1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদে তাদের সেমাই কেনার টাকাও নেই

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ জুলাই ২০২১

একটি ল্যান্ড ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন আলমগীর হোসেন৷ করোনা মহামারিতে তার চাকরি গেছে৷ লজ্জায় বাড়িও যেতে পারেন না৷ এ অবস্থা অনেকেরই৷

সাম্প্রতিক ঢাকা শহরের ছবিছবি: Mortuza Rashed/DW

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে আলমগীর বললেন, ‘‘আমি চাকরি করি, এলাকার লোকজন জানে৷ গত বছরও কোরবানি দিয়েছি৷ একটু পরেই সেমাই কিনতে হবে, এবার সেই পয়সাটাও নেই৷ কোরবানি দেবো কিভাবে? লজ্জায় বাড়ি যেতে পারি না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন পথে পথে ঘুরছি৷ কারো কাছে হাতও পাততে পারি না৷ কষ্টের কথা কাকে বলবো? আপনি শুনে হয়ত লিখবেন, তাতে আমার কী লাভ হবে? আমার তো জীবন চলছে না৷ এর মধ্যে আবার ১৪ দিনের লকডাউন আসছে, কীভাবে চলবো জানি না৷’’

একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাজেদুল ইসলাম মিলন৷ করোনা মহামারি শুরুর পর বেতনের ১৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ গত বছর ঈদে পুরো বোনাস পেলেও এবার বোনাসের প্রায় ৪০ ভাগ কম পেয়েছেন৷ তার পক্ষেও এবার আর কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ ডয়চে ভেলেকে মিলন বলেন, "আমার তো তা-ও চাকরি আছে৷ ৪০ ভাগ কমিয়ে দিলেও বোনাস তো পেয়েছি৷ কিন্তু যাদের চাকরি চলে গেছে, তারা কিভাবে চলছে, একবার চিন্তা করে দেখেন৷ আমরা আসলেই খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি৷ কিন্তু সেই কথাগুলোও কাউকে বলতে পারছি না৷”

‘লজ্জায় বাড়ি যেতে পারি না’

This browser does not support the audio element.

শুধু আলমগীর হোসেন বা সাজেদুল ইসলাম মিলন নয়, এমন অসংখ্য মানুষ এবার ঈদে কোরবানি দিতে পারছেন না৷ কেউ আগে একাই একটা গরু কোরবানি দিলেও এবার হয়ত ভাগে দিচ্ছেন৷ যারা সরকারি চাকরি করেন, তারা ঠিকমতো বেতন-বোনাস পেয়েছেন৷ কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই খারাপ৷ বড় একটা শ্রেনি তাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছে না৷ লজ্জায় এলাকায় যেতে পারছে না৷ ঢাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে থাকার মতো অবস্থাও নেই অনেকের৷

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে পড়েছে করোনার প্রভাব৷ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে পুরো বেনাস দিয়েছে৷ আর আংশিক ধরলে এটা ৩০ শতাংশ হবে৷ এ তো বললাম বোনাসের কথা৷ বেতনের অবস্থা আরো খারাপ৷ খুবই নামকরা প্রতিষ্ঠান, মালিকরাও অভিজাত-ধণাঢ্য, সেই সব প্রতিষ্ঠানেও কয়েক মাসের বেতন বাকি পড়েছে৷ বহু টেলিভিশন বেতন দেয়নি, বোনাসও দেয়নি৷ আজ দু-একটি প্রতিষ্ঠানে বোনাস দেওয়ার কথা৷ আমরা তথ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়গুলো জানিয়েছি৷ তিনি কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ ভালো দেখছি না৷’’

কুদ্দুস আফ্রাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা এই মহামারিতে সামনে থেকে কাজ করেছে৷ তারা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেন, লেখেন৷ অথচ এই সাংবাদিকরাই যে কতটা কষ্টে আছেন সেটা আপনাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না৷”

গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থা দৃশ্যত গত বছরের তুলনায় ভালো৷ বিজিএমইএ'র তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানেই বেতন ও বোনাস ঠিকমতো হয়েছে- এমন দাবি করে ডয়চে ভেলেকে এমন কথাই বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান৷ শ্রমিক নেত্রী বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তারও সেটা স্বীকার করলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "এবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই বেতন-বোনাস হয়েছে৷ সরকারও আগে থেকে তৎপর ছিল৷ আমরাও তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছি৷ ফলে কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷ শুধু গাজীপুরে একটু সমস্যা হয়েছে৷”

তবে মালিবাগের আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিক সালমা আক্তার মিম ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘কমপ্লায়েন্স কারখানায় বেতন ও বোনাস হলেও ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঠিকমতো জুন মাসের বেতনই দেয়নি৷ কারো হয়ত ১০ হাজার টাকা বেতন, তাকে ৭ হাজার টাকা দিয়েছে৷ আর এসব শ্রমিকের বোনাস তো দেড়-দু'হাজার টাকা৷ আমার সঙ্গে থাকে এমন অনেকের খবরই আমি জানি৷ আমার প্রতিষ্ঠানে বেতন-বোনাস সবই দিয়েছে৷ এমনকি জুলাই মাসের ১০ দিনের বেতনও দিয়েছে৷ তবে কয়েকটি মেশিন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায়- এমন জায়গাগুলোতে শ্রমিকরা অনেক কষ্টে আছেন৷”

‘ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঠিকমতো জুন মাসের বেতনই দেয়নি’

This browser does not support the audio element.

রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাশেদুল করিম মুন্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে যা-ই বলুক না কেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই অন্তত ২৫ ভাগ কর্মীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে৷ আমি হয়ত নিজ তাগিয়ে অফিস বন্ধ থাকার পরও সব কর্মীকে পুরো বেতন ও বোনাস দিয়েছি, কিন্তু বহু প্রতিষ্ঠানের এই সক্ষমতা নেই৷ গত বছর আমাদের অর্ডার কিছুটা কম থাকলেও এবার কিন্তু অর্ডার ভালো৷ প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি উৎপাদনে ছিল৷ এবার লকডাউনে হয়ত ১৪ দিন বন্ধ থাকবে৷ আমাদের হাতে কাজ আছে৷ ঠিক মতো কাজ করতে পারলে তো কর্মীদের বেতন-বোনাসে সমস্যা হওয়ার কথা না৷’’

জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন ও বোনাস ঠিকমতো হয়েছে৷ অধিকাংশ ব্যাংকের কর্মীরাও নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-বোনাস পেয়েছেন৷ তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করা কর্মীরা বিপদে পড়েছেন৷ চাকরি থাকলেও বেতন কমে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র বোনাস দিয়েছে৷ একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার বলেন, ‘‘এই মহামারির মধ্যেও আমরা ঠিকভাবেই বেতন ও বোনাস পেয়েছি৷ আমার স্বামীও একটি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন৷ কিন্তু আশপাশের মানুষগুলো এতটাই খারাপ অবস্থায় আছে, সেটা দেখে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছাটাই নষ্ট হয়ে গেছে৷ তাই এবার আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোরবানির টাকা দিয়ে গরিব মানুষকে খাবার কিনে দেবো৷ তবে এটা তো সমাধান না৷ মানুষ কাজ করতে চায়৷ কীভাবে তাদের কাজে নিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টাই করা দরকার৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ