1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঈশ্বর যে অধিকার দিয়েছেন, সরকার কেন তা কেড়ে নেবে?’

২ মে ২০১৭

ডা. নয়না প্যাটেল৷ ভারতে বাণিজ্যিক সারোগেসি শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই৷ এ সাক্ষাৎকারে সন্তান পেতে অক্ষম দম্পতিদের জন্য কেন, কীভাবে এই ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে – এমন অনেক বিষয়েই কথা বলেন তিনি৷

Indien Leihmutterschaft - Surrogacy Centre India (SCI) clinic in Neu-Delhi
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain

বিদেশিদের নিষিদ্ধ করায় আপনার প্র্যাক্টিসে কি এর কোনো প্রভাব পড়েছে?

স্বাভাবিক অবস্থায় একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমি অন্তত ৬০ থেকে ৯০ জন অন্তঃসত্ত্বা সারোগেট পেতাম৷ কিন্তু বিদেশিদের নিষিদ্ধ করার পর সংখ্যাটা ৪০ থেকে ৫০-এ নেমে এসেছে৷ এ মুহূর্তে অবশ্য আমার এখানে ৬২ জন অন্তঃসত্ত্বা রয়েছে৷ আসলে আমি আমার প্র্যাক্টিস নিয়ে ভাবি না৷ এটা যদি বন্ধও হয়ে যায়, আমার বহুমুখি বিশেষত্ব আছে৷ আমার এখানে ল্যাপ্রোস্কপি আছে, আইভিএফ আছে, কসমেটিক সার্জারির বিভাগ'সহ আরো অনেক কিছু আছে৷ তাই বাণিজ্যিক সারোগেসি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমি একটি দীর্ঘমেয়াদি নার্সিং কেয়ারের দিকে যাবো৷ তখন এখানে হয়ত এমন রোগীরা আসবেন, যাঁরা দীর্ঘদিনের জন্য নার্সিং কেয়ার পেতে চান, কিন্তু হাসপাতালে যেতে চান না৷ ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে আমরা এমন ৯০ জনকে চিহ্নিতও করেছি৷ সুতরাং এটা (সারোগেসি) যদি নিষিদ্ধ হয়, তাহলে সেই জায়গায় নার্সিং হোম হবে৷

সমস্যাটা হবে সারোগেসি করাতে ইচ্ছুক দম্পতিদের৷ তাঁরা তখন কোথায় যাবেন? সারোগেট মায়েদের জন্য অন্যের সন্তান ধারণ করা জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো সুযোগ৷ সেই সুযোগটা আর থাকবে না৷ ফলে তখন হয়ত তাঁদের কিছু টাকা জমানো, একটা বাড়ি তৈরি করা, বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানোর মতো স্বপ্নগুলো পূরণ করা আর সম্ভব হবে না৷ আমার চেনা এক সারোগেট মা তাঁর মেয়েকে মেডিক্যাল স্কুলে পড়াচ্ছে৷ সেই স্কুলে আমার ছেলেও পড়েছে৷ তিনি তিনবার তাঁর গর্ভ ভাড়া দিয়েছিলেন৷ তাঁর মেয়ে আগামীতে ডাক্তার হবে৷ 

Interview with Dr. Nayna Patel - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি তিনবার সারোগেট মা হয়েছেন?

হ্যাঁ, আগে এমন করা যেত৷ তাই ১১ বছরে তিনি তিনবার সারোগেট মা হয়েছিলেন৷ তাঁর মেয়ে এখন এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ছাত্রী৷ সুতরাং এটা তাঁদের অনেকের জন্যই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সুযোগ৷ বাণিজ্যিক সারোগেসি বন্ধ হলে সেটা আর থাকবে না৷ এবং সে কারণেই সহজ এই প্রশ্নটা উঠে আসছে যে, তাঁদের কী হবে? এছাড়া আমরা কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত যে প্রযুক্তি হাতের কাছে রয়েছে, তাকে অস্বীকার করছি৷ মনে রাখা উচিত, এখানে কিন্তু একজন নারী অন্য এক নারীকে সাহায্য করতে চাচ্ছে৷ আরো মনে রাখতে হবে যে, এটা মেয়েদের এমন একটা রোগ যার ক্ষেত্রে শুধু মেয়েরাই সাহায্য করতে পারে৷ জরায়ু প্রতিস্থাপন এখনো পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে৷ সেই পরীক্ষায় সাফল্য এসেছে, কিন্তু বিষয়টা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ৷ তাছাড়া এখনো আমরা জানি না যে, কতজনের ক্ষেত্রে এতে সাফল্য পাওয়া যাবে৷ সুতরাং সেখানে অনেক ‘যদি' এবং ‘কিন্তু' রয়েছে৷ প্রতি পাঁচ হাজারে একজন নারী জরায়ু ছাড়া জন্মেছেন৷ হিসেব করে দেখুন, সারা বিশ্বে এমন কতজন নারী আছে৷ তাঁদের জন্য সারোগেসি প্রয়োজন৷ তাঁরা কোথায় যাবেন?

আমার তো মনে হয়, এটা কোনো আইন দিয়ে বন্ধ করা যাবে না৷ এক দেশে নিষিদ্ধ করা হলে মানুষ অন্য দেশে যাবে, কেননা, মানুষ তো বাবা-মা হতে চায়৷

হ্যাঁ, এবং নিষিদ্ধ করলে এটা আন্ডারগ্রাউন্ডে, অর্থাৎ গোপনে চলতে পারে৷

এবার একটু অন্যরকম প্রশ্ন করি৷ আপনারা কি প্রাকৃতিক উপায়ে সারোগেসি করেন, নাকি সিজারিয়ানের মাধ্যমে?

আমাদের এখানে ৩০ ভাগ প্রাকৃতিক, ৭০ ভাগ সিজারিয়ান৷ তাছাড়া সব আইভিএফ রোগীদের বেলাতেই সিজারিয়ান বেশি হয়৷ শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ৷ আর সারোগেসির ক্ষেত্রে তো সকলেই আইভিএফ শিশু৷

বাচ্চা সিজারিয়ান হবে, নাকি প্রাকৃতিক উপায়ে হবে – এটা কে ঠিক করেন?

এটা ডাক্তার ঠিক করেন৷ যদি স্বাভাবিকভাবে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে কেউ-ই সিজারিয়ান করাতে চান না৷ কিন্তু ইন্টেন্ডেন্ট পেরেন্ট (আইপি) বা যে দম্পতি সারোগেসি করাচ্ছেন, তাঁরা যদি চান, তাহলে অনেকক্ষেত্রেই আমরা জোর খাটাতে পারি না৷ তবে সেই দম্পতি কখনোই দিন-ক্ষণ ঠিক করতে পারে না বা বলতে পারে না যে, বাচ্চাটা সিজারিয়ানে হতেই হবে৷

কেমন ব্যবস্থা থাকলে এই প্র্যাক্টিস চলতে পারে?

আমার মনে হয়, জাতীয় পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ রেজিস্ট্রেশন থাকলে যখনই আমার কাছে কোনো হবু সারোগেট মা আসবে, সারা দেশ তখনই জেনে যাবে আমার ক্লিনিকে একজন সারোগেট মা এসেছে৷ সারোগেট আসার পর থেকে যা যা হবে তার সব তথ্য-প্রমাণ কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে৷ আর রেজিস্ট্রেশনে যদি ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো কোনো ব্যবস্থা থাকে, তাহলে চিহ্নিতকরণ আরো সহজ হবে৷ জাতীয় পর্যায়ে না হলে রাজ্যেও এটা হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যের কাছে সব তথ্য থাকবে৷ রাজ্য সেগুলো কেন্দ্রকে জানাবে৷

প্রতারণার বিষয়টি যদি ওঠাতে চান তাহলে বললে বলতে হবে, আমরা সমস্ত লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করি৷ সারা ভারতই এখন ডিজিটালাইজড হতে চলেছে৷ ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে সব লেনদেন হওয়ায় কোথাও যে প্রতারণা হচ্ছে না, এটা জানা খুব কঠিন নয়৷ আরেকটা বিষয় হলো, ভারতে কিন্তু কোনো দম্পতি সারোগেট শিশুকে ফেলে চলে যান না৷ তাঁরা সবাই সন্তান চান৷ তারপরও বাচ্চা পরিত্যাগের বিষয়ে যথোপযুক্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের কথাও ভাবা যেতে পারে৷

আসল কথা হলো, নিষিদ্ধ করলে সারোগেসি হয়ত গোপনে চলবে৷ কিন্তু যদি নিয়ম করে দেওয়া হয়, তাহলে যাঁরা গর্ভ ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো অন্যায় হলে তাঁরা অভিযোগ করতে পারবেন৷ এ জন্য সারোগেটদের জন্য অভিযোগ কেন্দ্রও খোলা যেতে পারে৷ 

দুঃখজনক বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম দম্পতিদের মাত্র তিন শতাংশ সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিতে চান৷ এ কারণেই সারোগেট আর ইনফার্টাইল যুগলের সংখ্যা এত কম৷ অন্যদিকে যাঁরা জনমত বা মতামত তৈরিতে জড়িত, তাঁরা ৯৭ শতাংশ৷ তাই তাঁরা কিন্তু বোঝে না, কেন সারোগেসি দরকার৷ তাঁরা বলেন, ‘‘সন্তান দত্তক নাও, এটা করো না৷'' আমার পরিচিত এমন দম্পতি আছেন, যাঁরা দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন আবার সারোগেসিরও চেষ্টা করছেন৷ তাঁদের কথায়, ‘‘দত্তক নিতে পারলে আমরা হয়ত সারোগেসির প্রক্রিয়াটা বন্ধ করে দেবো৷'' আসল কথা হলো, তাঁরা সন্তান চান৷ কিন্তু দত্তক নেওয়া এখনও কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ, সারোগেসিও সেরকম৷ এ কারণে এত মানুষকে এই পৃথিবীতে যে সন্তানহীন থাকার কষ্টটা মেনে নিতে হচ্ছে, সেটা ভাবতে খুব খারাপ লাগে৷ তাঁরা যদি সন্তান চান, পাবেন না কেন? লোকে প্রশ্ন তোলে, ‘‘পরবর্তী প্রজন্মে নিজের জিন দেখতেই হবে কেন?'' কিন্তু এটা তো যার যার পছন্দ! আপনি তো কাউকে জোর করে পরবর্তী প্রজন্মে নিজের জিন না রাখতে বাধ্য করতে পারেন না৷ এটা তো তাদের অধিকার৷ এমনকি ঈশ্বরও সে অধিকার দিয়েছেন৷ সরকার কেন এ অধিকার হরণ করবে?

বিদেশিদের জন্য সারোগেসি কবে নিষিদ্ধ হলো?

২০১৫ সালের নভেম্বরে৷ বিদেশিরা কিন্তু ভারতীয়দের ঠকায়নি৷ আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করুন৷ অ্যামেরিকায় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সারোগেসি হয়৷ সমস্ত ইউরোপ থেকে মানুষ যায় সেখানে৷ ভারতীয়দের মধ্যে যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরাও সেখানে যান৷ অ্যামেরিকাকে নিয়ে কিন্তু কোনো কথা হয় না৷ অথচ ভারতের প্রসঙ্গ উঠলেই সবাই ভারতকে দোষারোপ করতে শুরু করে৷ বলা হয়, বিদেশিরা এখানে এসে গরিব নারীদের ঠকায়৷ কিন্তু একটা লেখা দেখাতে পারবেন না, যেখানে বলা হয়েছে ইউরোপীয়রা অ্যামেরিকায় গিয়ে সেখানকার গরিব নারীদের ঠকিয়েছে৷

আমার মনে হয়, মিডিয়া, কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নত দেশগুলোর মতো সারোগেসি হোক, এটা চায় না৷ আর সেজন্যই বাণিজ্যিক সারোগেসি বন্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তারা৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ