উইগুর অত্যাচার: শিনজিয়াং থেকে আমদানি বন্ধ অ্যামেরিকায়
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
দশ লাখেরও বেশি উইগুর মুসলিমদের শ্রম শিবিরে জোর করে কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ। তাই শিনজিয়াং প্রদেশ থেকে আমদানি বন্ধের আইনে সায় দিল মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ী মহলের চাপ ছিল। তা সত্ত্বেও মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে সর্বসম্মতিতে পাস হয়ে গেল শিনজিয়াং থেকে কোনো জিনিস আমদানি না করা সংক্রান্ত বিল। সদস্যদের মতে, উইগুরদের দিয়ে জোর করে শ্রম শিবিরে রেখে কাজ করানো হয় শিনজিয়াং প্রদেশে। দশ লাখেরও বেশি মানুষকে এই অত্যাচারের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই অত্যাচার বন্ধ করার জন্য শিনজিয়াং প্রদেশের জিনিস আমদানি নিষিদ্ধ করা হলো।
জাতিসংঘও বলছে, উইগুর মুসলিমদের জোর করে শিবিরে রেখে এই কাজ করাচ্ছে চীন। অ্যামেরিকা ও অন্য দেশগুলি এ নিয়ে অতীতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখন অ্যামেরিকা চাপ দিয়ে এই অত্যাচার বন্ধ করতে চাইছে।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ''দুঃখের কথা হলো, জোর করে কাজ করানো মানুষরা যে জিনিস তৈরি করছেন, সেগুলি অ্যামেরিকার দোকানে ও বাড়িতে ঠাঁই পাচ্ছে। বেইজিং-কে আমাদের সরাসরি বার্তা দিতে হবে। এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।''
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
একটা সমীক্ষা অনুযায়ী, অ্যামেরিকায় চীন থেকে যে বস্ত্র আসে তার ২০ শতাংশতে অন্ততপক্ষে শিনজিয়াং-এ তৈরি সুতো থাকে।
মার্কিন চেম্বারস অফ কমার্স বা বণিকসভা এই বিলের বিরোধিতা করছিল। তাঁদের মতে, এর ফলে এমন অনেক জিনিসই আর অ্যানেরিকায় ঢুকতে পারবে না, যেখানে জোর করে করানো শ্রমের চিহ্নমাত্র নেই। কিন্তু বিদেশ দপ্তর বলেছে, তারা মার্কিন সংস্থা এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এজেন্সিকে জানাবে, কোন কোন জিনিসে জোর করে করানো শ্রম রয়েছে।
চীন অবশ্য দাবি করে, তারা উইগুরদের দিয়ে জোর করে কাজ করায় না। উইগুরদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যাতে করে তাঁরা সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।