চীনে উইগুর মেয়েদের ধর্ষণ করার রিপোর্টে রীতিমতো উদ্বিগ্ন অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্য। একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে প্রথম চীনের শিবিরে উইগুর মেয়েদের ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
চীনে উইগুর মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে এর আগেও অনেকগুলি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উইগুরদের কার্যত বন্দি শিবিরে রাখা হয়, তাঁদের জোর করে তুলো চাষ করানো হয়, তাঁদের মানবাধিকার নেই। কিন্তু এই বার বিবিসি-তে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিনজিয়াং প্রদেশের শিবিরে উইগুর মেয়েদের নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচার করা হয়। একজন নারী বিবিসি-কে বলেছেন, প্রতি রাতে এক বা একাধিক চীনা পুরুষ তাঁকে ধর্ষণ করতেন। তিনি ওই শিবির থেকে পালিয়েছিলেন। এখন অ্যামেরিকায় আছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনবার তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, একজন কাজাখ নারী ওই শিবিরে ১৮ মাস ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে দিয়ে জোর করে উইগুর নারীদের বিবস্ত্র করানো হতো। তারপর হাতকড়া পরিয়ে চীনা পুরুষদের সঙ্গে রেখে দিতে হতো। তারপর তাঁকে ঘর থেকে চলে যেতে বলা হতো। শিবিরের এক সাবেক রক্ষীও এই অত্যাচার ও কম খাবার দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পরই অ্যামেরিকার সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''এই অত্যাচার বিবেককে নাড়িয়ে দেয়ার মতো। এর প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে বাধ্য।''
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস পার্লামেন্টে বলেছেন, ''রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এটা হলো শয়তানের কাজ।'' অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, এই শিবিরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের যেতে দিতে হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে বিবিসির রিপোর্টকে পুরোপুরি মিথ্যা বলা হয়েছে। মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, ''উইগুর শিবিরে ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের কোনো ঘটনা ঘটে না। মানবাধিকারের গাইডলাইন পুরোপুরি মেনে চলা হয়। তাঁদের সব ধরনের সুবিধা দেয়া হয়। চীন আইন মেনে চলা দেশ। এখানে সংবিধানে মানবাধিকারকে নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। চীনে আইনি-ব্যবস্থা আছে। সরকার তার ভিতরে থেকে কাজ করে।''