চীনের উইগুর মুসলিমদের সমর্থনে পথে নামলো হংকং৷ কিন্তু জোর করে সেই বিক্ষোভ বানচাল করে দিলো পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
উইগুরদের পতাকা নিয়ে তাদের সমর্থনে হংকং এর রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার খানেক বিক্ষোভকারী৷ সেখানে একজন মাইকে বলছিলেন, ''এটা ভুললে চলবে না, আমাদের লক্ষ্য এক৷ আমরা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি৷ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যে দমন চালাচ্ছে, আমরা তার বিরুদ্ধে লড়ছি৷'' এর মধ্য়েই পুলিশ ঢুকে গোলমরিচের গুড়ো স্প্রে করতে থাকে৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা বোতল ও পাথর ছুঁড়তে থাকে৷ কিছুক্ষণের মধ্য়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান৷
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, চীন অন্ততপক্ষে ১০ লাখ উইগুর ও অন্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের জেলে পুরেছে বা উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং-এ শিবিরে রেখেছে৷ চীন অবশ্য দাবি করেছে, ওই শিবিরগুলি আসলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ শিবির৷ সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় এই শিক্ষা জরুরি৷ যেভাবে উইগুরদের বিরুদ্ধে চীন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর তারা এই নয়া তত্ত্ব নিয়ে এসেছে৷
মুসলমানরা বন্দিশিবিরে, পর্যটকরা শিনচিয়াংয়ে
চীনের শিনচিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষিত করে তোলার নামে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের এমন ভাবমূর্তি দূর করতে সেখানে পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা চলছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
মুসলিমদের বাস
চীনের শিনচিয়াং রাজ্যে মূলত উইগুরসহ তার্কিক ভাষা বলা অন্য মুসলিমদের বসবাস ছিল৷ গত শতকের ৫০ থেকে ৭০ দশকের মধ্যে সেখানে সরকারিভাবে হান চীনাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ তখন থেকে মুসলমান ও হানদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
মুসলমানেরা বন্দিশিবিরে
মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষা দেয়ার নামে চীন সরকার কয়েক বছর আগে মুসলিমদের বিভিন্ন ক্যাম্পে (ছবি) নিয়ে যাওয়া শুরু করে৷ সেখানে তাঁদের মান্দারিন ভাষা শেখানো ও কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয় বলে চীনের দাবি৷ তবে জাতিসংঘের অভিযোগ, ‘ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ’ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্য আনতে উইগুরদের ‘রাজনৈতিক শিবিরে’ জোর করে আটকে রাখা হয়েছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
নজরে রাখতে অ্যাপ
তথাকথিত এসব বন্দিশিবিরের বাইরে যে উইগুররা আছেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর নজর রাখতে সম্প্রতি একটি অ্যাপ চালু করেছে চীন৷ এই অ্যাপের সাহায্যে উইগুরদের ৩৬ ধরনের আচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ যেমন, প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি না মেশা, স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, ‘উৎসাহী হয়ে’ মসজিদে দান করা ইত্যাদি৷
এছাড়া ফেসিয়াল-রিকগনিশন ক্যামেরা, ওয়াইফাই স্নিফার্স (এর মাধ্যমে চেকপয়েন্ট দিয়ে পার হওয়ার সময় মানুষের কাছে থাকা মোবাইলের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়), পুলিশি চেকপয়েন্ট ইত্যাদির মাধ্যমেও উইগুরদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Azubel
পর্যটক বাড়ছে
তাকলামাকান মরুভূমি, বরফে ঢাকা তিয়ানশান, দেখার এমন অনেক কিছুই আছে শিনচিয়াংয়ে৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারের আচরণ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে শিনচিয়াং সম্পর্কে নেতিবাচক খবর এলেও সেখানে পর্যটক যাওয়া কমেনি, বরং বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে সরকারি তথ্য বলছে৷ অবশ্য বেশিরভাগই দেশি পর্যটক৷
ছবি: AFP/G. Baker
পর্যটকদের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে
২০১৪ সালে শিনচিয়াং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটার পর সেখানে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল৷ এই অবস্থায় প্রাদেশিক সরকার পর্যটক প্রতি ৭৩ ডলার বা ছয় হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এখনও সেটা আছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই
শিনচিয়াংয়ের সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই পর্যটকদের৷ মুসলমানদের যে শিবিরগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়েছে তার আশেপাশে যাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন এএফপির দুই সাংবাদিক৷ এছাড়া শিনচিয়াংয়ে চেকপয়েন্ট ও সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা৷ অবশ্য এতসব নিরাপত্তা তল্লাশিকে সমস্যা মনে করছেন না চীনা পর্যটকরা৷
ছবি: Reuters/T. Peter
কোথায় ভয়!
শিনচিয়াংয়ের কাশগর শহরে উইলিয়াম লি নামের এক পর্যটকের সঙ্গে এএফপির প্রতিবেদকদের দেখা হয়েছিল৷ তিনি জানান, ঘুরতে গিয়ে তাঁর মনে হয়নি যে উইগুররা কোনো ভয়ের মধ্যে (যদি না আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়) আছেন৷ ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি,’’ বলেন লি৷
ছবি: AFP/G. Baker
8 ছবি1 | 8
হংকং-এর প্রতি চীন 'এক দেশ দুই ব্যবস্থা' নিয়ে চলেছে৷ ফলে হংকং-এর লোকেরা কিছু বাড়তি স্বাধীনতা ভোগ করেন, যা মূল ভূখণ্ডের লোকেরা পান না৷ কিন্তু ক্রমশ হংকং এর লোকেদের মনে হচ্ছে, তাঁদের স্বাধীনতার ওপর চীন থাবা বসাচ্ছে এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাদের অবস্থা মূল ভূখণ্ডের লোকেদের মতো হবে৷ তারা ওই স্বাধীনতা হারাবেন৷ হংকং এর বিক্ষেোভকারী ক্যাথরিনের দাবি, ''চীন সরকার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ চায়৷ কোনও বিক্ষোভ বা ভিন্নমত তারা সহ্য করতে পারে না৷ শিনজিয়াং-এ যা হচ্ছে, তা হংকং-এও হবে৷'' ২০৪৭ সালে হংকং এর বিশেষাধিকার শেষ হবে৷ তখন চীনের অন্য জায়গার মতো অবস্থা হংকং-এর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিক্ষোভকারীরা৷