1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগান্ডায় এইডস রোগী বাড়ছে

২৮ জুন ২০১১

প্রায় ৩০ বছর আগে আমরা প্রথম মৃত্যুব্যাধি এইডসের কথা শুনেছিলাম৷ এর পর থেকে সারা বিশ্বে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ এই মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে৷

নবীন প্রজন্মের মধ্যে এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগছবি: Deutsche Stiftung Weltbevölkerung (DSW)

ইউএএইডস জানিয়েছে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার মানুষ এইডস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা আফ্রিকায়৷ তিরিশ বছর আগে অ্যামেরিকায় এইডস রোগটি প্রথম বার ধরা পড়ে৷ চিকিৎসকরা একটি ভাইরাসকে এইডস ভাইরাস বলে আখ্যায়িত করেন৷ তখন থেকেই মারণব্যাধি হিসেবে এইডসের সঙ্গে বিশ্ববাসী পরিচিত৷ সতর্ক করে দেয়া হয় প্রতিটি মহল থেকে, যে এই রোগ হলে বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই৷ এই সতর্কতাবাণী পরও এইডস রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের প্রায় ৩৪ মিলিয়ন এইচআইভি পজিটিভ রয়েছে৷ অথচ আক্রান্তরাই জানে না যে তারা এইডসের ভাইরাস সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে৷ জাতিসংঘের দপ্তর ইউএনএইডস জানিয়েছে, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় সাত হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে৷ উত্তর আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় এইডস প্রতিরোধে শুরু করেছিল সফল প্রচারাভিযান৷ রেডিওতে প্রচারাভিযান স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘‘সহবাসের সময় তোমরা সবসময় কনডোম ব্যবহার করো৷''

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ উগান্ডায় এইডস কর্মসূচির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেনছবি: dpa

নব্বই-এর শুরুতে এইডস প্রতিরোধে এই ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত রেডিওতে৷ বেতারের নাম রেডিও স্পট৷ কিন্তু শুধু একটি বাক্যেই থেমে থাকেনি প্রচারাভিযান৷ আরো বলেছে, ‘‘আর প্রতিবার সহবাসের সময় নতুন একটি কনডোম ব্যবহার করবে৷''

অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মাঠকর্মীরা

এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে যে প্রচারাভিযান উগান্ডা শুরু করেছিল তা ছিল অন্যান্য দেশের জন্য আদর্শ মডেল৷ উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি এইডসের বিস্তারকে ১৯৮৬ সালে থেকেই জাতির জন্য হুমকি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ আর আফ্রিকার অন্যান্য দেশ এইডস'কে মার্কিন সরকারের ‘আরেকটি গোপন অস্ত্র' বলে ব্যাখ্যা করেছিল৷ পার্শ্ববর্তী দেশ কেনিয়ায় সরকার এইডসের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে সবধরণের প্রচারাভিযান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল৷ শুধুমাত্র উগান্ডাই এইডস নিয়ে কাজ করছিল, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, সাধারণ মানুষদের বোঝাতে তারা গ্রামে গ্রামে পরামর্শদাতাদের পাঠাচ্ছিল৷ মাঠকর্মী উইনি মাকুম্বি জানালেন, ‘‘আমরা কলার সাহায্যে বোঝাচ্ছিলাম কীভাবে কনডোম পরতে হয়৷ গ্রামের মানুষদের এক জায়গায় জড়ো করে অথবা স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাচ্ছিলাম কলার সাহায্যে৷ একটি কলাকে কনডোম পরিয়ে আমরা বোঝাতে চেয়েছিলাম, বুঝিয়েছিলাম৷ তবে এত সহজে সবাই বুঝতে পারেনি৷ কনডোম নিয়ে অনেকেই বাড়িতে ফিরে গেছে৷ এবং কনডোমটি কলায় পরিয়ে রেখে স্ত্রী বা বান্ধবীকে নিয়ে বিছানায় চলে গেছে৷ আমাদের এরপর আরও স্পষ্ট করে বোঝাতে হয়েছে কীভাবে কনডোম পরতে হয়৷''

তবে এই বোঝানোয় শেষ পর্যন্ত কাজ হয়েছে৷ নব্বইয়ের শুরুতে নতুন করে এইডসে আক্রান্তদের সংখ্যা কমে যায় প্রায় ৭০ শতাংশ৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন সাহায্য প্রতিষ্ঠান ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ হয় উগান্ডাকে সাহায্য করতে৷ বিভিন্ন ধরণের প্রচারাভিযান চালানোর জন্য আর্থিক সাহায্য আসতে থাকে উগান্ডায়৷

উগান্ডায় এইডস’এর মোকাবিলা করতে ওষুধ বিতরন করা হচ্ছেছবি: AP

সারাক্ষণই কি কনডোম ব্যবহার করবো? - মুসেভেনি

তবে এই সাফল্যকে বড় কোন কৃতিত্ব দিতে অস্বীকার করেছিলেন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি৷ শুরু থেকে তিনি একটি কথাই বার বার বলে আসছিলেন তা হল, ‘‘নিজের স্ত্রীর প্রতি অনুগত থাকো, অসৎ উদ্দেশ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখো৷'' কনডোম ব্যবহার শুধু শুধু একটি বাড়তি ঝামেলা, তার আর প্রয়োজন হবে না৷ ২০০৪ সালে এইডস সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে তিনি আরো স্পষ্টভাবে কথাগুলো বলেন, ‘‘আমরা এমন কোন সমাজ বা পৃথিবী তৈরি করতে কখনোই পারবো না, যেখানে সবসময়ই কনডোম ব্যবহার করতে হবে৷''

এইডসের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে উগান্ডা মডেল দেশ হিসেবে যে প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিল তা নিমিষে ধুলোয় মিশেছে৷ উগান্ডায় এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ বেশ কিছু জেলে পাড়া বা গ্রামে দেখা গেছে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন এইডসে আক্রান্ত৷ চিকিৎসক ডেভিড কিহুমুরো এইডস কমিশনে কাজ করছেন৷ তিনি জানান এইডস প্রতিরোধে কোন প্রচারাভিযানই এখন আর চোখে পড়বে না৷ চিকিৎসক ডেভিড কিহুমুরোর আক্ষেপ, ‘‘এইডসের ফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে৷ আর সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই আমরা সব ধরণের ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি রোগীদের৷ পয়সা ঢালা হচ্ছে সেদিকেই৷ এইডস প্রতিরোধে কী করা উচিত, বা কী করা যেতে পারে, তা জানতে বা শিখতে কেউই আগ্রহী হয়৷ আর এ কারণেই এইডসে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে৷ এখান থেকে বেরিয়ে আসতে সত্যি আমাদের সমস্যা হবে৷''

কিন্তু রেডিও থেমে থাকেনি তার প্রচারাভিযান থেকে৷ এখনো বলে যাচ্ছে, ‘‘সহবাসের সময় কনডোম ব্যবহার সত্যিই ভীষণভাবে জরুরি৷''

অনেক পুরোনো একটি সতর্কতাবাণী – কিন্তু আজ তা সত্যিই জরুরি বলে মনে হচ্ছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ