একের পর এক ব্লগার ও মুক্ত চর্চার মানুষদের হত্যার জন্য দায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে সরকার চুপ৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, শনাক্তই করতে পারছে না৷ উল্টে ব্লগারদেরই দাঁড় করানো হচ্ছে কাঠগড়ায়৷
বিজ্ঞাপন
কেন তাঁরা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লিখছেন? প্রশ্ন করা হচ্ছে ব্লগারদের৷ বলা হচ্ছে, ‘আবার এ সব লিখলে গ্রেপ্তার করা হবে তাঁদের৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে সাজাও ভোগ করতে হবে৷' – এ সব কথা ব্লগারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা৷ অথচ মানুষ হত্যার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড – এমন কথা কিন্তু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে একবারও মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ ফলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলো প্রশ্রয় পাচ্ছে, অভিযোগ গণজাগরণ মঞ্চের৷
সর্বশেষ গত শুক্রবার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল হত্যার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা মুক্তমনে লেখেন, তাঁদের কাছে এবং আপনারা যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি৷ এমন কিছু লেখা উচিত নয় যেখানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত আনে৷'' এরপর গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ব্লগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে লেখালেখি করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
আবারও ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটল বাংলাদেশে৷ এবার বাড়িতে ঢুকে জবাই করা হলো ব্লগার নীলয় নীলকে৷ বরাবরের মতো হত্যাকাণ্ডের পরই পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও, নিহতের পরিবার এ আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
ঘরে ঢুকে জবাই
গত ৭ আগস্ট ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকার বাসায় ঢুকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ওরফে নিলয় নীলকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে৷ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিলয়ের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর৷ ভাড়া নেয়ার জন্য বাসা দেখতে চেয়ে ঢুকে পড়া চার দুর্বৃত্ত প্রথমে নিলয়ের স্ত্রী ও তাঁর ছোট বোনকে বারান্দায় বের করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তারপর জবাই করে নিলয়কে৷
ছবি: Twitter
পুলিশকে পাশে পাননি নিলয়
কিছুদিন ধরেই তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কা করছিলেন নিলয়৷ তিন মাস আগে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, অচেনা কয়েকজন লোক তাঁকে অনুসরণ করছে৷ বিষয়টি জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় গিয়েছিলেন৷ পুলিশ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে তাঁকে বরং দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেয়৷ তাঁকে অনুসরণ করা এবং পুলিশের দেশ ছাড়ার পরামর্শের কথা ফেসবুকে নিলয় নিজেই লিখেছিলেন নিলয়৷
ছবি: Twitter
নিন্দার ঝড়, গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
নিলয় নীল নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে৷ নিলয়ের স্ত্রী আশামনি (ওপরের ছবিতে, বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
প্রতিবাদ
নিলয় হত্যার পর রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ নিলয়সহ সব ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করার পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘এতদিন ব্লগারদের রাস্তায় হত্যা করা হতো, এখন বাসায় ঢুকে জবাই করা শুরু হলো৷ এই সরকার ব্লগার হত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার জন্যই হত্যাকাণ্ড চলছে
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ৩০শে মার্চ তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে৷ মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশ ছাড়া লেখিকা তসলিমা নাসরীন ধারবাহিকভাবে ব্লগার হত্যার জন্য শেখ হাসিনার সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
আল-কায়েদার দায়িত্ব স্বীকার
শুক্রবারই নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা৷ আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল-ইসলামের নামে সংবাদমাধ্যমে ই-মেল পাঠিয়ে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি এ হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে৷
ছবি: Fotolia/Oleg Zabielin
‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেবো না’
এদিকে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মরক্ষার কথা বলে মানুষ হত্যাকে ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এটা চলতে দেওয়া যাবে না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম৷ যারা ধর্মকেও কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা কখনোই ধর্মে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না৷ তারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে কীভাবে ঘোষণা দেবে?’’
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘সীমা লঙ্ঘন করবেন না’
পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে ব্লগারদের প্রতি সীমা লঙ্ঘন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া উচিত নয়৷ কেউ তা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’ ব্লগার হত্যাকারীদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জামায়াতের ‘ভুল’
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন নিলয় নীল৷ বিচারাধীন, সাজাপ্রাপ্ত এবং অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা৷ নিলয় নিহত হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত৷ তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের পাঠানো বিবৃতিতে নিলয় নীল নামে পরিচিতি নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয় নীলয় হোসেন ওরফে নীল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
9 ছবি1 | 9
সরকারের কর্তা-ব্যক্তিদের এ সব বক্তব্যের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ বাহিনীর প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা অত্যন্ত আপত্তিজনক৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীও তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন৷ তাঁদের বক্তব্য পরোক্ষভাবে হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করছে৷ হত্যাকারীরা ধর্মকে সামনে এনে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷ আর রাষ্ট্র নানাভাবে হত্যাকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে৷''
খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে এই খুনিদের খুঁজে বের করতে না পারলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে৷ এমন চলতে থাকলে আমাদের অন্ধকার শাসনের দিকে যেতে হবে৷''
ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘সরকার উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ভয় পায়৷ এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই তাদের সমীহ করে কথা বলেন৷ এবার উল্টে ব্লগারদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে, বিভিন্ন শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ একটা গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতার পক্ষের সরকারের কাছে আমরা এই ধরনের অবস্থান আশা করতে পারি না৷ এ সব কারণেই খুনিরা উৎসাহিত হচ্ছে৷'' শুধু তাই নয়, মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করার মাধ্যমে সমাজে ভীতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
হত্যার হুমকি পাওয়া এক ব্লগার
তাঁর বাবা হুমায়ুন আজাদের ওপরও হামলা হয়েছিল৷ বাবা তাঁর ছেলে অনন্যকে বলেছিলেন, ‘এরপর তুমি...’৷ হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই ব্লগার অনন্য আজাদকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷ তাঁকে নিয়েই আজকের ছবিঘর...
ছবি: DW/Gönna Ketels
লিখে যেতে চান অনন্য
ঢাকায় জন্ম৷ ঢাকা শহরকে তাই খুব ভালোবাসেন অনন্য আজাদ৷ এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি, তবে হত্যার হুমকি দেয়ার পর থেকে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ তারপরও লেখলেখি থামাননি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তা মুক্ত, মতামত নয়
২৪ বছর বয়সি ব্লগার অনন্য নিজেকে ‘মুক্তচিন্তক’ মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, ধর্ম বা যে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা বা না করার অধিকার সবারই থাকা উচিত৷ এই ভাবনা নিয়েই লেখালেখি করেন৷ এ কারণে ইসলামি জঙ্গিরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
আত্মরক্ষার চেষ্টা
২০১৩ সালে ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ পরের ৩ বছরে মোট ৯ জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ হালে দিনের আলোয়, জনাকীর্ণ স্থানে ব্লগার হত্যার ঘটনার পর তাঁকেও হত্যার হুমকি দেয়ায় অনন্য সাবধানে চলাফেরা শুরু করেন৷ ঢাকায় তো হেলমেট না পরে বেরই হতেন না তিনি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তার জগতে এক
ইসলামি জঙ্গি এবং তাদের ভাবধারায় বিশ্বাসীরা ব্লগারদের ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের খুব কম ব্লগারই ধর্মের সমালোচনা করে লেখালেখি করেন৷ সরকার শুধু ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থই নয়, উল্টো ব্লগারদের ওপরই বিধিনিষেধ আরোপ করতে সচেষ্ট৷ অনেক ক্ষেত্রে ব্লগারদেই বরং বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
ঐতিহাসিক বিরোধ
একাত্তরে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, তাদের অনেক কর্মী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে অংশ নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগাররা আন্দোলন শুরু করে৷ শাহবাগে সমবেত হয় লাখো মানুষ৷ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
এরপর তুমি...
বাবা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং লেখক৷ তাঁর ওপরও হামলা হয়েছিল৷ হুমায়ুন আজাদ তার কিছুদিন পরই মারা যান৷ একদিন হুমায়ুন অনন্যকে বলেছিলেন, ‘‘এরপর তুমি...৷’’ হুমায়ুন তাঁর লেখায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেন৷ তাই হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়৷ অনন্যকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
‘গৃহবন্দিত্ব’ থেকে মুক্তি
হত্যার হুমকির পরও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন অনন্য৷ লিখছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান ধরে রেখে৷ কয়েকদিন হলো বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন অনন্য আজাদ৷ প্রিয় শহর ঢাকায় নিজের বাড়িতেই প্রায় বন্দি থাকার যন্ত্রণা থেকে আপাতত মুক্তি!
ছবি: DW/Gönna Ketels
7 ছবি1 | 7
নীলাদ্রি হত্যার প্রতিবাদে যখন সারা দেশের মানুষ সোচ্চার, তখন নতুন করে সরকারের মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ব্লগারসহ ১৯ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ ‘ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন' নামের এক কথিত সংগঠনের নামে সংবাদপত্র কার্যালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়, যেটা আসে গত বুধবার৷ ২০ জনের নামের ঐ তালিকায় প্রথমে থাকা নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নামটি লাল কালি দিয়ে কাটা৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে ব্লগার আরিফ জেবতিক, সুশান্ত দাশ গুপ্ত, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আব্দুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মকবুল হোসেন ও সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম দেয়া হয়েছে৷ তালিকায় এরপর রয়েছে ব্লগার আরিফুর রহমান, অমি রহমান পিয়াল, হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সি, মারুফ রসুল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আরাফাত রহমান, ব্লগার নির্ঝর মজুমদার, ড. আতিক, আশফাক আনুপ ও নূর নবী দুলালের নাম৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে৷ ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো ‘স্লিপার সেল' তৈরি করে এ সব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করছে৷ এই সেলের সদস্যরা একজন অপরজনকে চেনে না৷ তারা শুধু জানে ব্লগাররা নাস্তিক৷ তাই তাঁদের হত্যা করলে বেহেস্তে যাওয়া যাবে৷ এতে ধর্মীয়ভাবে তাদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি হয়৷'' এ সব কারণে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে একটু সময় লাগছে৷ তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বইমেলা থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: DW
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
ছবি: DW
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
ছবি: DW
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
নিলয় হত্যার পর আনসার আল-ইসলাম নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কার্যালয়ে ই-মেল পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হয়েছিল৷ সেখানে আনসার আল-ইসলামকে আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা বলা হয়েছিল৷ এরপর সোমবার রাতে বরিশাল গণজাগরণ মঞ্চের ছয়জন কর্মীর ছবি দিয়ে ‘আনসার বিডি' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ ‘ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন'-এর নামে নতুন যে তালিকা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অনেকেই এর আগেও হুমকি পেয়েছেন৷
বরিশালে যাঁদের হুমকি দেয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন কবি হেনরি স্বপন, তুহিন দাস, সৈয়দ মেহেদী হাসান, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও সাংবাদিক নজরুল বিশ্বাস, প্রীতম চৌধুরী এবং কারু তুহিন৷ এঁরা সকলেই বরিশালের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী৷ হুমকি পাওয়ার পর তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ গত মঙ্গলবার বিকেলে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন কবি হেনরি স্বপন৷
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে৷ পাশাপাশি হুমকিপ্রাপ্তদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতেও কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ৷'’