শিনজিয়াং অঞ্চলে উইগুর ও অন্য মুসলিমদের সঙ্গে চীনের আচরণকে আবারো ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ চীন ছাড়াও মিয়ানমার, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সাউথ সুদানের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ আনা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
উইগুরদের বন্দি করে রাখা, জোরপূর্বক শ্রম আদায়সহ নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ এই আচরণকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশটি৷ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে চীন৷
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসের কাছে জমা দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনেও বলেছে চীন শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুরসহ অন্য মুসলিম ও নৃগোষ্ঠী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর উপর গণহত্যা চালাচ্ছে৷ বন্দি করা, নির্যাতন চালানো, জোরপূর্বক বন্ধ্যাত্বকরণ, নিষ্ঠুরতাসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে৷
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আগেই শিনঝিয়াং এর বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল৷ গত ৯ জুলাই সেখানে আরো ১৪টি কোম্পানির নাম যুক্ত করা হয়েছে৷ এসব প্রতিষ্ঠান এখন থেকে কোন মার্কিন বিনিয়োগ পাবে না৷
বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ‘পুনঃশিক্ষা ক্যাম্পের’ নামে শিনজিয়াংয়ে প্রায় ১০ লাখ উইগুর, কাজাখ, হুই ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটক করে রেখেছে চীন৷ বেইজিংয়ের অভিযোগ উইগুররা বিচ্ছিন্নতাকামী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত৷
এদিকে সোমবারের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে চীন ছাড়াও মিয়ানমার, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া ও সাউথ সুদানের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে দেশগুলোর বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
এফএস/এসিবি (ডিপিএ, এপি)
২০১৯ সালের নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷