ঈশ্বরের গুণগান গাইতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা কীর্তন করে থাকেন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মন্দিরের পূজারিদের সাথে সুর মেলাচ্ছে এক কুকুর৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের পুনে রাজ্যের একটি মন্দিরের ঘটনা এটি৷ ভিডিওতে দেখা যায়, যন্ত্রসংগীতের সাথে ঈশ্বরভজন করছেন এক দল পুজারি৷ তাঁদের পাশেই একটি কুকুর৷ তবে কুকুরটি শুধু দাঁড়িয়ে নেই৷ সুরের তালে তালে, পূজারিদের সাথে যোগ দিয়েছে প্রার্থনাসংগীতে ৷ গলা উঁচিয়ে আর লেজ নাড়িয়ে এমনভাবে ডাকছে সে, মনে হচ্ছে যেন ঈশ্বরকে নিজের মনের আকুতি জানাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, প্রার্থনাগীত উপভোগও করছে কুকুরটি৷ নাড়াচ্ছে লম্বা লেজ আর পূজারত একজনের সাথে গাঁ ঘেষে যেন একটু ভালোবাসার দাবিই করছে প্রাণীটি৷ কুকুরটিকে নিরাশ করেননি সেই পুজারী৷শরীরে আর মাথায় হাত বুলিয়ে ভালোবাসা দিয়েছেন কুকুরটিকে৷
একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে থেকে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিওটি৷ টুইটে সুধমাদাতে জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার মন্দিরের কীর্তনে নাকি এভাবেই যোগ দেয় কুকুরটি৷ টুইটারের ছড়িয়ে পড়া এ ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার বার দেখা হয়েছে৷ আর কমেন্টে কুকুরটির প্রতি ভালোবাসা দেখাতেও ভোলেননি তাঁরা৷ পরের জন্মে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসবে এ কুকুরটি, এমন মন্তব্য করেছেন একজন৷
আরআর/এসিবি
কুকুর পুষলে আপনি অনেকদিন বাঁচবেন
হ্যাঁ, খোদ গবেষকরা বলছেন এ কথা৷ ৩৪ লাখ মানুষের জীবন-বৃত্তান্ত খুঁটিয়ে দেখে, দীর্ঘদিন গবেষণা করে তাঁরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কুকুর শুধু বিশ্বস্ত বলেই মানুষের বন্ধু নয়, কুকুর মানুষকে দীর্ঘজীবীও করতে পারে৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কারা করেছেন গবেষণা
বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের একটি গবেষক দল৷ প্রতিবেদনে তাঁরা বলেছেন, কুকুর পুষলে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা অনেকখানি কমে৷ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দেখতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Tetra Images
কুকুর পুষলে কীভাবে এবং কেন মৃত্যু ঝুঁকি কমে?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা খুব সহজ৷ গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কুকুর পুষলে কুকুরের মালিকের হাঁটাহাঁটি এবং শারীরিক কার্যকলাপ অনেক বেড়ে যায়৷ তাছাড়া কুকুর অনেকক্ষেত্রে বাইরের নানা জিনিসে মুখ দেয়ার কারণে ময়লা বহন করে আনে৷ ঘরে এসে মালিককে যখন চাটে, মানবশরীরের মাইক্রোবায়োমে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে৷ এই প্রভাবের কারণেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: imago/imagebroker
সবারই উপকার
সায়েন্টিফিক রিপোর্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো পরিবারে যদি একটি কুকুর থাকে, তাহলে সেই বাড়ির যিনি বা যাঁরা কুকুরটিকে বেশি সময় দেন, তাঁর বা তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ১১ ভাগ এবং হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি শতকরা ১৫ ভাগ কমে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Tetra Images
বেশি উপকার যাদের
তবে কুকুর পোষার উপকারটা বেশি হয় নিঃসঙ্গ মানুষদের৷ কারণ একা থাকলে বাধ্য হয়েই কুকুরকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়৷ পরিবারে অন্য কেউ থাকলে সেই সময়টা ভাগ হয়ে যায়৷ দেখা গেছে, কুকুর পোষার কারণে একাকী মানুষের মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৩৩ ভাগ এবং হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি ৩৬ ভাগ পর্যন্ত কমে৷
ছবি: Fotolia/E. Kharichkinan
কেমন কুকুর বেশি উপকারী?
কুকুর পুষলেই উপকার৷ তবে গবেষকরা বলছেন, টেরিয়ার, রিট্রিভার ইত্যাদির মতো শিকারি কুকুর পুষলে মৃত্যু এবং হৃদরোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি কমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Piccoli
কতটা ব্যাপক এবং বিশ্বাসযোগ্য এই গবেষণা?
সুইডেনের জাতীয় ডাটাবেজ থেকে ৩৪ লাখেরও বেশি মানুষের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়৷ তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাইয়ের ব্যাপ্তিটা প্রায় ১২ বছরের৷ ৪০ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সি মানুষদের যাবতীয় তথ্যই যাচাই করে দেখেছেন গবেষকরা৷ এমন এক গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা সিদ্ধান্তের ওপর তো আস্থা রাখাই যায়, তাই না?