প্লাস্টিকের লাগামহীন ব্যবহার যে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ উগান্ডায় কেনাকাটার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব কাগজের থলে ব্যবহারের উদ্যোগ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
উগান্ডায় প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যাপক ব্যবহার হয়৷ তবে রাজধানী কাম্পালার একটি রেস্তোরাঁ একটি ব্যতিক্রম৷ স্থানীয় ভাষায় ‘কাভিরা’ নামের এই প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে এই রেস্তোরাঁয় কাগজের থলে ব্যবহার করা হয়৷ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ফিলিপ ডিসুজা বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব এবং আমরা কাভিরা ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি করতে চাই না৷ তাই এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের সন্তানসন্ততিদের জন্যও অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য৷’’
চলতি বছর উগান্ডায় কেনাকাটার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করার কথা চলছে৷ তার বদলে বায়োডিগ্রেডেবেল কাগজের থলে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ এমন প্রবণতার ফলে স্থানীয় নারীদের এক গোষ্ঠী কাগজের থলি বানানোর কাজে আরও উৎসাহ পাচ্ছে৷ স্থানীয় কলাগাছের তন্তু দিয়েই সেগুলি তৈরি হচ্ছে৷
উগান্ডায় প্লাস্টিকের জায়গা নিচ্ছে কাগজের থলে
02:46
উগান্ডার অনেক খামারে কলার তন্তুকে বর্জ্য হিসেবে গণ্য করা হয়৷ কিন্তু এই গোষ্ঠী তা দিয়ে কাগজ তৈরি করছে৷ পেপার ক্রাফট আফ্রিকা লিমিটেড কোম্পানির হ্যারিয়েট নানটালে বলেন, ‘‘আমরা কাঁচি দিয়ে এগুলি কাটি৷ তারপর পানিতে ফোটাই৷ তারপর প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে মিশ্রণ তৈরি করা হয়৷ আমরা তা মণ্ডে পরিণত করি, বিশাল আধারে পানির সঙ্গে তা ঢেলে দেই৷ পাতলা স্ক্রিন বা ছাঁকনিতে সেগুলি তুলে নিয়ে পানি ঝরিয়ে ফেলি৷ ফলে তন্তু উপরে থেকে যায়৷ তারপর ব়্যাকে ঝুলিয়ে সেগুলি শুকানো হয়৷’’
কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা রোদে শুকানোর পর সেটি শক্ত কাগজে পরিণত হয়৷ নারীরা সাবধানে সেই কাগজ কাজে লাগিয়ে একাধিক পণ্য তৈরি করেন৷ সাধারণ কাগজ থেকে শুরু করে কেনাকাটার থলে, বই ও গ্রিটিং কার্ড ইত্যাদি তৈরি হয়৷ হ্যারিয়েট নানটালে জানান, ‘‘গত বছর আমরা ক্যানাডায় রপ্তানির জন্য প্রায় ৫,০০০ কার্ড তৈরি করেছিলাম৷ তারপর অ্যামেরিকার জন্য প্রায় ২,০০০ কার্ড৷ নানা রকম মানুষ এখানে এসে এই পণ্য দেখে কিছু অর্ডার দেন৷ আমরা উৎপাদন করে তা পাঠিয়ে দেই৷’’
কাম্পালায় তাঁদের প্রধান খদ্দের হলো ক্রাফটের দোকান. রেস্তোরাঁ ও সুপারমার্কেট৷ প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হলে তাঁদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে এই নারীদের আশা৷
জুলিয়াস মুগাম্বওয়া/এসবি
গতবছরের ছবিঘরটি দেখুুন...
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য কেন ব্যবহার করবেন?
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য – এই শিরোনামে জার্মানির কোলনে হয়ে গেলো একটি কর্মশালা৷ বাংলাদেশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব পাটের পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতে এই আয়োজন করে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা বাসুগ৷
ছবি: DW/N. Sattar
উদ্যোক্তা বাসুগ (বিএএসইউজি)
জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে পরিবেশের ইউরোপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাসুগ (বিএএসইউজি) ও জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের একটি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গত ২৩ জুন কোলনে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়৷ এতে অংশ নেন জার্মান ও অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল নাগরিকদের উচিত সরকারকে সহায়তা করা৷পাটের ব্যবহার পরিবেশ রক্ষায় রাতারাতি কোনো সমাধান না-ও আনতে পারে৷ তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সহায়তা করবে৷ শুধুমাত্র নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ আশা করতে পারি৷ এখন থেকে পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন এবং পরিবেশ পরিবর্তনের অংশ হোন৷’’
ছবি: DW/N. Sattar
প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক
নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের সংসদ সদস্য বেরিভান আয়মাজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ধ্বংস করছে৷ প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক৷ তাছাড়া সমস্যাটি এখন রাজনীতিতে এসেছে৷ আমরা আশা করছি, এ দেশের জনগণকে প্লাস্টিক বর্জ্যের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে বাসুগের মাধ্যমে পরিচালিত প্রচারাভিযান সফল হবে৷’’
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
বিশেষ অতিথি হিসেবে কোলনের মেয়র ড.রাল্ফ হাইনেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাথে জার্মানির ব্যবসায়িক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন,‘‘ জার্মানির অনেক পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে পোশাক৷ আমাদের বিশ্বাস, জার্মানির সাথে ফেয়ার ট্রেড বাংলাদেশে ইতিবাচক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করতে পারে৷’’
ছবি: DW/S. Burman
প্লাস্টিক, নাকি পাটের ব্যবহার?
কর্মশালায় জার্মানির সাধারণ জনগণের প্লাস্টিক ব্যবহার এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর৷ কারণ, ব্যবহৃত প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত নদী, সাগর ও কৃষি জমিতে স্থান পায় এবং সেসব গলতে বা টুকরো হতে বহু বছর সময় লেগে যায়৷ এর ফলে মাটি ও পানির দূষণ অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: picture alliance/PIXSELL/G. Jelavic
সোনালি আঁশের তৈরি ব্যাগ কেন ব্যবহার করবেন?
ব্যাগ এবং প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হতে পারে পাটের মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য দিয়ে৷ পাট যেমন স্বাস্থ্যকর সবজি, তেমনি পাট থেকে তৈরি হয় মজবুত সুতা৷ তাছাড়া পাট প্রাকৃতিক আঁশ এবং দামেও সস্তা৷ ব্যবহারের দিক থেকে তূলার পরেই পাটের স্থান৷ তাছাড়া পাট মজবুত ও টেকসই হলেও তা রিসাইকেল করাও সম্ভব৷
ছবি: DW/N. Sattar
চটের ব্যাগ
পাটের তৈরি ব্যাগ দেখতে সুন্দর, আধুনিক ও মজবুত ৷ এই ব্যাগ ব্যবহারে যেমন পকেটের পয়সা বাঁচবে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষা হবে৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি নানা পণ্য
কর্মশালায় ছিল বাংলাদেশের পাটের তৈরি আকর্ষণীয় নানা পণ্যের সমাহার৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রামাণ্যচিত্র
কর্মশালায় দেখানো হয় বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাট বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাসুগ
কর্মশালায় অংশ নেন অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷‘প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য’ শিরোনামে কর্মশালাটির আয়োজনে ছিলেন বাসুগ সংস্থার সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী এএইচএম আবদুল হাই৷