চীনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, উইগুরদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলিমদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে চীন। জাতিসংঘ সম্প্রতি এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রায় এক বছর ধরে এই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনা হয়। রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর এবং অন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের পরেও সেই একই কাজ করা হচ্ছে।
তুরস্কে উইগুরদের বিক্ষোভ
02:27
This browser does not support the video element.
অত্যাচারের বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, অবাসযোগ্য জায়গায় এই মানুষদের কার্যত আটক করে রাখা হয়েছে। তাদের জোর করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকের কাছে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়নি। একই সঙ্গে অভিযোগ, অমানবিকভাবে তাদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও করা হয়েছে রিপোর্টে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছিল। শিনজিয়াংয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু চীন কখনোই তাদের অনুমতি দেয়নি। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্রুত উইগুর মুসলিমদের নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
শিনজিয়াং প্রদেশের আটটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার রয়েছে ওই রিপোর্টে। কীভাবে তারা সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন, তার বর্ণনাও আছে। তারা অভিযোগ করেছেন, বাইরে গিয়ে যাতে তারা তাদের সঙ্গে ঘটা অত্যাচারের কথা না বলেন, তার জন্য তাদের বন্ড পেপারে সই করিয়েছে চীনের প্রশাসন। চীন অবশ্য এবিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বস্তুত, উইগুরদের নিয়ে চীন কখনোই বিশেষ কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করেনি।
এদিনই জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট এই পদে চার বছর পূর্ণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি চীনের প্রতি নরম। এদিন রিপোর্টটি প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। চীন প্রথম থেকেই এই রিপোর্ট যাতে প্রকাশ করা না হয়, তার জন্য চাপসৃষ্টি করেছে। কিন্তু তিনি কখনোই হাল ছাড়েননি। এক বছর ধরে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন তিনি।