1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদে ‘১১ দিনের ছুটিতে' কেমন থাকবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি?

২৩ মার্চ ২০২৫

সরকারি হিসেবে ৯ দিন হলেও বাস্তবে ঈদে টানা ১১দিন ছুটি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে। টানা ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা, ব্যবসা বাণিজ্য আর শিল্প উৎপাদনে কী পরিস্থিতি হবে?

ফাইল ছবি: ঈদে বাড়ি ফেরা
২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাছবি: bdnews24.com

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর হতে পারে। ওই তারিখ ধরে আগেই পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। কিন্তু ওই ছুটি শুরুর আগের দিন ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। একই সঙ্গে একই দিন পবিত্র শবে কদরেরও ছুটি। ফলে বাস্তবে ছুটি শুরু হচ্ছে ২৮ মার্চ থেকে।

ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। তার পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এখন ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এই ছুটি শুরুর দুই দিন আগে আছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি। পরদিন বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ এক দিন অফিস খোলা থাকবে। ওইদিন যদি ঐচ্ছিক ছুটি নেন তাহলে ছুটি দাঁড়াবে টানা ১১ দিন।

তবে সরকারি কর্মচারি  ও স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি বাদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এত দীর্ঘ ছুটি নাও হতে পারে। পত্রিকার মালিকদের সংগঠন নোয়াব  ঈদের ছুটি তিনদিনই রেখেছে এখন পর্যন্ত। তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে একদিন বাড়তে পারে। আর পোশাক কারখানাগুলো ছুটি নির্ধারণ করে কর্মীদের সাথে আলোচনা করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য কোনো কোনো এলাকায় ঈদের আগে পরে  বিশেষ বিবেচনায় খোলা থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার  রাসেল আহমেদ জানান, "এই সময়ে পোশাক কারখানাগুলো সাধারণত ঈদের আগের দিন থেকে ছুটি দেয়। আর কতদিন ছুটি ভোগ করবে তা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে। ফলে একেক কারখানায় একেক রকম ছুটি । তবে সরকারি ছুটির কম হয়না। ”

তিনি বলেন, "ক্রেতাদের অর্ডার ঠিক সময়ে সরবরাহ করার জন্য এই লম্বা ছুটির আগে ওভারটাইম করিয়ে সরবরাহ ও  উৎপাদন ঠিক রাখা হয়। আগাম শিপমেন্টও করা হয়। ফলে ঈদের আগে রপ্তানি বেড়ে যায়। ঈদের পরে কমে।”

"আর জরুরি চাহিদা মেটাতে পোশাক কারখানাগুলোতে পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করা হয়,” বলেন তিনি।

শুধু তিন-চারদিনের জন্য নিরাপত্তা বাড়ালে হবেনা: মোজাম্মেল

This browser does not support the audio element.

শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, "পরিস্থিতির কথা বলে ঈদের দিনও পোশাক কারখানা খোলা রাখার নজীর আছে। এবার যেযন তেমন না হয়।” তিনি বলেন, "পোশাক কর্মীরা সরকারি ছুটির বাইরে ছুটি নিলে পরে তাদের কাজ করে দিতে হয়।”

আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করেন এমন একজন ব্যবসায়ী আহমেদ হোসেন বলেন, "আমাদের ছুটির সাথে মিল রেখে তো বিশ্ব চলেনা। ফলে ঈদের দিনও আমাদের অফিস খোলা রাখতে হয়। আর বন্দরগুলোতে ছুটিতেও সীমিত পরিসরে কাজ চলে।” 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘ এই ছুটিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে? ছুটির সময়ে রাজধানী ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যায়। আর  লম্বা ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ নানা প্রতারণা ও  অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শঙ্কা আছে সারাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "মহাসড়কের নিরাপত্তা এবার নড়বড়ে।  মহাসড়কে এমনিতেই ডাকাতি হচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকলে একার ডাকাতের  কবলে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর লম্বা ছুটির কারণে ঢাকা থেকে ধাপে ধাপে মানুষ ঢাকার বাইরে যাবে। তাই শুধু তিন-চারদিনের জন্য নিরাপত্তা বাড়ালে হবেনা।”

"আরেকটি বিষয় হলো যেভাবে ছিনতাই হচ্ছে তাতে ঈদের ঘরমুখো মানুষ বাসা থেকে বাস, রেল বা লঞ্চ ষ্টেশন পর্যন্ত নিরাপদে  যেতে পারেন কী না তাও আশঙ্কার বিষয়। কারণ এই সময়ে মানুষ গভীর রাতে বা ভোর রাতেও স্টেশনে যায়,” বলেন তিনি।

এর বাইরে ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টি, প্রতারক দল, টানা পার্টি, মলম পার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধীরা সক্রিয় থাকে। আছে জাল টাকার কারবারিরা।  তার কথা, "এই বিষয়ে শুধু পুলিশ সক্রিয় থাকলে হবেনা। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।”

যাত্রী  কল্যাণ সমিতির মতে এবার ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ ঈদের সময় যার যার এলাকায় যাবেন। লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।  তার মতে, "ঈদে এই সুযোগে সড়ক মহাসড়কে নতুন রঙ দিয়ে লক্করঝক্কর বাস নামানোর প্রতিযোগিতা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। ফলে ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা আরো বেড়ে যেতে পারে।”

অক্সিলারি পুলিশ কাজ শুরু করে দিয়েছে: তালেবুর

This browser does not support the audio element.

তার কথা, "এবার ঈদে ঢাকা সিলেট, ঢাকা ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভোগান্তি হতে পারে। যানজট ছাড়াও বেশ কিছু স্পটে রাস্তার অবস্থা খারাপ।

এই ঈদে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। পুলিশের হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪টি। আগের মাস জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৭১। অথচ গত বছরের প্রথম দুই মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা ছিল ৬২টি। সারা দেশে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ৪০০ জনের একটি তালিকা করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঈদকে সামনে রেখে  পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশকে বিশেভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। সারাদেশেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কে ডাকাতিরোধে আমরা বিশেভাবে নজর দিচ্ছি।”

"আর চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধেও আমরা  ব্যবস্থা নিয়েছি। যাত্রী ও জনগণকে সতর্ক করছি। একইসঙ্গে এই  সময়ে প্রতারক চক্র বেশি সক্রিয় হয়। সেদিকেও আমাদের নজর আছে,” জানান তিনি।

এবার সড়ক পরিবহন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নগরের প্রতিটি বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে। এর মাধ্যমে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পর্যবেক্ষণ করবেন।

নগর বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, "এবার লম্বা ছুটিতে সবচেয়ে আশঙ্কা ঢাকা মহানগরীকে নিয়ে। কারণ  এবার অনেকই ঢাকা ছাড়বেন। তাই বাসাবাড়ি ফাঁকা থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকবে। আর এই ফাঁকা শহরে অপরাধ বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যেতে পারে।  এবার পুলিশের অবস্থাও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নড়বড়ে।”

"আমাদের সমস্যা হচ্ছে এই নগরে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করি।  কমিউনিটির মধ্যে বন্ধন নাই। তাহলে  কমিউনিটি নিরাপত্তা গড়ে উঠত। এখানে কমিউনিটি পুলিশিংও কার্যকর হয়নি। সেটা হলে পুলিশের ওপর নির্ভর করতে হতোনা,” বলেন তিনি।

তবে এবার প্রথমবারের মতো নগরীর নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকছে ৪২৬ জন অক্সিলারি পুলিশ। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে থেকে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান বলেন, "অক্সিলারি পুলিশ এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা পুলিশের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে, তথ্য দেবে এবং অপরাধীদের আটকে সহায়তা করবে। এরা মূলত ঈদের সময় বাসাবাড়ি, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় কাজ করবে।”

"এই দীর্ঘ ছুটিতে পুলিশ তো সক্রিয় থাকবেই তারা পাশাপাশি যারা শহর ছেড়ে যাবেন এবং শহরে থাকবেন তাদেরও আমরা নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন করছি। টিপস দিচ্ছি,” বলেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের আগে শিল্পে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে যাতে বেতন ভাতা নিয়ে সমস্যা না হয় তার জন্য শিল্প পুলিশ সক্রিয় আছে। আর যাতে কোনোভাবেই সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ না বাড়ানো হয় সে ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ