একটি ল্যান্ড ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন আলমগীর হোসেন৷ করোনা মহামারিতে তার চাকরি গেছে৷ লজ্জায় বাড়িও যেতে পারেন না৷ এ অবস্থা অনেকেরই৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে আলমগীর বললেন, ‘‘আমি চাকরি করি, এলাকার লোকজন জানে৷ গত বছরও কোরবানি দিয়েছি৷ একটু পরেই সেমাই কিনতে হবে, এবার সেই পয়সাটাও নেই৷ কোরবানি দেবো কিভাবে? লজ্জায় বাড়ি যেতে পারি না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন পথে পথে ঘুরছি৷ কারো কাছে হাতও পাততে পারি না৷ কষ্টের কথা কাকে বলবো? আপনি শুনে হয়ত লিখবেন, তাতে আমার কী লাভ হবে? আমার তো জীবন চলছে না৷ এর মধ্যে আবার ১৪ দিনের লকডাউন আসছে, কীভাবে চলবো জানি না৷’’
একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাজেদুল ইসলাম মিলন৷ করোনা মহামারি শুরুর পর বেতনের ১৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ গত বছর ঈদে পুরো বোনাস পেলেও এবার বোনাসের প্রায় ৪০ ভাগ কম পেয়েছেন৷ তার পক্ষেও এবার আর কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ ডয়চে ভেলেকে মিলন বলেন, "আমার তো তা-ও চাকরি আছে৷ ৪০ ভাগ কমিয়ে দিলেও বোনাস তো পেয়েছি৷ কিন্তু যাদের চাকরি চলে গেছে, তারা কিভাবে চলছে, একবার চিন্তা করে দেখেন৷ আমরা আসলেই খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি৷ কিন্তু সেই কথাগুলোও কাউকে বলতে পারছি না৷”
‘লজ্জায় বাড়ি যেতে পারি না’
শুধু আলমগীর হোসেন বা সাজেদুল ইসলাম মিলন নয়, এমন অসংখ্য মানুষ এবার ঈদে কোরবানি দিতে পারছেন না৷ কেউ আগে একাই একটা গরু কোরবানি দিলেও এবার হয়ত ভাগে দিচ্ছেন৷ যারা সরকারি চাকরি করেন, তারা ঠিকমতো বেতন-বোনাস পেয়েছেন৷ কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই খারাপ৷ বড় একটা শ্রেনি তাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছে না৷ লজ্জায় এলাকায় যেতে পারছে না৷ ঢাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে থাকার মতো অবস্থাও নেই অনেকের৷
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে পড়েছে করোনার প্রভাব৷ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে পুরো বেনাস দিয়েছে৷ আর আংশিক ধরলে এটা ৩০ শতাংশ হবে৷ এ তো বললাম বোনাসের কথা৷ বেতনের অবস্থা আরো খারাপ৷ খুবই নামকরা প্রতিষ্ঠান, মালিকরাও অভিজাত-ধণাঢ্য, সেই সব প্রতিষ্ঠানেও কয়েক মাসের বেতন বাকি পড়েছে৷ বহু টেলিভিশন বেতন দেয়নি, বোনাসও দেয়নি৷ আজ দু-একটি প্রতিষ্ঠানে বোনাস দেওয়ার কথা৷ আমরা তথ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়গুলো জানিয়েছি৷ তিনি কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ ভালো দেখছি না৷’’
কুদ্দুস আফ্রাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা এই মহামারিতে সামনে থেকে কাজ করেছে৷ তারা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেন, লেখেন৷ অথচ এই সাংবাদিকরাই যে কতটা কষ্টে আছেন সেটা আপনাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না৷”
সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা আর ঈদ আনন্দ নিয়ে ঘরমুখো মানুষ
করোনার ভয় উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদে শহর ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ৷ বেশি ভাড়া দিয়ে, নানা ধরনের ঝক্কি সামলে আপনজনদের সঙ্গে উৎসব উপভোগ করতে বাড়ি ফিরছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দিনভর যানজট
বিধি বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র হাট বসানো এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ প্রবেশের কারণে ঢাকায় সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় যানজট৷ ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এবার গাড়ির চাপ অন্যবারের চেয়ে কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
যাত্রী প্রচুর, গাড়ি কম
গাবতলিতে বাস টার্মিনালে অধিকাংশ কাউন্টাটরেই বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা পাওয়া যায়নি৷ জানা গেল, রাস্তায় জ্যামের কারণে অনেক বাস কোম্পানি গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷ ফলে টিকেট যা ছিল আগেভাগেই বিক্রি হয়ে যাওয়াতে অনেক যাত্রীকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা
জ্যোৎস্না বেগম তার দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুলনা যেতে গ্রিন লাইনের টিকেট কেটেছেন গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে৷ কিন্তু সাড়ে দশটার গাড়ি আসেনি সাড়ে ১২ টায়ও৷ আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কাউন্টারের লোকেরা এখনো কিছু জানাতে পারেনি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
লঞ্চে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
দেশের বৃহত্তম লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা গাদাগাদি করে বসেছেন৷ কেন এভাবে যাচ্ছেন জানতে চাওয়ায় বরগুনাগামী যাত্রী সামিউন বাছির বলেন, ‘‘আমাদের তো ভাই কেবিনে আলাদা যাওয়ার টাকা নাই৷ বাড়ি যেহেতু যাইতেই হবে, তাই এভাবে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই৷ করোনার ভয় একটু আছে, কিন্তু কিছু করার নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চাপ বেশি লঞ্চে
ঢাকার বাস, লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি লঞ্চ টার্মিনালে৷ কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বরিশালগামী যাত্রী লোকমান হোসেন বলেন, ‘‘লঞ্চে ভাড়া তুলনামূলক কম৷ তাছাড়া পরিবার নিয়া আরামে যাওয়া যায়৷ তাই ঈদে সচরাচর আমরা লঞ্চে করেই যাতায়াত করি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সামাজিক দূরত্ব নেই
উত্তরবঙ্গের দিকের বাসের অন্যতম প্রধান টার্মিনাল কল্যাণপুরে এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল,গাদাগাদি করে যাত্রীরা বসে আছেন৷ সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই, অনেকের মুখে মাস্কও নেই৷ সাংবাদিকের উপস্থিতি ও ছবি তোলা দেখে অনেকেই তড়িঘড়ি মাস্ক পরে নেন৷ কাউন্টারের টিকেট বিক্রয়প্রতিনিধি বলেন, “যাত্রীদের সচেতন করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত৷ এত বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ট্রেনের অনলাইন টিকেট কিনতে ভোগান্তি
গতবছরের মতো এবারের ঈদেও ট্রেনে চেপে মানুষের বাড়ি ফেরার চাপ অতটা দেখা যায়নি৷ অনেক আসন খালি রেখেই আন্তঃনগর এবং লোকাল ট্রেনগুলোকে কমলাপুর রেলস্টেশন ত্যাগ করতে দেখা যায়৷ তবে অনলাইন টিকেটপ্রাপ্তিতে যাত্রীদের অসন্তোষ ছিল৷ রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, ‘‘কাউন্টারে টিকেট বিক্রি বন্ধ৷ অনলাইনে টকেট পাওয়াই যাচ্ছিল না৷ অনেকবার চেষ্টা করার পর টিকেট পেয়েছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভাড়া দ্বিগুণ, যাত্রীও দ্বিগুণ
৫০ ভাগ আসন খালি রাখা সাপেক্ষে সরকার বাস ও লঞ্চের যে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, ঈদের সময় তা মানা হচ্ছে না বলে যাত্রীদের দাবি৷ লঞ্চে ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে, যাত্রীও তোলা হয়েছে গাদাগাদি করে৷ এদিকে লোকাল বাস ঢাকার সীমানা পর্যন্ত অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখলেও ঢাকা পেরোতেই তারা শতভাগ আসন পূরণ করে যাত্রী নিচ্ছেন৷ কেউ কোনো প্রতিবাদ এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে বলে জানান যাত্রীরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে রেলস্টেশনে
ঈদুল আজহার দুই দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীদের হাত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড় করিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করানো হচ্ছে৷ এছাড়া টিকেট কাটার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে অনলাইনে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ট্রেন ছাড়ে সময়মতো
প্রতি ঈদে রেলের শিডিউল নিয়ে প্রচণ্ড যাত্রী অসন্তোষ থাকলেও এবারে তেমন কোনো শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি৷ এছাড়া রেলস্টেশনগুলোতে এবার যাত্রীর চাপও ছিল তুলনামূলক কম৷ ঈদুল আজহায় বাড়ি যাচ্ছে এমন বেশ কয়েকজন রেলযাত্রী জানালেন, কর্তৃপক্ষ তাদের যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছেন৷ আবদুস সালাম নামের একজন যাত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ট্রেনের যাত্রা সবসময়ই আরামদায়ক, যদি তাতে কোনো ভোগান্তি না থাকে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
10 ছবি1 | 10
গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থা দৃশ্যত গত বছরের তুলনায় ভালো৷ বিজিএমইএ'র তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানেই বেতন ও বোনাস ঠিকমতো হয়েছে- এমন দাবি করে ডয়চে ভেলেকে এমন কথাই বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান৷ শ্রমিক নেত্রী বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তারও সেটা স্বীকার করলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "এবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই বেতন-বোনাস হয়েছে৷ সরকারও আগে থেকে তৎপর ছিল৷ আমরাও তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছি৷ ফলে কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷ শুধু গাজীপুরে একটু সমস্যা হয়েছে৷”
তবে মালিবাগের আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিক সালমা আক্তার মিম ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘কমপ্লায়েন্স কারখানায় বেতন ও বোনাস হলেও ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঠিকমতো জুন মাসের বেতনই দেয়নি৷ কারো হয়ত ১০ হাজার টাকা বেতন, তাকে ৭ হাজার টাকা দিয়েছে৷ আর এসব শ্রমিকের বোনাস তো দেড়-দু'হাজার টাকা৷ আমার সঙ্গে থাকে এমন অনেকের খবরই আমি জানি৷ আমার প্রতিষ্ঠানে বেতন-বোনাস সবই দিয়েছে৷ এমনকি জুলাই মাসের ১০ দিনের বেতনও দিয়েছে৷ তবে কয়েকটি মেশিন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায়- এমন জায়গাগুলোতে শ্রমিকরা অনেক কষ্টে আছেন৷”
‘ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঠিকমতো জুন মাসের বেতনই দেয়নি’
রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাশেদুল করিম মুন্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে যা-ই বলুক না কেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই অন্তত ২৫ ভাগ কর্মীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে৷ আমি হয়ত নিজ তাগিয়ে অফিস বন্ধ থাকার পরও সব কর্মীকে পুরো বেতন ও বোনাস দিয়েছি, কিন্তু বহু প্রতিষ্ঠানের এই সক্ষমতা নেই৷ গত বছর আমাদের অর্ডার কিছুটা কম থাকলেও এবার কিন্তু অর্ডার ভালো৷ প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি উৎপাদনে ছিল৷ এবার লকডাউনে হয়ত ১৪ দিন বন্ধ থাকবে৷ আমাদের হাতে কাজ আছে৷ ঠিক মতো কাজ করতে পারলে তো কর্মীদের বেতন-বোনাসে সমস্যা হওয়ার কথা না৷’’
জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন ও বোনাস ঠিকমতো হয়েছে৷ অধিকাংশ ব্যাংকের কর্মীরাও নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-বোনাস পেয়েছেন৷ তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করা কর্মীরা বিপদে পড়েছেন৷ চাকরি থাকলেও বেতন কমে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র বোনাস দিয়েছে৷ একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার বলেন, ‘‘এই মহামারির মধ্যেও আমরা ঠিকভাবেই বেতন ও বোনাস পেয়েছি৷ আমার স্বামীও একটি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন৷ কিন্তু আশপাশের মানুষগুলো এতটাই খারাপ অবস্থায় আছে, সেটা দেখে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছাটাই নষ্ট হয়ে গেছে৷ তাই এবার আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোরবানির টাকা দিয়ে গরিব মানুষকে খাবার কিনে দেবো৷ তবে এটা তো সমাধান না৷ মানুষ কাজ করতে চায়৷ কীভাবে তাদের কাজে নিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টাই করা দরকার৷”
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট
আর মাত্র দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা৷ গত ১৭ তারিখ থেকে সরকারি বিধি অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসেছে কোরবানির পশুর হাট৷ তবে করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও হাটগুলোতে দেখা গেল না কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে গরু
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, ছাগল, মহিষসহ কোরবানির পশু ট্রাক, পিকআপে করে ঢাকার হাটগুলোতে আনা হচ্ছে৷ ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এসব বাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, রাজধানীতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পরিবহণ খরচ অনেক বেশি
ঢাকার বিভিন্ন হাটের ব্যাপারিরা জানিয়েছেন, কোরবানিতে পশু পরিবহণে তাদের দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে৷ ট্রাকপ্রতি অঞ্চলভেদে খরচ ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা৷ তার উপর পশু যদি বিক্রি না হয়, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে৷ তাই লোকসান হলেও পশু বিক্রি করে যেতে চান তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পিপিই পরে হাটে
ঢাকার গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে গাবতলি গরুর হাটে এসেছেন ব্যাংকার বেনজির ওয়াহিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘একাধিক ব্যাপারির সাথে কথা বলে হতাশ হতে হলো৷ গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন তারা৷ জানি না আজকে গরু কেনা হবে কিনা৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাম নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
এবারের কোরবানির পশুর দাম নিয়ে বিপরীত কথা বলছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা৷ খরিদ্দাররা যে দাম বলছেন, তাতে গরুর ভরণপোষণের খরচই উঠবে না৷ অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা যে দাম হাঁকছেন তাতে এবার আর পছন্দসই গরু কেনা হচ্ছে না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাস্ক নেই
ঢাকার একাধিক কোরবানির হাটে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ব্যাপারিসহ পশু বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই৷ মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে পাবনা থেকে ১১টি গরু নিয়ে আসা মোতাসসেম আলি বলেন, ‘‘একটু আগেই গোসল করলাম, তাই এখনো মাস্ক পরা হয় নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বাস্থ্যবিধিতে অনীহা
ঢাকার হাটগুলোতে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে ঢিলেঢালা চিত্রই পাওয়া গেল৷ কর্তৃপক্ষ মাইকে বারবার স্বাস্থ্যবিধির কথা মনে করিয়ে দিলেও সেদিকে কারো খুব একটা ভ্রূক্ষেপ নেই৷ মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে কেউ বলছেন গরমের কথা, কেউ বলছেন করোনায় ভীত না, কেউবা মুচকি হেসে চলে যাচ্ছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ
ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট গাবতলিতে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং বেসরকারি সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হাটে আসা প্রত্যকেকে মাস্কের বিষয়ে সচেত করতে ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে দেখা গেল৷ সেখানকার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকার নয়টি এবং চট্টগ্রামের তিনটি হাটে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গরুর গলায় মালা
কোরবানির জন্য পশু কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একজনকে মালা কিনতে দেখা গেল৷ তিনি জানালেন, ‘‘কোরবানির পশুকে মালা পরিয়ে নিয়ে যাবেন৷ এতে এক ধরনের ঈদের আমেজ কাজ করে, দেখতে ভালো দেখায়, উপরন্তু বাসার বাচ্চারাও খুশি হয়৷’’ জানালেন ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি মালা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি
ঢাকার গাবতলি হাটকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশ ও র্যাবের ওয়াচ টাওয়ার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ দেখা গেল৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘হাটে যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হাটে উঠেছে উট এবং দুম্বা
গাবতলি হাটে উট ও দুম্বা দেখতে মানুষ ভিড় করছেন৷ বিক্রেতা আজাদ রহমান জানান, উটটির আনুমানিক ওজন ১৩ মন, দাম চাইছেন ২৫ লাখ৷ অন্যদিকে দুম্বাগুলোর প্রতিটির ওজন দুই মণের মতো আর দাম ৪-৫ লাখ টাকা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রথমবার হাটে
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো, নুরুজ্জামান ছোট বোন লামিয়া আকতারকে প্রথবারের মতো কোরবানির হাট দেখাতে নিয়ে এসেছেন৷ মাদ্রাসায় চতূর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া লামিয়া জানায়, সে খুব খুশি৷ এত গরু সে আগে কখনো দেখেনি৷ তবে বড় আকারের গরু দেখে ভয়ও পেয়েছে সে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জ্যামে অসুস্থ পশু
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু আনার সময় পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যাপারি৷ সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে জ্যামে৷ চার ঘণ্টার রাস্তা ১২-১৩ ঘন্টা লাগায় অনেক পশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মানা হচ্ছে না নির্দেশনা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে প্রধান সড়কের পাশে কোন ধরনের কোরবানির হাট না বসানোর নির্দেশনা থাকলেও পুরান ঢাকার ধোলাইখালে দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র৷ সেখানে যানবাহন চলাচলের প্রধান রাস্তা বন্ধ করে বসানো হয়েছে পশুর হাট৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গরু নেয়ার পালা
ঢাকার গাবতলি থেকে ঈদের তিনদিন আগে গরু কিনেছেন ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন৷ নিয়ে যাচ্ছেন ধানমণ্ডিতে৷ জানালেন, একটু আগেভাগেই গরু কিনেছেন এবার৷ এতে শেষের দিকে দামের অতিরিক্ত কম-বেশির ঝামেলায় পড়তে হবে না৷