় না৷ করোনার এই পরিস্থিতিতে তো এখন আর কেউ বাইরে যাচ্ছেন না৷ ঘরেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটান৷ ফলে বাঙালির যে কালচার সেটা কিন্তু দুই বছর ধরে নেই৷ এখন তো সবাই ঘরের কাজে অংশ নেন৷ মিলেমিশেই আনন্দ আমরা উপভোগ করি৷”
ছবি: Samir Kumar Dey
‘রান্না করে খাওয়ানোতেই নারীদের আনন্দ’
মিরপুরের সিএনজি চালক মোরশেদ আলম বলেন, “ঈদের দিন তো নারীরা ঘরে রান্না করেই সময় পার করে দেয়৷ আত্মীয়-স্বজনকে বাসায় ডেকে খাওয়াতেই তাদের আনন্দ৷ আমরা যদি তাদের বলিও ঈদের দিন রান্না করতে হবে না৷ বরং তাহলে তারা কষ্ট পাবে৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা তাদের এই আনন্দ আমরা নষ্ট করতে চাই না৷ তাই তারা যেটাতে আনন্দ পায় সেটাই করতে দেওয়া উচিৎ৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘আত্মীয় স্বজন না এলে তারাই বেশি কষ্ট পান’
মেট্টোরেলের কর্মী সাইমুন হাওলাদার বলেন, “আমাদের মা, খালা, চাচী, ফুফুসহ আমাদের ঘরের স্ত্রী যারা আছেন তারা ঈদটাকে সেভাবে উদযাপন করতে পারে না৷ ঘর গোছানোসহ রান্নাতেই তাদের বেশি সময় যায়৷ এভাবেই তো চলে আসছে৷ এটার আসলে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ ঈদে বাড়িতে আত্মীয় স্বজন না এলে নারীরাই বেশি কষ্ট পান৷ এই রান্না করা, আর ঘরের কাজ করার মধ্যেই তারা আনন্দ খুঁজে পান৷”
ছবি: Samir Kumar Dey
‘উৎসবের দিনটা নারীরা আমাদের উৎসর্গ করে’
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার ভোলা টি স্টলের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল মনে করেন, “সবচেয়ে সুন্দর দিনটা নারীরা আমাদের জন্য উৎসর্গ করে৷ ঈদের দিন তো সবাই আনন্দ করতে চায়৷ নারীরাও চায়৷ কিন্তু পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কথা ভেবে তারা এই আনন্দের দিনটা মাটি করে ফেলে৷ সারাদিন রান্না ঘরেই কাটিয়ে দেয়৷ আমাদের তো উচিৎ তাদের কাজে সহযোগিতা করা, সেটা তো আমরা করি না৷ উৎসবের দিনে নারীদের এই ত্যাগ আসলে আমরা স্বীকারও করি না৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey
‘ঈদে খাবারের দোকান বন্ধ থাকে, ঘরে তো রান্না করতেই হবে’
একটি ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী ইয়াদ আলী বলেন, “ঘরে ঈদের দিন নারীরা যে কাজ করে সেটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে৷ শিক্ষিত-অশিক্ষিত নেই, সব নারীই ঈদের দিন ঘরের কাজে আনন্দ পান৷ আপনি যদি এটা বদল করতে চান, সেটা সম্ভব না৷ আমাদের দেশে কি ঈদে কোন খাবারের দোকান খোলা থাকে? থাকে না৷ তাহলে বাড়িতেই তো রান্না করতে হবে৷ সেই কাজটা তো নারীরা করবেন৷ এজন্য নারীরা কিন্তু আপনাকে কোন অভিযোগ করে না৷ এটাতেই তাদের শান্তি৷’’