জীবিকার টানে শহরমুখো হতে হয়৷ কিন্তু শহর যেন কখনো আপন হয় না, হয় না ‘দেশ’ও৷ এখনও তাই অনেকের কাছে শহর যেন অনেকটা বিদেশ আর ‘দেশ' মানেই গ্রাম৷
বিজ্ঞাপন
সেই আপন ‘দেশে' না ফিরলে অনেকেরই ঈদ হয় না, পায় না উৎসবের পরিপূর্ণতা৷ তাই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে মানুষ দলে দলে পাড়ি জমান নাড়ির টানে, ‘দেশের’ পানে৷
কত মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যান বাংলাদেশে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়াটা সহজ নয়৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্ক পরিবর্তনে কিছুটা ধারণা মিলছে৷ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে পাঁচ দিনে এক কোটি সিম ঢাকা ছেড়েছে৷ শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য শহর থেকেও মানুষ ঈদ করতে পাড়ি জমাচ্ছেন গ্রামে৷
কিন্তু সেই পাড়ি জমানোটা কখনোই স্বস্তির হয় না ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য৷ বছর বছর নতুন ঈদ আসে কিন্তু পত্রিকার পাতায়, টিভি পর্দায় মানুষের ভোগান্তির একই চিত্রের দেখা মেলে৷ রেল, লঞ্চে ভয়ানক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করতে বাধ্য হন খেটে খাওয়া মানুষজন৷ আর এই পরিস্থিতিই বজায় থাকুক তা হয়ত কারো কারো জন্য কাঙ্খিতই৷ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে ঈদে অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকা লুটে নেন পরিবহণ মালিক ও চাঁদাবাজরা৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ কোটি ট্রিপের মাধ্যমে সড়ক, ট্রেন, বাস ও বিমানে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভাড়া আদায় হয়৷ তার মধ্যে আট হাজার কোটি টাকা আদায় হচ্ছে অন্যায়ভাবে৷ তারপরও নির্বিবাদে মানুষ বাড়ি পৌঁছাতে চান তার সর্বস্ব দিয়ে হলেও৷ স্বস্তির বিষয় এবার অন্তত বড় ধরনের যানজট থেকে নিস্তার মিলেছে৷
ঈদের সাজে দিল্লির জামে মসজিদ
দিল্লির জামে মসজিদ সেজে উঠেছে আলোয়। একসঙ্গে ২৫ হাজার মানুষ ইফতার করেছেন চাতালে। সেজে উঠেছে পুরনো দিল্লির এই এলাকা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
আলোকিত জামে মসজিদ
লাল পাথরে তৈরি জামে মসজিদ সাজানো হয়েছে হলুদ আলো দিয়ে। ঈদের আগে প্রস্তুতি তুঙ্গে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
একসঙ্গে ইফতার
রমজান মাসের শেষ দুই দিন জামে মসজিদের চাতালে বসে ইফতার করেছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ইফতারের পর একসঙ্গে নামাজ পড়েছেন তারা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সপিরবার ইফতার
এভাবেই পরিবার নিয়ে জামে মসজিদের চাতালে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। রোজার পরে শুরু হয়েছে খাওয়াদাওয়া।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সকলে স্বাগত
শুধু মুসলিম নয়, অন্য ধর্মের মানুষও ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন। খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়াই ইফতারের রীতি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ছোটদের নামাজ
বাবা-মায়ের সঙ্গে মসজিদে এসে নামাজ পড়ছে দুই খুদে। পরিবারের সকলের সঙ্গে তারাও রোজা রেখেছিল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মিনা বাজার
জামা মসজিদের দুই নম্বর গেট থেকে মিনা বাজারের দৃশ্য। খাবার থেকে পোশাক-- সব বিক্রি হচ্ছে এখানে। উপচে পড়েছে ভিড়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জুতোর দোকান
জুতোর ভিড়ে ঢাকা পড়ে গেছেন দোকানদার। ঈদের আগে এই সব জুতো বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
কাপড়ের দোকান
ঈদের আগে ভিড় উপচে পড়েছে জামা কাপড়ের দোকানের সামনে। ছোটদের জন্য বিক্রি হচ্ছে কুর্তা-পাজামা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মুঘলাই বিরিয়ানি
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরনের বিরিয়ানি পাওয়া যায়। দিল্লিতে মেলে মুঘলাই বিরিয়ানি। মিনা বাজারে তেমনই বিরিয়ানি নিয়ে বসে আছেন এই ব্যক্তি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
শরবত-এ-মহব্বত
দুধ, রুহ আফজা, তরমুজ-সহ একাধিক ফল দিয়ে তৈরি হয় শরবত-এ-মহব্বত। ইফতারের সবচেয়ে সুস্বাদু এই শরবত।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
করিমের গলি
জামে মসজিদের ঠিক উল্টো দিকে করিম, আল জওহর রেস্তোরাঁর গলি। ঈদ উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছে সেই গলি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ইফতারের স্টল
ইফতার উপলক্ষে মিষ্টির দোকানের সামনে তৈরি হয়েছে এই স্টল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
শাহি টুকরা
দিল্লির শাহি কা টুকরা অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি। পাঁউরুটি, দই, গুড়, ঘি দিয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি। দেওয়া হয় প্রচুর পরিমাণ শুকনো ফল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
শিরমালের কামাল
খোয়া, দুধ, শুকনো ফল দিয়ে তৈরি হয় এই রুটি। স্বাদে অল্প মিষ্টি। কোরমার সঙ্গেও যেমন খাওয়া যায় এই রুটি, তেমনই শুধু শুধুও খেয়ে ফেলা যায়। জামে মসজিদের উল্টো দিকের গলিতে শিরমালের এই দোকান শতাব্দী প্রাচীন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বইয়ের দোকানে
বইয়ের দোকানে ইফতারে বসেছেন সমস্ত কর্মীরা। দরিয়াগঞ্জের এই ইসলামিক বইয়ের দোকান বিখ্যাত।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
দিল্লির কাবাব
কাবাবের জন্য বরাবরই বিখ্যাত দিল্লি। তবে জামে মসজিদের সামনে এই কাঠি কাবাব এক কথায় লা জবাব।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
16 ছবি1 | 16
শুধু পরিবহণ নয়, রোযা-ঈদ মিলিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী, সুযোগসন্ধানীদের শিকারে পরিণত হন সাধারণ মানুষ৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুরই যেন ভেলকি লাগে৷ এবার নতুন সংযোজন ঈদের আগে বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে যাওয়া৷
তারপরও মহামারির শুরুর পর এবারই মানুষ বিধিনিষেধহীন এক ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের৷ তা দেশের অর্থনীতিতেও গত দুই বছরের চেয়ে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
শহরে কাজ করা মানুষটি পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কিনে বাড়ি ফিরেছেন৷ প্রবাসে থাকা সদস্যটি পরিবারের ঈদ উদযাপন আনন্দদায়ক করতে বাড়তি টাকা পাঠিয়েছেন৷ এই অর্থের প্রবাহ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আবারও চাঙা করে তুলবে৷
তারপরও ভুলে গেলে চলবে না এদেশে এখনও বিপুল মানুষ দারিদ্র্য রেখার নীচে বসবাস করেন৷ গত দুইবছর করোনা নতুন করে অনেককে সেই কাতারে নামিয়ে এনেছে৷ ঈদ আনন্দ তাই সবার দুয়ারে হাজির হবে সেটি বলা চলে না৷ যেমনটা হয়ত পৌঁছাবে হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়া কৃষকের কুটিরেও৷ এই আনন্দে তাদের কথা কি আমরা মনে রাখছি?