1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগ্রপন্থিদের মোকাবিলায় গণতন্ত্রকে হতে হবে ‘আপোশহীন'

গ্রেহেম লুকাস/এসিবি৩০ অক্টোবর ২০১৪

জার্মানির মানুষের মধ্যেও সিরিয়া ও ইরাকের গৃহযুদ্ধের প্রভাব পড়েছে৷ ফলে গত কিছুদিনে জার্মানির রাস্তায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ এ কারণে খেপে উঠেছে উগ্র ডানপন্থিরাও৷ এ নিয়েই গ্রেহেম লুকাসের সংবাদভাষ্য৷

Islam Leben Alltag
ছবি: Amr Nabil/AP/dapd

সিরিয়া ও ইরাকের সংঘাত কুর্দি ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) সমর্থকদের সংঘর্ষের মাধ্যমে জার্মানিতেও ঢুকে পড়েছে৷ এতে বোঝা যায়, কিছু শরণার্থী, অভিবাসীদের একটি অংশ এবং উগ্র ইসলামপন্থিরা বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ এ দেশে আমদানি করছে৷ জার্মানিতে বেড়ে ওঠা অভিবাসী বংশোদ্ভূত কিছু ছেলে-মেয়ে, আজকাল মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মানুষের ধ্যাণধারণাকে গ্রহণ করছে, যাদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল৷

মনে হচ্ছে, এখানেও রাস্তায় মানুষের মৃত্যু দেখা এখন সময়ের ব্যাপার৷ আরেকটি বড় বিষয়, সিরিয়া ও ইরাক থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর অস্ত্র নিয়ে কিছু মানুষ জার্মানিতে ফিরছে, যার ফলে ভবিষ্যতে তারা সাধারণ জার্মানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে – এমন আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে৷

জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও বেলজিয়ামের মতো উদার গণতন্ত্রী দেশ, যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের আসতে দিয়েছে, তাদের জন্য এটা সতর্ক হবার সময়৷ জার্মানির সামনে খুব সহজ একটা প্রশ্ন – গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ জনমতের ওপর গড়ে ওঠা জার্মান সমাজ কি জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যে ধকল পড়ছে, তা সহ্য করতে পারবে?

উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে৷ কয়েক দিন আগেই জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জানান, দেশে এখন ছয় হাজারের মতো উগ্র সালাফিস্ট আছে৷ তাদের মধ্যে কয়েক'শ লোক আবার তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর হয়ে যু্দ্ধ করতে সিরিয়ায় গিয়েছে৷ তিনি এ কথাও বলেছেন যে, জার্মানিতে উগ্র ইসলামপন্থিদের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশিও হতে পারে৷

জার্মানি থেকে কয়েক'শ লোক যু্দ্ধ করতে সিরিয়ায় গিয়েছেছবি: picture-alliance/dpa

গত সপ্তাহান্তে সালাফিস্টদের বিরুদ্ধে কোলন শহরে উগ্র ডানপন্থি নব্য নাৎসিরাও সমাবেশ করেছে৷ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে৷ উগ্র ডানপন্থিরা এতে যে জার্মানির সংবিধান স্বীকৃত বহুজাতিক সমাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার একটা মওকা পেয়ে গেল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা ইসলামি উগ্রপন্থিদের এটাও বোঝাতে চেয়েছে যে, জার্মান সমাজ অত সহনশীল নয়৷

জার্মানির প্রথম গণতন্ত্র ‘দ্য ভাইমার রিপাবলিক' ধ্বংস করা হয়েছিল ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে৷ একদিকে নাৎসি, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক – দু'পক্ষ মিলেই তা করেছিল৷ দু'পক্ষই গণতন্ত্রকে নাকচ করে সর্বাত্মক সমাধানের উপায় খুঁজেছিল৷ এ কারণেই যু্দ্ধ পরবর্তী সময়ে সাংবিধানিক আদালত ‘মিলিটান্ট ডেমোক্র্যাসি' বা ‘আপোশহীন গণতন্ত্র'-এর কথা বলে, যা নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম৷ এখন গণতন্ত্রের জন্য যে হুমকি দেখা যাচ্ছে তা অবশ্য ১৯২০-এর দশকের সঙ্গে তুলনীয় নয়৷এখন দু'তরফ থেকেই যে হুমকি আসছে – এ সত্য অগ্রাহ্য করার মতো নয়৷

কিন্তু এ দেশ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো কীভাবে? জার্মানি শুরুতে অনেক বছর অভিবাসীরা পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীভূত হোক, গণতান্ত্রিক মূ্ল্যবোধকে গ্রহণ করুক – তা সেভাবে চায়নি৷ মৌলবিরা যে ঘৃণা ছড়ান আর তা থেকে যে বিপদের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে – এ বিষয়টির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখা রাজনীতিবিদদের জন্যও ছিল সুবিধাজনক৷ বিষয়টিকে স্রেফ সাংস্কৃতিক তারতম্য-প্রসূত বিষয় হিসেবে দেখলেই তখন চলেছে৷ আর এ কারণে কেউ ধারণাও করতে পারেনি যে, যুক্তরাষ্ট্রে চালানো ৯/১১-র হামলায় এমন কেউ অংশ নিতে পারে যে, হামবুর্গে থেকেছে এবং সেখানে লেখাপড়াও করেছে৷ কেউ ঘৃণা ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা করার মতো নোংরা দর্শণকে জার্মানিতে বসবাস করেই ঝালিয়ে নিতে পারে – এটাও কেউ ভাবতে পারেনি৷ অবশ্য এমনও হতে পারে যে, কিছু বললেই তাঁকে অসহিষ্ণু, বর্ণবাদী বা নাৎসি বলা হবে – এই ভয়েই তখন এমন দর্শনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেনি৷ সম্প্রতি জার্মানির এক শহরে সালাফিস্টরা শরিয়া পুলিশের পোশাক পরে ব়্যালি করার পরই সবার টনক নড়ে৷ ধর্মনিরপেক্ষতার দেশ জার্মানিতে সমান্তরাল কোনো আইন তো চলতে পারে না৷

গ্রেহেম লুকাস, ডিডাব্লিউ-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধানছবি: DW/P. Henriksen

উগ্র ডানপন্থিদের হুমকি এবং তাদের অন্তরের বর্ণবাদী চেতনাকেও অনেককাল ছোট করে দেখা হয়েছে৷ তাই গত কয়েক দশকে অনেক অভিবাসী হত্যার পেছনে যে ‘ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড' নামের একটি সন্ত্রাসী সংগঠন জড়িত থাকতে পারে, জার্মানির নিরাপত্তা বাহিনী তা ধারণাই করতে পারেনি৷

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গত সপ্তাহান্তে কোলনের সমাবেশটির পর রক্ষণশীলরা আইন আরো কঠোর করার দাবি তুলেছে৷ তা করা হলে এ সমাজে যে কোনো বিশ্বাস গ্রহণ করা বা না করার স্বাধীনতা উপভোগ করছে এমন কিছু নিরীহ মানুষের হয়ত সমস্যা হবে৷

তবে রাজনীতিবিদদের আরেকটি অংশ বলছেন, আইন বদলানোর কোনো প্রয়োজন নেই৷ তাঁরা ঠিকই বলছেন৷ তবে নিরাপত্তা বাহিনীকে উগ্র দুটি সংগঠনের বিরুদ্ধে বর্তমান আইনে স্বীকৃত পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে৷ হিটলারের আদর্শ অনুসরণ বা বিদেশ থেকে উগ্র ইসলামি চেতনা আমদানি করা কোনো সমস্যা নয় – এমন ভান করাটা বন্ধ করতে হবে৷ জার্মানির সহনশীল সমাজকে এ সব প্রতিহত করতে হবে৷ একেই বলে ‘মিলিটান্ট ডেমোক্র্যাসি' বা ‘আপোশহীন গণতন্ত্র'৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ