ঢাকা মহানগর পুলিশের হিসেবে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন দু'জন৷ পুলিশ অবশ্য এবার বেশ তত্পর৷ ঈদযাত্রীদের সচেতন করতে বিলি করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ লিফলেট৷ ১০টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে৷ টেলিভিশনগুলো প্রচার করছে অজ্ঞান পার্টি নিয়ে নানা খবর৷ এবারে ঈদের ‘হিরো' বা ‘ভিলেন' এখন অজ্ঞান পার্টি৷
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়াদের সবার কাহিনী প্রায় একই রকম৷ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপরিচিত ব্যক্তিরা সখ্যতা গড়ে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে গেছে তাদের৷ আর তাদের উদ্ধার করা হয়েছে রাস্তা, বাসস্টেশন বা লঞ্চঘাট থেকে৷
অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়া রোগীদের পরীক্ষা করে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, খাবারের সঙ্গে অনেকক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ‘ডায়াজিপিন' ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ মিশিয়ে অজ্ঞান করার কাজ করে প্রতারক চক্র৷ আর এর প্রতিক্রিয়ায় অজ্ঞান হওয়া ছাড়াও ডায়াবেটিস ও লিভারের সমস্যাগ্রস্ত রোগীরা মারাও যেতে পারেন৷ পুলিশের ভাষ্যমতে, অচেতন করার এসব ওষুধ আমদানি নিষিদ্ধ৷ তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে আমদানি করে উচ্চ মূল্যে প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করে৷
ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই বাড়ি ফেরেন মানুষ৷ সেজন্য অনেকেই সারারাত অপেক্ষা করেন ট্রেনের টিকেটের জন্য কিংবা লঞ্চে ওঠেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে৷ সেরকমই কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগাম টিকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের ভিড়৷ আগের দিন রাত থেকে এসব মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন টিকেটের জন্য৷ তবে যাত্রীর তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় দিনভর অপেক্ষা শেষে অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ চিত্র আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো৷
ছবি: DW/M. Mamunজীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছে হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এতো কষ্ট করে বাড়ি ফেরা৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ৷ জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ছাদে চেপে বসেছেন এসব মানুষ৷ ছাদে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে সকল নিষেধাজ্ঞাই উপেক্ষিত৷
ছবি: DW/M. Mamunসদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ৷ অন্যান্য পথের মতো নদীপথেও তাই ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন মানুষ৷ ঈদের সময় লঞ্চগুলোর ডেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার সদরঘাটে নৌকা থেকে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা৷ এভাবে উঠতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা৷ এরপরেও নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই লঞ্চে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে জায়গা না পেয়ে খোলা ছাদে উঠে পড়েছেন হাজারো মানুষ৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক নৌযান, প্রাণ হারান অনেকেই৷ তারপরেও থেমে থাকে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷
ছবি: DW/M. Mamunপরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এসব মানুষ৷ ভুলে গেছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা, নিজ জীবনের নিরাপত্তা৷ ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর চিত্র ছিল একই৷ এ যেন ঝুঁকির মধ্যে আনন্দ যাত্রা!
ছবি: DW/M. Mamunনৌ ও রেলপথের মতোই সড়ক পথেও যাত্রীর চাপ বেশি৷ অনেকেই তাই বাড়ি ফিরছেন বাসের ছাদে চড়ে৷ তবে এতো কষ্টের পরও কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন যাত্রীরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বাংলাদেশের সড়কপথে ঈদের আগে যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ট্রাকে চড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ এসব মানুষের বেশিরভাগই দিনমজুর৷ তবে টিকেট না পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা যায় ট্রাকে উঠতে৷ এভাবেই ট্রাকে চড়ে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশে অজ্ঞান পার্টির ২০টি চক্র সক্রিয় রয়েছে৷ তাদের সদস্য তিনশ'র বেশি৷ অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা একদলে কমপক্ষে চারজন থাকে৷ তারা নানা কৌশলে যাত্রী বা কেনাকাটা করতে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে ভাব জমায়৷ এরপর তারাও খায়, শিকারকেও খেতে দেয়৷ আর এরমধ্যেই থাকে কারসাজি৷
পুলিশ শনিবার পর্যন্ত অজ্ঞান পার্টির ৪০ জন সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছে৷ আর অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে গঠন করেছে বিশেষ টিম৷ তারা লঞ্চ, রেল ও বাসষ্টেশন এবং জনসমাগম স্থলে নজরদারি বাড়িয়েছে৷
পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন আরো তথ্য৷ তিনি জানান, অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু না খেতে এবার ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে৷ উচ্চক্ষমতার ঘুমের বড়ি পানিতে গুলে বা চা, শরবত, ডাবের পানি, ভাত, জুসের প্যাকেট, শসা, কোমলপানীয়, পান, ঝালমুড়ি, ক্রিম দেয়া বিস্কুটে মিশিয়ে কৌশলে মানুষকে খাইয়ে অজ্ঞান করে সব লুটে নেয়া হয়৷