1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মসজিদ প্রস্তুত, ঠেকানো যাবে কি করোনার বিস্তার?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ মে ২০২০

করোনাকে সামনে রেখে ভিন্ন মাত্রায় এবার বাংলাদেশে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ ঈদের জামায়াতের সামাজিক দূরত্ব নিয়ে আছে এক ধরনের শঙ্কা৷ অন্যদিকে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া মানুষ করোনা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে৷

ফাইল ছবিছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

বাংলাদেশে এবার কোথাও খোলা মাঠ বা ঈদগায়ে ঈদের নামাজ না পড়ার নির্দেশনা আছে৷ তাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এই প্রথমবারের মত দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত হচ্ছে না৷ শোলাকিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী জামাতে শুধু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নয়, বাইরের দেশ থেকেও মুসলমানরা যোগ দিতেন৷ চার-পাঁচ লাখ লোক নামাজ আদায় করতেন একসাথে৷ ১৯২ বছর ধরে এখানে ঈদ জামাত হয়ে আসছে৷ চলতি বছর ১৯৩ তম জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল৷ 

শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ জানান, ‘‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে এবার ঈদের জামাত বন্ধ করা হয়েছে৷ কারণ করোনায় যে সামাজিক দূরত্ব রাখা দরকার সেটা এখানে এত লোকের মধ্যে সম্ভব নয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত শুরুর পর থেকে এই প্রথম বন্ধ রাখা হলো৷ আগে কোনো পরিস্থিতিতে জামাত বন্ধ হয়নি৷’’

ফরিদউদ্দিন মাসউদ

This browser does not support the audio element.

ফরিদউদ্দিন মাসউদ এখন ঢাকায় আছেন৷ ঈদের দিনও থাকবেন৷ এবার তিনি ঈদের নামাজ পড়াবেন রাজারবাগে পুলিশের কেন্দ্রীয় মসজিদে৷ তিনি বলেন, ‘‘খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার আলাদা গুরুত্ব আছে, সওয়াব বেশি হয়৷ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবার তা করা যাচ্ছে না৷ এতে ইসলামের বিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না৷’’

মসজিদগুলো কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
মসজিদগুলোতে যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে ঈদের নামাজ হয় তার প্রস্তুতি চলছে৷ প্রধান ঈদের জামায়াত হবে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে৷ রোববার সকালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন৷ মসজিদের পরিচালক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনেই নামাজের প্রস্তুতি নিয়েছি৷ তিন ফুট দূরত্ব ও এক কাতার বাদ দিয়েই নামাজ হবে৷ সবাইকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যাবহার করতে বলেছি৷ সকাল ৮টা থেকে পাঁচটি জামাত হবে৷ এরপর প্রয়োজন হলে আরো একটি জামাত করা হবে৷’’

তিনি জানান, বিগত জুমাগুলোতেও তারা একই ধরনের সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় করেছেন৷  আগে মসজিদের ম্যাট সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ জীবানুনাশক দিয়ে মসজিদ জীবানুমুক্ত করা হয়েছে৷ মসজিদের গেটে বসানো হাত ধোয়ার বেসিন৷ রাখা আছে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ পাশাপাশি যারা ঈদের নামাজ পড়তে আসবেন তাদেরকে বাসা থেকে ওযু করে আসতে বলা হয়েছে৷ মহীউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা এটা বার বার ঘোষণা দিচ্ছি৷ আর ঈদের দিন যাতে শৃঙ্খলা এবং সামজিক দূরত্ব থাকে সেজন্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছি৷’’

শুক্রাবাদ জামে মসজিদের খতিব মুফতি মো. আতাউল্লাহ জানান, তাদের পাঁচতলা মসজিদের সব তলায়ই ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঈদের নামাজের সামাজিক দূরত্বের নিয়ম জানিয়ে দিচ্ছি৷ মসজিদের গেটেও নোটিশ দেয়া হয়েছে৷’’

কলাবাগান ডরমেটরি জামে মসজিদেও একই ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে৷ তারা ঈদে একাধিক জামাত করবে৷ একটি জামাত চলার সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুসল্লিরাও যাতে সামাজিক দূরত্ব মানেন সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক থাকবে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ইমামদের সাথে প্রশাসনের লোকজন বৈঠক করে ঈদের নামাজের নিয়ম জানিয়ে দিয়েছে৷ এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে৷

কিন্তু বাস্তবে নির্দেশনা কার্যকর কতটা সম্ভব হবে তা সোমবার ঈদের দিনই বোঝা যাবে৷ বাংলাদেশের বরিশাল, চাঁদপুর, শরিয়তপুর দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলার কিছু এলাকার মুসলিমরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে আজ (রবিবার) ঈদ উদযাপন করছেন৷ সকালে ঈদের জামাতে ওই সব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব তেমন মানা হয়নি৷ খোলা মাঠেও নামাজ হয়েছে৷ আর নামাজের পর কোলাকুলিও করতে দেখা গেছে৷ যা করোনার কারণে নিষেধ করা হয়েছে৷

মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার

This browser does not support the audio element.

ঈদের পর কী হবে?
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও হাজার হাজার মানুষ ঈদে ঢাকা ছেড়েছেন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়৷ রোববারও ব্যক্তিগত যানবাহন এবং কার ও মাইক্রেবাস ভাড়া করে গ্রামে গেছেন অনেকে৷ বিভিন্ন এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, যারা ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন তারা এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করছেন৷ বাজারে যাচ্ছেন, মসজিদে নামাজ পড়ছেন৷ কোয়ারান্টিনের নিয়ম মানছেন না৷ কয়েকটি এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে৷ অন্যদিকে ঢাকার যে মার্কেটগুলো খোলা আছে সেখানে ঈদের আগের দিন শনিবার উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে৷ সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছু চোখে পড়েনি৷

এই পরিস্থিতিতে ঈদের পর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উল্লম্ফন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা৷ তারা মনে করেন এবার, সারাদেশে সমহারে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৪ জেলায় শনিবার পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার খুব কম ছিলো৷ ১০০ জনের নীচে৷ সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা তিনটি-ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ৷ মোট সংক্রমণের ৮০ ভাগ এই তিন অঞ্চলে৷ চার নাম্বারে চট্টগ্রাম৷ এই চারটিই শিল্প ও বাণিজ্য অঞ্চল৷ এই অঞ্চলগুলো থেকে মানুষ গ্রামে যাওয়া মানে ভাইরাস নিয়ে যাওয়া৷ এখন তারা গ্রামে গিয়ে হাটে বাজারে যাচ্ছেন৷ নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছেন৷ ঈদের নামাজ পড়বেন৷ সবার সাথে মিশছেন৷ এর ফলে সারাদেশে করোনা ‘সুষমভাবে' ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি৷’’

তার মতে এ কারণে ঈদের পর করোনায় আক্রান্তের হার বেড়ে যাবে৷ এখন মোট যত টেস্ট করা হয় তার শতকরা ১৭ ভাগ আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে৷ ঈদের পর তা ২৫ ভাগ বা তার বেশিও হতে পারে৷

লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনই প্রস্তুতি না নিলে ঈদের পর করোনা চিকিৎসার অবস্থা আরো জটিল হবে৷ ঢাকায় কোভিড হাসপাতালগুলোতে আর মাত্র ৫০টি আইসিইউ খালি আছে৷ অচিরেই আর কোনো আইসিইউ খালি পাওয়া যাবে না৷’’

করোনা নিয়ে বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সমন্বয়হীনতার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ