মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর৷ দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পর আসে ঈদ৷ কিন্তু এবার পৃথিবীর চিত্র ভিন্ন৷
বছরের শুরুতেই থাবা বিস্তার করতে থাকা কোভিড-১৯ এক সময় বৈশ্বিক মহামারির রূপ নেয়৷ একে একে লকডাউন হয়ে যায় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ৷
বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ, অনুষ্ঠান-আয়োজন৷ জনসমাগম বন্ধ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে একে একে অফিস-আদালত, গণপরিবহন, বাজার এবং প্রার্থনালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷
লকডাউনের মধ্যেই শুরু হয় রোজা৷ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো মুসলমান অধ্যুষিত এশিয়ার দেশগুলোতে বাজার ও শপিংমল খুলতে শুরু করে৷ ঈদ আনন্দে লোকজন বাজার করা শুরু করে৷
যদিও সব দেশের সরকারই স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে দোকান খোলার এবং ক্রেতাদের কেনাকাটা করার শর্ত বেঁধে দেয় এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়৷ কিন্তু বাস্তবে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কাউকে ওই সব নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি৷ লোকজন দোকানে ভীড় করে পছন্দের পোশাক, উপহার ও খাদ্যসামগ্রী কেনা শুরু করে৷
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ভীড়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে যাওয়া চার সন্তানের মা ইশরাত জাহান বলেন, ‘‘দুই মাসের বেশি সময় ধরে আমার বাচ্চারা ঘরবন্দি হয়ে আছে৷ ঈদ তো বাচ্চাদের জন্যই৷ আর তারা যদি নতুন পোশাক পরে ঈদ উদযাপন করতে না পারে তবে সারা বছর ধরে আমাদের এত পরিশ্রমের তো কোনো মানেই থাকে না৷''
পাকিস্তানে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়৷ ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশজুড়ে ব্যবস্থা গ্রহণে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে মতভেদ আছে৷
করোনা কালের ঈদ
করোনা মহামারির আতঙ্কের মধ্যেই এসেছে ঈদ৷ সৌদি আরব, মিশর, ওমানসহ বিশ্বের অনেক দেশ এবার ঈদ জামাত নিষিদ্ধ করে জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: imago images/Pacific Press Agency/R. S. Hussain
সৌদি আরবে কারফিউ
সৌদি আরবে আগামী ২৩ থেকে ২৭ মে ঈদুল ফিতরের ছুটি৷ করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সরকার ঈদের ছুটিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জনগণকে এ বছর ঘরেই ঈদের নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: Reuters
কাবা শরীফ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মার্চের মাঝামাঝি থেকেই মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী মুসল্লিদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Reuters
সৌদি আরবের পথে মিশর
সৌদি আরবের মত মিশরও ঈদের ছুটিতে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ১৯ মে বিকাল ৫টা থেকে দেশটিতে কারফিউ শুরু হয়েছে৷ এছাড়া ২৪ মে থেকে টানা ছয় দিন সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ছবিতে কায়রোর একটি মসজিদে অতীতে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাত দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
ওমানে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা-শাস্তি
ওমানের বাসিন্দাদের এবার বাড়িতে বসেই ঈদের নামাজ পড়তে হচ্ছে৷ দেশটিতে ঈদ জামাতসহ সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আইন লাঙ্ঘনে জেল-জরিমানার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ দেশটিতে বাইরে মাস্ক করা বাধ্যতামূলক৷
ছবি: Anne Allmeling
জর্ডানে যান চলাচলে কড়াকড়ি
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ জর্ডানে ঈদের দিন যান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Mazraawi
ইরানে দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে সংক্রমণ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে প্রথম করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করে৷ প্রথম দফার সংক্রমণ কমে গেলেও সেখানে দ্বিতীয় দফায় আবারও সংক্রমণ বাড়ছে৷ তারপরও দেশটির সরকার স্বাস্থ্যসুরক্ষার নিয়ম মেনে ঈদ জামাতের অনুমতি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/R. Zimmermann
তুরস্কে ঈদে চারদিনের লকডাউন
ঈদের ছুটির চারদিন দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ ২৩ মে থেকে কার্যকর হচ্ছে লকডাউন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/O. Dogman
পাকিস্তানে নিয়ম মেনে ঈদ জামাত
পাকিস্তানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয়ই বাড়ছে৷ তারপরও দেশটির সরকার স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানার শর্তে ঈদ জামাত আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বাংলাদেশে খোলা জায়গায় ঈদ জামাতে মানা
করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহ বা খোলা জায়গার বদলে বাড়ির কাছের মসজিদে পড়তে বলেছে সরকার৷ তবে কোলাকুলি ও হাত মেলানো বারণ৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
দিল্লিতে বাড়িতেই ঈদের নামাজ
এ বছর ঈদ বাড়িতে বসেই কাটানোর নির্দেশ দিলেন দিল্লির জামে মসজিদের শাহী ইমাম৷ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন ভারতের ইসলামিক স্কলাররা৷
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
যুক্তরাজ্যে প্রথমবার ঈদ জামাত হচ্ছে না
যুক্তরাজ্য সরকার দেশটির মুসলমানদের এবছর ঘরেই ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ দেশটিতে এই প্রথম ঈদের জামাত হচ্ছে না বলে জানান দেশটির ধর্মীয় নেতারা৷
ছবি: picture-alliance/empics/A. Chown
11 ছবি1 | 11
অর্থনীতি বাঁচাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমরান খান কঠোর লকডাউন আরোপে রাজি নন৷ তাই শুরুতে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করা হয়৷
দেশটিতে গণপরবিহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হয়েছে৷ লাহোরে একটি বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া সানা আহমেদ বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে অনেক কিছু কিনতে পারিনি৷ ঈদের পর আবার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে৷ তাই এখন আমাকে বাজার করতেই হচ্ছে৷ আমরা সারা জীবনের জন্য বন্দি থাকতে পারবো না,জীবন চালাতে হবে৷’’
এরকম আরো অনেকেই ভীড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে বাজার করেছেন৷ তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে ক্রেতা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম৷
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস ইন্দোনেশিয়ায়৷ সেখানেও চলছে ঈদ উৎসব৷ পশ্চিম জাভা প্রদেশের একটি বাজারে আসা সিতি নেসিয়া বলেন, ‘‘আমি আতঙ্কে আছি৷ কিন্তু তারপরও বাইরে এসেছি, ঈদে আমার নতুন পোশাক চাইই চাই৷’’
মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা৷ তবে রাজধানী কুয়ালালামপুরের এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘এ বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ লোকজন বাইরে আসতে ভয় পাচ্ছে৷ ভবিষ্যতের চিন্তা করে অনেকে অর্থ বাঁচাতেও এবার কেনাকাটা করছেন না৷''
বাংলাদেশেও গত ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে চলার শর্তে দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়৷ রাজধানীতে বড় বড় কয়েকটি শপিংমল এবং বাজার ক্রেতা না পাওয়ার আশঙ্কায় দোকান খোলেনি৷
তবে দেশজুড়ে জেলা শহরগুলোতে দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে৷ সরকার কেনাকাটার সময় শিশুদের সঙ্গে না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও পছন্দমতো পোশাক কিনে দিতে অভিভাবকরা সে নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করেননি৷
এসএনএল/এসিবি (এএফপি)
গণপরিবহণ বন্ধ, তবুও থেমে নেই বাড়ি ফেরা
বাস চলছে না, ছাড়ছে না ট্রেন কিংবা লঞ্চও৷ গণপরিবহণ বন্ধ, তবুও অনেক মানুষ ঢাকা থেকে ছুটছেন বাড়িতে৷ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন কিংবা প্রয়োজনের তাগিদে নানা উপায়ে তারা শহর ছাড়ছেন৷
ছবি: DW/S. Hossain
অলস কমলাপুর
এই সময়টায় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে কোলাহলমুখর থাকার কথা৷ সেখানে এখন যাত্রীদের ব্যস্ততা নেই৷ অলস পড়ে আছে শুধু ট্রেনগুলো৷
ছবি: DW/S. Hossain
নীরব সদরঘাট
এখন হয়তো সদরঘাটে পা রাখাটাই দায় হত যদি সময়টা ভিন্ন হত৷ অথচ ঈদের একদিন আগেও সেখানে মানুষের ছুটোছুটি নেই, ঘাট ছাড়ার জন্য লঞ্চের তাড়া নেই৷
ছবি: DW/S. Hossain
বাস আছে, যাত্রী নেই
ঈদের সময় মহাসড়কে জ্যামের কারণে টার্মিনালগুলোতে বাস সংকট আর যাত্রীদের অপেক্ষার দৃশ্যই চিরচেনা৷ কিন্তু গাবতলীতে এখন হাজারো বাস থাকলেও যাত্রীরা অপেক্ষায় নেই৷
ছবি: DW/S. Hossain
ফাঁকা টিকেট ঘর
ঢাকায় দূরপাল্লার বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো ঈদের আগে এমন ফাঁকা কি কল্পনা করা যায়! বাস যেহেতু ছাড়ছে না, তাই টিকেট ঘর খোলার প্রশ্নও আসছে না৷
ছবি: DW/S. Hossain
ডাবলডেকার যাবে না
সাধারণত রাজধানীতে চলাচল করলেও ঈদের সময় যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লায় পাড়ি দিতে দেখা যায় বিআরটিসির দ্বিতল বাসগুলোকে৷ সেগুলো এখন অকেজো পড়ে আছে ডিপোতে৷
ছবি: DW/S. Hossain
ট্যাক্সিক্যাবের কল নেই
মানুষকে বাস, ট্রেন বা লঞ্চ স্টেশনে কিংবা স্বল্পদূরত্বে পৌঁছে দিতে পারে টেক্সিক্যাবগুলোও৷ ব্যক্তিগত যান ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ এমন ঘোষণায় তাদেরও গ্যারেজ ছেড়ে বেরুনোর উপায় নেই৷
ছবি: DW/S. Hossain
তবুও আশা
এরপরও অনেকে ঘর থেকে বেরিয়েছেন ঢাকা ছাড়ার পথগুলোর উদ্দেশ্যে৷ সেখান থেকে যদি কোনো বাহন মিলে৷
ছবি: DW/S. Hossain
পায়ে হাঁটা
গাবতলীতে কোন বাহন মিলেনি৷ পায়ে হেঁটেই তাই যাত্রা শুরু করেছে এই পরিবার৷
ছবি: DW/S. Hossain
রোগী নন যাত্রী
রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা নেই৷ কাজেই রোগীর বাহনটিও অনেকের জন্য এখন বাড়ি ফেরার অবলম্বন৷
ছবি: DW/S. Hossain
পুলিশের চেকপোস্ট
শুরুতে ঢাকায় ঢোকা এবং বাহির হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট ছিল৷ তবে এখন তা অনেকটাই শিথীল৷
ছবি: DW/S. Hossain
ব্যক্তিগত যান
গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত যানে ঢাকা ছাড়তে কোন বাধা নেই৷ এমন সিদ্ধান্তের পরে রাস্তায় কার, মাইক্রোবাসের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
ভাড়ায় প্রাইভেট কার
কিন্তু প্রাইভেট কারে শুধু মালিকরা যাচ্ছেন না৷ অনেক রেন্ট এ কার বা ভাড়ায় খাটা প্রাইভেট কার এই সুযোগে নেমে পড়েছে যাত্রী পরিবহনে৷
ছবি: DW/S. Hossain
জনপ্রতি ৫০০ টাকা
মাইক্রোবাস বা কারে গাবতলী থেকে যাওয়া যাচ্ছে পাটুরিয়া ঘাটে৷ তবে গুণতে হবে জনপ্রতি ৫০০ টাকা৷
ছবি: DW/S. Hossain
মোটরসাইকেলও ভরসা
প্রাইভেট কার না হলে মোটরসাইকেলও আছে৷ রাইড শেয়ারিংয়ে চালানো বাইকাররা স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
সিএনজি অটোরিক্সা
কেউ কেউ সেএনজি চালিত অটোরিক্সাতেও রওনা হয়েছেন৷ তবে কতটুকুই আর যেতে পারবেন!
ছবি: DW/S. Hossain
লোকারণ্য ফেরিঘাট
যারা কষ্ট করে পৌঁছাতে পেরেছেন মাওয়া ফেরিঘাটে তাদের চিত্রটা ছিল এমন৷ হাজারো মানুষের এই ভিড়ে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন তাড়না বা উপায় নেই৷
ছবি: DW/S. Hossain
ফাঁকা রাজধানী
তবে ঢাকার রাস্তাগুলো ঠিকই ঈদের পুরনো রূপই ফিরে পেয়েছে৷