উগান্ডার জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন৷ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিরোধী নেতা ববি ওয়াইন কারচুপির অভিযোগ এনে নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে মুসেভেনি ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন৷ অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ববি ওয়াইন পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ৷ নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, টানা ষষ্ঠবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইওয়েরি মুসেভেনি৷
মুসাভেনি জনগণের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে৷ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘কিভাবে বন্দুকের ব্যবহার করতে হয় সেটি আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানে না৷ আমাদের চেয়ে ভাল লড়াই করতে পারে এমন কেউও নেই৷’’
এদিকে ফলাফল ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ববি ওয়াইন৷ রয়টার্সকে দেয়া মন্তব্যে তিনি এই নির্বাচনকে উগান্ডার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতারণাপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন৷ দেশটি সামরিক বাহিনী তার বাড়ি ঘিরে রেখেছে এবং তাকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন ওয়াইন৷
এর আগে নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলে প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি এগিয়ে থাকলেও নিজের জয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ববি ওয়াইন৷
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই উগান্ডাজুড়ে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো৷ নভেম্বরে ববি ওয়াইনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের সঙ্গে তার সমর্থকদের দেশব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়৷ বৃহস্পতিবার নির্বাচনেও উগান্ডার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷
নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ৷ নির্বাচনের পর থেকেই রাজধানী কামপালাসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীও৷
আগেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিরোধী নেতা ববি ওয়াইন ‘বিজয় চুরি করা হয়েছে' এমন আভাস পাওয়া গেলে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন৷ অন্যদিকে নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তা ‘জনগণের সঙ্গে বেইমানি' করা হবে বলে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছেন প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি৷
১৯৮৬ সাল থেকে আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ক্ষমতায় আছেন সাবেক গেরিলা কমান্ডার ইওয়েরি মুসেভেনি৷ ২০১৯ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ অন্যদিকে পপ গায়ক ববি ওয়াইন ২০১৭ সালে প্রথম দেশটির এমপি নির্বাচিত হন৷ উগান্ডার তরুণদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় মুসেভেনিকে নানা সময়ে ‘স্বৈরশাসক' আখ্যা দিয়ে আসছেন ওয়াইন৷
এডিকে/এফএস (এএফপি, রয়টার্স)
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷