শালোম খাইয়িনজা ও লিলিয়ান অ্যামনজিনের অপেক্ষায় অনেকেই বসে থাকেন৷ তবে প্রতিবেশী বা আত্মীয় হিসেবে নয়, এই দুই তরুণী গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে বাসায় আসেন৷ এই দুই সোলার টেকনিশিয়ান কিছুকাল আগে সেখানে সোলার মডিইউল বসিয়েছেন৷ সম্ভবত অনিয়মিত বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে আলোর বাতি জ্বলছে-নিভছে৷ তাঁদের সেই সমস্যার উৎস সন্ধান করতে হবে৷ এই কাজ তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তুলছে৷ লিলিয়ান বলেন, ‘‘সিস্টেম বসানোর মতো কিছু কাজ করে সামান্য উপার্জন করেছি৷ আমরা পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়া সত্যি বন্ধ করতে পেরেছি৷ পরিবেশে আর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন হচ্ছে না৷ ফলে আমাদের সবার উপকার হয়েছে৷''

সুসান নাতুম্বওয়ে অন্যভাবে হলেও সৌরশক্তির কারণে উপকৃত হচ্ছেন৷ ১৫ বছর বয়সি এই স্কুলপড়ুয়ার পিঠের ব্যাকপ্যাকের মধ্যে এক মিনি সোলার প্যানেল বসানো আছে৷ সেটি দিয়ে একটি বাতি চার্জ করে সে রাতেও পড়াশোনা করতে পারে৷ সেই বাতি আবার তার বাবার মোবাইল ফোনও চার্জ করে৷ সুসান বলে, ‘‘এই সোলার ব্যাগের কল্যাণে আমি রাতেও বই পড়তে পারি৷ যেমনটা দেখছেন, আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই৷ এর ফলে আমার পড়াশোনারও উন্নতি হয়েছে৷ আমি পরীক্ষায় পাশ করবো৷''

সৌরশক্তি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার জন্য এই তিন তরুণী জামিলা মায়াঞ্জার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন৷ উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় তিনি সামাজিক উদ্যোগপতি হিসেবে সক্রিয়৷ তাঁর কর্মীরা পথের ধারে প্লাস্টিক ব্যাগের সন্ধান করলে তিনিও সেই কাজে হাত লাগান৷ কারণ সোলার ব্যাকপ্যাকও পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি৷ কাম্পালায় আবর্জনা এক বড় সমস্যা৷ স্মার্ট গার্লস ফাউন্ডেশন উগান্ডার প্রতিনিধি জামিলা মায়াঞ্জা বলেন, ‘‘এই প্লাস্টিক ব্যবহার ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি৷ পানির প্রণালীতে ফেলে দেওয়ার বদলে আবর্জনার পুনর্ব্যবহার যে সহজ, আমরা তা দেখাতে চাইছি৷''

পরিষ্কার করার পর প্লাস্টিক ব্যাগগুলিকে সোলার ব্যাকপ্যাকে রূপান্তরিত করা হয়৷ বাইরের অংশে আকর্ষণীয় পানি প্রতিরোধী উপাদান বসানো হয়৷

জামিলার ফাউন্ডেশন প্রায় ২০ জন নারীর কর্মসংস্থান করছে৷ তাঁরা প্রতিটি ব্যাকপ্যাকের জন্য প্রায় পাঁচ ডলার পারিশ্রমিক পান৷ কয়েকটি ব্যাকপ্যাক ২০ ডলারের বেশি মূল্যেও বিক্রি করা হয়৷ তবে শুধু দরিদ্র নারী ও মেয়েরা বিনামূল্যে সেটি পেতে পারেন৷ ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি ব্যাকপ্যাক বিক্রি বা দান করা হয়েছে৷

কিশোরীরা এমন ব্যাকপ্যাকের সাহায্যে অগোচরে স্যানিটারি প্যাডের মতো উপকরণও স্কুলে আনতে পারছে৷ সেটা সম্ভব না হলে তাদের মধ্যে অনেককেই পিরিয়েডের সময়ে পড়াশোনার ক্ষতি করে বাসায় থাকতে হতো৷ জামিলা মনে করেন, ‘‘মেনস্ট্রুয়েশন পিরিয়ডের সময়েও স্কুলে থাকা যে স্বাভাবিক, আমাদের সেটা দেখানো জরুরি ছিল৷ এই ব্যাগ সেই সুবিধা করে দিয়েছে৷ ফলে স্কুলে তারা আরো ভালো ফল করছে৷ তাই এই ব্যাগ মেয়েদের স্কুলে রেখে তাদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছে৷''

স্কুলের পর সুসানকে প্রায়ই বাসায় কিছু কাজ করতে হয়৷ অন্ধকার হলেই সে পড়াশোনার অনুমতি পায়৷ সৌরবাতি ছাড়া সেটা সম্ভবই হতো না৷ পরের দিন স্কুলে যাওয়ার পথে তার ব্যাকপ্যাকে বসানো সৌরবাতি আবার চার্জ হয়ে যায়৷

বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের শিক্ষকের মতে, সুসানের পড়াশোনার উন্নতি হয়েছে৷ সোলার ব্যাকপ্যাক যে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের ব্যবহারিক ও সহজ দৃষ্টান্ত, সে বিষয়ে তিনি সন্তুষ্ট৷

হিলারি আয়েসিংগা, ভল্ফ গেবহার্ট/এসবি